সুবীর নন্দীর দ্বিতীয় প্রয়াণ দিবস

subir-nandi
সুবীর নন্দী (১৯৫৩ – ২০১৯)। ছবি: সংগৃহীত

একুশে পদকপ্রাপ্ত কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দী। বাংলা গানের এই কিংবদন্তির দ্বিতীয় প্রয়াণ দিবস আজ।

২০১৯ সালের ৭ মে মৃত্যুবরণ করেন বরেণ্য এই কণ্ঠশিল্পী।

সুবীর নন্দীর স্মৃতিচারণ করে সুরকার, সংগীত পরিচালক মকসুদ জামিল মিন্টু দ্য ডেইলি স্টার’কে বলেন, ‘সুবীর দা’র গাওয়া “একটা ছিল সোনার কন্যা”র জন্য ১৯৯৯ সালে আমি ও সুবীর দা দুজনেই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলাম। হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত “শ্রাবণ মেঘের দিন” সিনেমায় এই গানটি গাওয়া হয়েছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু, হুমায়ূন স্যার এই গানটা সিনেমার কথা ভেবে লিখেননি। একদিন আমাকে গানের কথাটা দিয়ে সুর করতে বললেন। মাঝে কয়েকদিন কেটে গেছে। গানটি সুর করার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। সম্ভবত এটা ১৯৯৮ সালের ঘটনা।’

‘একদিন শান্তিনগরের সাসটেইন রেকর্ডিং স্টুডিও থেকে ফোন এলো, “হুমায়ূন স্যার এসেছেন, আপনি কোথায়?” আমি জানতে চাইলাম, “তিনি কেন এসেছেন?” আসলে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম এই গানটির কথা।’

‘সেদিন গানটি রেকর্ড করার জন্য স্টুডিও বুকিং দেওয়া ছিল। এ দিকে গানটির সুর করা হয়নি। কী করি, কী করি ভাবছিলাম। পকেটে রাখা গানটি খুঁজে পেলাম। স্টুডিওতে এসে দেখি গানটির কণ্ঠশিল্পী সুবীর দা (সুবীর নন্দী) বসে আছেন। আমার খুব মন খারাপ হচ্ছিল গানটির কথা ভুলে যাওয়ার কারণে।’

‘পরে স্টুডিওতে বসেই এক লাইন করে সুর করি আর সুবীর সুবীর দা গানটিতে কণ্ঠ দেন। এভাবেই গানটার রেকর্ডিং হয়েছিল। পরে গানটা “শ্রাবণ মেঘের দিন” সিনেমায় ব্যবহার করা হয়েছিল।’

‘এ কথা ডেইলি স্টারকে আগেও বলেছি’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘সুবীর দা আমাকে বলেছিলেন, আমারে জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় দিলা, মিন্টু। কথাটা বলার কারণ ১৯৯৬ সালের দিকে গুরুতর অসুস্থ হয়েছিলেন তিনি। ভেবেছিলেন আর কখনো গান গাইতে পারবেন না। শ্রাবণ মেঘের দিন  সিনেমার “একটা ছিল সোনার কন্যা” ও চন্দ্রকথা সিনেমার “ও আমার উড়াল পঙ্খীরে’ গান দুটি সুবীর দার সংগীত জীবনে অনেক পরিবর্তন আনে। সে কারণে তিনি এমন কথা বলেছিলেন।’

‘তাছাড়া, আমি সুবীর দার জন্য আধুনিক গানের একটা আ্যালবাম করেছিলাম। তিনি সবখানেই গান গাওয়ার আগে অনেক যত্ন করে গীতিকার, সুরকারদের নাম বলতেন। হুমায়ুন আহমেদের খুব প্রিয় কণ্ঠশিল্পী ছিলেন সুবীর দা।’

সংগীত অঙ্গনে চার দশকের ক্যারিয়ারে সুবীর নন্দী আড়াই হাজারেরও বেশি গান গেয়েছেন। স্বীকৃতি হিসেবে পাঁচবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

পুরস্কারপ্রাপ্ত সেসব চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে— মহানায়ক (১৯৮৪), শুভদা (১৯৮৬), শ্রাবণ মেঘের দিন (১৯৯৯), মেঘের পরে মেঘ (২০০৪) ও মহুয়া সুন্দরী (২০১৫)।

১৯৫৩ সালের ১৯ নভেম্বর হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার নন্দীপাড়ায় এক সম্ভ্রান্ত সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সুবীর নন্দী। বাবার চাকরি-সূত্রে তার শৈশব কেটেছে চা-বাগানে। সুবীর নন্দী গানের পাশাপাশি ব্যাংকে চাকরি করেছেন।

মা পুতুল রানীর কাছে সুবীর নন্দী সংগীতের হাতেখড়ি নেওয়ার পর ওস্তাদ বাবর আলী খানের কাছে শাস্ত্রীয় সংগীতে তালিম নেন। সিলেট বেতারে তিনি প্রথম গান করেন ১৯৬৭ সালে। এরপর ঢাকা রেডিওতে সুযোগ পান ১৯৭০ সালে।

১৯৭৬ সালে আব্দুস সামাদ পরিচালিত ‘সূর্যগ্রহণ’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্লেব্যাকে আসেন সুবীর। ১৯৭৮ সালে মুক্তি পায় আজিজুর রহমানের ‘অশিক্ষিত’। সেই সিনেমায় সাবিনা ইয়াসমিন আর সুবীর নন্দীর কণ্ঠে ‘মাস্টার সাব আমি নাম দস্তখত শিখতে চাই’ গানটি অনেক জনপ্রিয় হয়েছিল।

ধীরে ধীরে সুবীর নন্দীর দরদী কণ্ঠের রোমান্টিক আধুনিক গান ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মুখে মুখে। এরপর তাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি।

বেতার থেকে টেলিভিশন, তারপর চলচ্চিত্রে গান গেয়েছেন সুবীর নন্দী। ১৯৮১ সালে তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘সুবীর নন্দীর গান’ প্রকাশিত হয়। চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম গান করেন ১৯৭৬ সালে। সেটি ছিল ‘সূর্যগ্রহণ’ চলচ্চিত্র।

সুবীর নন্দীর কণ্ঠে ‘দিন যায় কথা থাকে’, ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’, ‘পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই’, ‘আশা ছিল মনে মনে’, ‘হাজার মনের কাছে প্রশ্ন রেখে’, ‘বন্ধু তোর বরাত নিয়া’, ‘বন্ধু হতে চেয়ে তোমার’, ‘কতো যে তোমাকে বেসেছি ভালো’, ‘পাহাড়ের কান্না দেখে’, ‘আমি বৃষ্টির কাছ থেকে কাঁদতে শিখেছি’, ‘একটা ছিল সোনার কইন্যা’, ‘ও আমার উড়াল পঙ্খীরে’ শ্রোতাদের হৃদয়ে অমর হয়ে থাকবে।

Comments

The Daily Star  | English

Please don't resign: An appeal to Prof Yunus

Every beat of my patriotic heart, every spark of my nation building energy, every iota of my common sense, every conclusion of my rational thinking compels me to most ardently, passionately and humbly appeal to Prof Yunus not to resign from the position of holding the helm of the nation at this crucial time.

3h ago