উসকানিমূলক বক্তব্য: তালিকা তৈরি করে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে পুলিশ

সাকিব ও আলি হাসান ওসামা। (বাম দিকে থেকে) ছবি: সংগৃহীত

অনলাইন ও জনসভায় উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া উগ্রবাদী বক্তাদের তালিকা তৈরি করছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে সাত জনকে শনাক্ত করে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

সিটিটিসির উপ-কমিশনার সাইফুল ইসলাম জানান, ধরপাকড়ের কারণে দেশে জঙ্গিবাদী কার্যক্রম কমে গেলেও উগ্রবাদের শঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা যে তালিকাটি তৈরি করছি, সেখানে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের নামও আছে। জঙ্গিদের কাছে জনপ্রিয় উগ্রবাদী বক্তাদের শাস্তির আওতায় আনার লক্ষ্যে কাজ করছি আমরা।’

সন্ত্রাস-বিরোধী আইনে এ বক্তারা ‘উসকানিদাতা’ হিসেবে অভিযুক্ত হবেন বলে জানান তিনি।

সিটিটিসির একটি অনলাইন নজরদারি ব্যবস্থা আছে জানিয়ে উপ-কমিশনার বলেন, ‘কিন্তু, শুধুমাত্র নজরদারি দিয়ে উগ্রবাদ থামানো সম্ভব না। আমরা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উদ্যোগ নিয়েছি।’

তিনি জানান, গত বুধবার ২০ বছর বয়সী এক তরুণকে গ্রেপ্তারের পর থেকে এসব উদ্যোগ নেওয়ার কাজ শুরু করে পুলিশ। আল সাকিব নামের ওই তরুণ পুলিশকে বলেছিলেন, তিনি অনলাইনে ভিডিও দেখে জঙ্গিবাদে যুক্ত হন। জাতীয় সংসদে হামলা চালানোর পরিকল্পনা ছিল তার।

সাকিবকে বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটের দিকে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের সন্দেহ, তিনি আল-কায়েদার অনুসারী জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য। তার কাছ থেকে একটি কালো পতাকা, কালো রুমাল, বড় একটি ছুরি ও একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।

সাকিব পুলিশকে জানান, তিনি উগ্রবাদী বক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর তারা তাকে সমমনা অন্যদের নিয়ে একটি দল গঠন করতে এবং সন্ত্রাসী হামলা চালাতে উৎসাহ দেন। এরপর তিনি ম্যাসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করে মানুষকে আমন্ত্রণ জানাতে শুরু করেন এবং স্থানীয় কামারের বানানো বড় ছুরিটি সংগ্রহ করেন।

সিটিটিসির উপ-কমিশনার জানান, বুধবার আমন্ত্রণ জানানো ৩১৩ জনকে নিয়ে জাতীয় সংসদে হামলা চালানোর পরিকল্পনা নিয়ে সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকায় যান সাকিব। কিন্তু, সৌভাগ্যবশত কেউ তার আমন্ত্রণে সাড়া দেয়নি।

সাকিবকে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ার পরামর্শ দেওয়ার অভিযোগে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজবাড়ী থেকে আলি হাসান ওসামা নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

সাকিব যে বক্তাদের বক্তব্য শুনে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন, ২৭ বছর বয়সী ওসামা তাদের একজন। তিনি ‘বাংলার ওসামা’ নামে পরিচিত বলে সিটিটিসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

তারা বলেন, ‘২০১৩ সালে মুফতি জসিম উদ্দিন রহমানিকে গ্রেপ্তারের পর থেকে ওসামা আনসার আল ইসলামের আধ্যাত্মিক নেতার ভূমিকা পালন করে আসছিলেন। গত পাঁচ বছরে তিনি ৪০ থেকে ৫০টি উসকানিমূলক বই লিখেছেন। গত দুই বছর ধরে আমাদের নজরদারিতে ছিলেন তিনি।’

ব্লগার আহমেদ রাজিব হায়দার হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে মুফতি জসিম উদ্দিন রহমানিকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

উপ-কমিশনার সাইফুল জানান, ইউটিউব ও টেলিগ্রামে ওসামার বক্তব্য দেখে তার বিপুল সংখ্যক অনুসারীর অনেকেই উগ্রবাদী হয়ে উঠেছে। এর আগে, সিঙ্গাপুরে একজন ও ভারতে দুজন বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়,

যারা অনলাইনে ওসামার বক্তব্য দেখে উগ্রবাদী হয়ে উঠেছিলেন বলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানিয়েছিলেন।

ওসামা প্রতিদিন সাধারণত ৫০ থেকে ১০০ জন অনুসারীর সঙ্গে রাজবাড়ীর বিভিন্ন বাড়ি ও মসজিদে দেখা করতেন।

এ ছাড়া, হেফাজতের সাবেক শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মুফতি হারুন ইজহারকেও উগ্রবাদী বক্তা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিটিটিসি কর্মকর্তারা।

হাটহাজারীর ২৬ মার্চের সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত ২ মে ইজহারকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তিনি সিরাজগঞ্জ মাদ্রাসার একজন উপদেষ্টা। সাকিব এই মাদ্রাসাতেই পড়তেন।

সিটিটিসির একটি সূত্র জানিয়েছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল-জিহাদ-আল-ইসলামির সক্রিয় সংগঠক হওয়ার কারণে ইজহারের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদের অভিযোগও আনা হবে।

প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago