ঢামেকে সবার মন জয় করা ট্রান্সজেন্ডার স্বেচ্ছাসেবী

ঢামেক
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। স্টার ফাইল ফটো

“আমি একজন স্বেচ্ছাসেবক। আপনাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি?”- লেখা একটি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) কোভিড-১৯ চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রবেশ পথের সামনে অপেক্ষা করছিলেন সাগরিকা। একটি অ্যাম্বুলেন্স আসার সাথে সাথেই তিনি সেদিকে দৌড়ে যান এবং রোগীকে নামাতে সাহায্য করেন।

রোগী অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামার পর তিনি তাকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে কোভিড-১৯ কেন্দ্রে নিয়ে গেলেন। এ সময় তিনি রোগীর পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজনীয় নির্দেশাবলী জানিয়ে দিতে থাকেন।

সাগরিকা ঢামেকের রোগীদের সহায়তা দেয়ার জন্য গঠিত ১৫ সদস্যের স্বেচ্ছাসেবক দলের অন্যতম। সাগরিকাসহ দলটির দশ জন সদস্য ট্রান্সজেন্ডার।

চলমান লকডাউনের প্রথম দিন গত ১৪ এপ্রিল থেকেই কমলা রঙের জ্যাকেট পরিহিত এই স্বেচ্ছাসেবকরা হাসপাতালের পরিচিত মুখে পরিণত হয়েছেন।

এই দলটি “বৃহন্নলা” নামের একটি প্ল্যাটফর্মের পক্ষে কাজ করছেন, যারা বাংলাদেশে ট্রান্সজেন্ডার সদস্যদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য কাজ করছে।

সাগরিকা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি এখানে এ ধরনের অবদান রাখতে পেরে খুবই গর্ব বোধ করি। স্বীকার করতে বাধা নেই, মানুষের কাছে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে বেশ কিছুটা সময় লেগেছে, কিন্তু ধীরে ধীরে আমাদের প্রতি তাদের মনোভাব পরিবর্তিত হয়েছে’।

তাদের কাজের মধ্যে রোগীদের অ্যাম্বুলেন্সে ওঠানো ও সেখান থেকে তাদেরকে নামানো, রোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের স্যানিটাইজ করা, তাদের সাথে থাকা জিনিসপত্র জীবাণুমুক্ত করা, হাসপাতালের বিভিন্ন অংশে যাতায়াত করা সংক্রান্ত নির্দেশ দেয়া, প্রশাসনিক সহায়তা দেয়া, ওষুধ কেনায় সহায়তা করা এবং আরও বিভিন্ন ধরনের কাজ রয়েছে।

এছাড়াও, তারা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া রোগীদের, বিশেষ করে সন্তানসম্ভবা নারী, শিশু ও বয়োবৃদ্ধ রোগী ও কোভিড থেকে সেরে ওঠা রোগীদের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মাধ্যমে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দিচ্ছেন।

এই সেবাটি তারা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দিচ্ছেন।

প্রতিদিন এরকম ২০ জন রোগীর যাতায়াতের ব্যবস্থা করছেন। এ সেবাটি মূলত তাদের জন্য, যারা বাসায় পৌঁছানোর জন্য উপযুক্ত যানবাহনের ব্যবস্থা করতে, কিংবা সেটির খরচ বহন করতে পারেন না।

সাগরিকা সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেছেন। তিনি ২০১৮ সালে “বৃহন্নলা”য় যোগদান করেন, যখন সংগঠনটি মাত্র তার যাত্রা শুরু করেছে। তিনি বলেন, এ সংগঠনে যোগ দেয়ার পর তার জীবন পুরোপুরি পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে।

‘মানুষ প্রায়ই আমাদের কাছে এসে আমাদের কাজের প্রশংসা করে। ব্যাপারটি খুবই উদ্দীপনাময়’, বলেন তিনি।

এ প্রশংসাগুলো আসে রোগীদের কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে। পুরান ঢাকার মনির হোসেন এবং তার পুরো পরিবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। বেসরকারি চাকরিজীবী হোসেন এ সংবাদপত্রকে জানান, যে সাত দিন তারা ঢামেকের কোভিড চিকিৎসা কেন্দ্রে ছিলেন, তার পুরোটা সময় জুড়ে তাকে এবং তার পরিবারকে বৃহন্নলার স্বেচ্ছাসেবকরা অনেক সাহায্য করেছেন।

‘আমাদের যা প্রয়োজন হতো, তা কেনার ব্যাপারে তারা আমাদেরকে সাহায্য করতেন। আমরা যখনই তাদের ডাকতাম, তখনই তারা সাড়া দিতেন। কখনো জরুরি ওষুধ, আবার কখনো তা এক বোতল পানি বা খাবারের প্রয়োজনে’, বলেন তিনি।

‘যেহেতু আমার পরিবারের সবাই আক্রান্ত হয়েছিল, আমরা আমাদের আত্মীয় স্বজন বা কাছের বন্ধুদের কাছ থেকে তেমন কোনো সহায়তা পাইনি। কিন্তু স্বেচ্ছাসেবকরা পুরো সপ্তাহ জুড়ে আমাদের পাশেই ছিল’, কৃতজ্ঞ কণ্ঠে জানান তিনি।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেও স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য প্রশংসা ঝরে পড়েছে। ঢামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, ‘বৃহন্নলার স্বেচ্ছাসেবকরা আমাদের জন্য বড় সম্পদে রূপান্তরিত হয়েছেন, বিশেষ করে সাপোর্ট কর্মীদের স্বল্পতার মধ্যে’।

‘যেসব রোগী ঢাকার বাইরে থেকে আসছেন এবং আমাদের হাসপাতালে এর আগে কখনও আসেননি, তারা স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে বিশেষভাবে উপকৃত হচ্ছেন’, বলেন তিনি।

স্বাভাবিকভাবেই, এত কাজের সাথে জড়িয়ে রয়েছে বড় ধরনের ঝুঁকি। তবে স্বেচ্ছাসেবকরা প্রাণপণ চেষ্টা করেন সেটিকে যতদূর সম্ভব কমিয়ে রাখতে। স্বেচ্ছাসেবক মুনমুন বলেন, ‘যেহেতু আমরা কোভিড রোগীদের জন্য কাজ করি, আমাদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হয় ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হয়’।

প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Trump says not yet made decision on whether to attack Iran

Israel army says struck Iran centrifuge production, weapons manufacturing sites

1d ago