সাহিত্য

কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক আলাউদ্দিন আল আজাদ

প্রথম শহীদ মিনার ভাঙার প্রতিবাদে প্রথম কবিতা লিখেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক প্রখর মেধাবী ছাত্র। নাম তার আলাউদ্দিন আল আজাদ। সেই ছেলের হাতেই পরবর্তীতে কী জন্ম নেয়নি? গল্প কবিতা, উপন্যাস, নাটক থেকে শুরু করে প্রবন্ধ, শিশু সাহিত্য, সাহিত্য গবেষণা, সাহিত্য সমালোচনা থেকে অজস্র বিষয়বস্তু। যিনি হয়ে উঠলেন এই বাংলার প্রথম সব্যসাচী সাহিত্যিক। কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক, কবি ও শিক্ষাবিদ আলাউদ্দিন আল আজাদ। অথচ তার প্রথম জীবন ছিল কেবলই সংগ্রামের, হারানোর বেদনালিপ্ত।
আলাউদ্দিন আল আজাদ।

"স্মৃতির মিনার ভেঙেছে তোমার?

ভয় কি বন্ধু, আমরা এখনো

চারকোটি পরিবার

খাড়া রয়েছি তো!

যে-ভিত কখনো কোনো রাজন্য

পারেনি ভাঙতে"

প্রথম শহীদ মিনার ভাঙার প্রতিবাদে প্রথম কবিতা লিখেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক প্রখর মেধাবী ছাত্র। নাম তার আলাউদ্দিন আল আজাদ। সেই ছেলের হাতেই পরবর্তীতে কী জন্ম নেয়নি? গল্প কবিতা, উপন্যাস, নাটক থেকে শুরু করে  প্রবন্ধ, শিশু সাহিত্য, সাহিত্য গবেষণা, সাহিত্য সমালোচনা থেকে অজস্র বিষয়বস্তু। যিনি হয়ে উঠলেন এই বাংলার  প্রথম সব্যসাচী সাহিত্যিক। কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক, কবি ও শিক্ষাবিদ আলাউদ্দিন আল আজাদ। অথচ তার প্রথম জীবন ছিল কেবলই সংগ্রামের, হারানোর বেদনালিপ্ত।

আলাউদ্দিন আল আজাদের জন্ম ১৯৩২ সালের ৬ মে নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার রামনগর গ্রামে।

বাবা গাজী আব্দুস সোবহান, মা মোসাম্মাৎ আমেনা খাতুন। মাত্র এক বছর বয়সেই মাকে হারিয়েছিলেন আলাউদ্দিন আল আজাদ। আর পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় হারিয়েছিলেন বাবাকেও। তারপর শুরু হলো তার জীবন সংগ্রাম। এরপর দাদীর কাছে বেড়ে ওঠা তার। কিন্তু গ্রামের সংসারে তখন ভীষণ অভাব। তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতা। মানুষ মারা যাচ্ছে না খেতে পেয়ে। একবার তার দাদীর খুব অসুখ। আর্থিক অনটন ও দুরাবস্থায় চিকিৎসক দেখাতে পারলেন না। রচনা প্রতিযোগিতায় যে সোনার মেডেল পেয়েছিলেন সেটাই ভৈরব বাজারে বিক্রি করে বাজার থেকে যখন ডাক্তার নিয়ে বাড়ি ফিরলেন দেখলেন দাদী মারা গেছেন।

রায়পুরেরই স্থানীয় নারায়ণপুর শরাফতউল্লাহ উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা তথা ম্যাট্রিক পাশ করেছিলেন তিনি। সালটা ১৯৪৭। সে বছরই হলো দেশভাগ। তার ইচ্ছে ছিল তিনি ঢাকা কলেজে ভর্তি হবেন। কিন্তু সেখানে আর্থিক ভাবনা। বাড়ি থেকে যে বের হবেন সে পয়সাও নেই তার। পরে একজনের থেকে ৩ টাকা ধার করে দৌলতকান্দি রেলস্টেশন থেকে ১ টাকায় কাটলেন ঢাকার টিকেট। আর সঙ্গে রইলো দুই টাকা আর টিনের স্যুটকেস। ঢাকায় গিয়ে কোথায় উঠবেন তার কোনো ঠিক নেই, কোথায় যাবেন তিনি! ঢাকায় ফুলবাড়িয়া স্টেশনে নেমে দিশেহারা হয়ে পড়লেন। অচেনা নগর, অচেনা মানুষজন। কিন্তু তার স্বপ্ন তখনো ঢাকা কলেজে পড়ার। কোথায় জুটবে পড়াশোনার খরচ, কোথায় জুটবে অন্য সংস্থান।

এমন হাজারো চিন্তার মধ্যে অবশেষে এক ঘোড়ার গাড়িওয়ালার আস্তাবলের পার্টিশন দেয়া একটি অংশে আশ্রয় জুটলো তার। ঢাকায় আসার কিছুদিনের মধ্যে তার পরিচয় হলো কবি শামসুর রাহমান ও হাসান হাফিজুর রহমানের সঙ্গে। নিখাদ বন্ধুত্ব হয়ে গেল তাদের। আলাউদ্দিন আল আজাদ ভর্তি হলেন ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজে কলা বিভাগে। ১৯৪৯ সালে কৃতিত্বপূর্ণ ফল করে জায়গা করে নিয়েছিলেন বোর্ডের মেধা তালিকায়। ঢাকা  ইন্টারমিডিয়েট কলেজে থাকার সময় কলেজের ছাত্র সংসদের সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন আলাউদ্দিন আল আজাদ।

আলাউদ্দিন আল আজাদের সাহিত্য চর্চার সূচনা হয়েছিল মাত্র ১৩ বছর বয়সেই। আর ১৯৪৬ সালে তথা বাংলা ১৩৫৪ সনে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন সম্পাদিত ‘সওগাত’ পত্রিকায় শ্রাবণ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল তার প্রবন্ধ ‘আবেগ’ এবং গল্প ‘জানোয়ার’। তখন তার বয়স মাত্র ১৪ বছর। যেখানে অন্য সবার সাহিত্য চর্চার সূচনা হয় কবিতা অথবা গল্প দিয়ে, সেখানে তার সূচনা হয়েছিল প্রবন্ধ দিয়ে।

১৯৫০ সালে আলাউদ্দিন আল আজাদ ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন মাত্র ১৮ বছর বয়সে প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর গল্পগ্রন্থ  "জেগে আছি"।  ১৯৫১ সালে তিনি লিখেছিলেন গল্পগ্রন্থ "ধানকন্যা"। মূলত এই সময়টাতেই গড়ে উঠেছিলেন আলাউদ্দিন আল আজাদ। বাংলা বিভাগে শিক্ষক তখন নামজাদা সাহিত্যিক নাট্যকার ও ভাষাবিদেরা। তাদের ভীষণ স্নেহধন্য ছিলেন আলাউদ্দিন আল আজাদ।

১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সময় আলাউদ্দিন আল আজাদ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ছিলেন ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মী মিলে মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে শহীদ হন জব্বর, রফিক, সালাম, বরকতসহ আরও অনেকে। শহীদদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়ে উঠে। শোকাবহ এ ঘটনার অভিঘাতে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির রক্তাক্ত ঘটনার দিনে বিক্ষোভকারীদের একজন হিসেবে আলাউদ্দিন আল আজাদ প্রত্যক্ষ করেন একুশের প্রথম শহীদ রফিকউদ্দিনের নির্মম মৃত্যু। প্রত্যক্ষ করেন আবদুল জব্বার ও আব্দুল বরকতের গুলিবিদ্ধ হওয়ার দৃশ্য।

২৪ ফেব্রুয়ারি। দিনটি ছিল রবিবার। সকালের রোদে মেডিকেল হোস্টেলের সামনে সদ্য তৈরি করা শহীদ স্মৃতি স্তম্ভের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন মেডিকেল কলেজের কয়েকজন ছাত্র। তারা ভাবলেন কী করে এতো বিনা উপদ্রবে কাজটি শেষ হলো। এক সময় মানুষের ভীড় লাগলো শহীদ স্মৃতি স্তম্ভের দিকে। স্মৃতিস্তম্ভ যেন আন্দোলনকে আরো জোর দিলো। শাসকের প্রতি তীব্র ঘৃণায় যেন তাকিয়ে আছে। ২৪ ও ২৫শে ফেব্রুয়ারি নির্বিঘ্নেই কাটলো। ২৬ তারিখ স্মৃতি স্তম্ভ উদ্বোধন করলেন আইন পরিষদ থেকে ইস্তফা দেয়া আবুল কালাম শামসুদ্দিন। সেদিন বিকেলে পুলিস প্রথমে এসে মেডিকেল ছাত্রাবাস ঘিরে ফেলে। অন্য আরেকদল ট্রাকে করে ভাঙার সরঞ্জামাদি নিয়ে ভিতরে ঢোকে। নুরুল আমিন প্রশাসনের নির্দেশে স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। সশস্ত্র পুলিশের সামনে অসহায় চোখে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না ছাত্রদের।

আলাউদ্দিন আল আজাদ তখন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতেই ইকবাল হলে বসে তিনি লেখেন স্মৃতিস্তম্ভ কবিতাটি। শুধু শহীদ মিনার নয়, যাদের স্মৃতিতে সেই মিনার, তাদের মৃত্যুকে মহিমাময় করেছেন আজাদ। যে মৃত্যুতে স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে ওঠে, রচিত হয় কবিতা, বাঁধা হয় গান, সে মৃত্যু অমরতার অপর নাম।

একুশের ছাত্র হত্যার পর রচিত হয় একুশের প্রথম বুলেটিন যার শিরোনাম ছিল ‘বিপ্লবের কোদাল দিয়ে আমরা অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীর কবর রচনা করি।" এখানে ঠাঁই পেয়েছিল আলাউদ্দিন আল আজাদের রচিত "স্মৃতি স্তম্ভ"  কবিতাটি।

১৯৫৩  সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে স্নাতকে প্রথম বিভাগে প্রথম হয়েছিলেন আলাউদ্দিন আল আজাদ। সংবাদপত্রে খন্ডকালীন চাকরি করেছিলেন এই সময়ে। ১৯৫৪ সালের স্নাতকোত্তরেও প্রথম বিভাগে প্রথম হয়েছিলেন তিনি।   স্নাতকোত্তরে থাকাকালীন সময়ে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আলাউদ্দিন আল আজাদ। পরের বছর নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজে বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন আলাউদ্দিন আল আজাদ। কিন্তু সেখানে ১ বছরের বেশি থাকেননি। ১৯৫৬ সালে শিক্ষক হয়ে চলে এলেন জগন্নাথ কলেজে । এই সময়ে ঢাকা জেলা যুবলীগের সভাপতি ও পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের সহসভাপতি  ছিলেন আলাউদ্দিন আল আজাদ। জগন্নাথ কলেজে থাকাকালীন সময়ে ১৯৫৮ সালে প্রকাশিত হয়েছিল আলাউদ্দিন আল আজাদের প্রথম নাটক "মরক্কোর জাদুকর"। একই বছর প্রকাশিত হয়েছিল তার প্রথম প্রবন্ধ সংকলন "শিল্পীর সাধনা" ও। 

আলাউদ্দিন আল আজাদের প্রথম উপন্যাস "তেইশ নম্বর তৈলচিত্র" প্রকাশিত হয়েছিলো ১৯৬০ সালে। প্রথম উপন্যাসেই সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন আলাউদ্দিন আল আজাদ। যেই উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে নির্মিত হয়েছিল বিখ্যাত চলচ্চিত্র "বসুন্ধরা"।  জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক থাকাকালীন সময়ে যেমন প্রকাশিত হয়েছিল তার লেখা প্রথম নাটক এবং প্রথম উপন্যাস এবং প্রথম প্রবন্ধ সংকলন। তেমনি প্রথম কাব্য গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছিল তখনই। সালটা ১৯৬১, প্রকাশিত হলো আলাউদ্দিন আল আজাদের প্রথম কাব্যগ্রন্থ “মানচিত্র”।

জগন্নাথ কলেজের চাকরি ছেড়ে ১৯৬২ সালে আলাউদ্দিন আল আজাদ যোগ দিলেন সিলেট এমসি কলেজে। যে বছর এমসি কলেজে তিনি জ্যেষ্ঠ প্রভাষক হিসেবে যোগ দিলেন সেবছরই প্রকাশিত হয়েছিল তার "শীতের শেষরাত বসন্তের প্রথম দিন" ও “কর্ণফুলী” উপন্যাস। কর্ণফুলী উপন্যাস বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। বিশেষ করে এই উপন্যাসে আঞ্চলিক ভাষার অসামান্য ব্যবহার,  কর্ণফুলীর তীরে যে সব বিশেষ সম্প্রদায় বসবাস করে তাদের জীবনচিত্র তুলে ধরা। পাহাড় সমুদ্র ঘেরা উপজাতীয়দের জীবন চিত্র অবলম্বনে রচিত হয়েছিল এই উপন্যাস। এই উপন্যাসে আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহারে নিখুঁত দক্ষতার জন্য ১৯৬৫ সালে  ইউনেস্কো পুরস্কার পেয়েছিলেন আলাউদ্দিন আল আজাদ।

১৯৬২ সালে প্রকাশিত হয়েছিলো তার অনন্য কাব্যগ্রন্থ "ভোরের নদীর মোহনায় জাগরণ"।  এমসি কলেজে থাকাকালীন শেষ সময় প্রকাশিত হয়েছিল তার আরেক অসামান্য উপন্যাস "ক্ষুধা ও আশা"। ১৯৬৪ সালে আলাউদ্দিন আল আজাদ চলে এলেন চট্টগ্রাম সরকারী কলেজে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক হয়ে। সে বছরই বাংলা সাহিত্যে ও গবেষণায় অসামান্য অবদানের জন্য আলাউদ্দিন আল আজাদ পেয়েছিলেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার। একই বছর প্রকাশিত হয়েছিল তার লেখা জীবন ঘনিষ্ঠ নাটক "ধন্যবাদ"। ১৯৬৭ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে চলে গিয়েছিলেন আবার সিলেটের এমসি কলেজে। সেখান থেকে ১৯৬৯ সালে ছুটি নিয়ে তিনি চলে যান লন্ডনে পিএইচডির জন্য। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ঈশ্বরগুপ্তের জীবন ও কবিতা বিষয়ে ১৯৭০ সালে অর্জন করলেন পিএইচডি ডিগ্রি। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতার পক্ষে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর ছিলেন আলাউদ্দিন আল আজাদ। দেশ স্বাধীনের পরের বছর ১৯৭২ সালে প্রকাশিত হলো আলাউদ্দিন আল আজাদের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক দুটি বিখ্যাত নাটক  "নিঃশব্দ যাত্রা" ও "নরকে লাল গোলাপ"। ১৯৭৪ সালে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন আলাউদ্দিন আল আজাদ। সে বছর প্রকাশিত হয়েছিল  আলাউদ্দিন আল আজাদের প্রবন্ধ সংকলন "সাহিত্যের আগন্তুক ঋতু"। এই প্রবন্ধে   সাহিত্য-সমালোচনা ও মননশীলতার পরিচয় পাওয়া যায় আলাউদ্দিন আল আজাদের। আলাউদ্দিন আল আজাদ ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন এক বছর।

১৯৭৫ সালে তিনি যোগ দিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। এখানে থাকাকালীন সময়ে প্রকাশিত হয়েছিল উপন্যাস খসড়া কাগজ, শ্যাম ছায়ার সংবাদ, জ্যোৎস্নার অজানা জীবন, যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, স্বাগতম ভালোবাসার মতো অসাধারণ সব উপন্যাস। ঠিক তেমনি প্রকাশিত হয়েছিল তার লেখা  উজান তরঙ্গে, যখন সৈকত, আমার রক্ত স্বপ্ন আমার এর মতো গল্পগ্রন্থ। এছাড়া পেশাগত জীবনে মস্কোর বাংলাদেশ দূতাবাসে সংস্কৃতি উপদেষ্টা, শিক্ষা সচিব, সংস্কৃতিবিষয়ক বিভাগ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও গুরুত্বপূর্ণ সব দায়িত্ব পালন করেছিলেন আলাউদ্দিন আল আজাদ। টানা সাত বছর ছিলেন তিনি বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা। এছাড়া বিখ্যাত রয়েল সোসাইটির ফেলো ও যুক্তরাষ্ট্রের মর্ডান ল্যাংগুয়েজ সোসাইটির মেম্বার ছিলেন আলাউদ্দিন আল আজাদ।

কবিতা, নাটক, উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ, শিল্প সাহিত্য সমালোচনা, নন্দন তত্ত্ব থেকে গবেষণা, শিশু সাহিত্য, সম্পাদনা, অনুবাদ- সাহিত্যের প্রতিটি ধারায় ছিল আলাউদ্দিন আল আজাদের বিচরণ। আলাউদ্দিন আল আজাদ একাধারে ছিলেন শিক্ষকও। পেশার খাতিরে তার কর্মব্যস্ততা যেমন ছিল তেমনই ছিল গবেষণা। আবার  একসময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় টিভি অনুষ্ঠান ‘মণিহার’ এরও জনক ছিলেন আলাউদ্দিন আল আজাদ। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলা সংস্কৃতি ও বিকাশকে সারা বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে ছিলেন তিনি।

এত অজস্র ব্যস্ততা সত্ত্বেও আলাউদ্দিন আল আজাদের সৃষ্টিকর্মের সম্ভার অবিশ্বাস্য। মোট ১১৮টি গল্প, ২৪টি উপন্যাস, ১২টি নাটক, ১১টি কাব্য গ্রন্থ, পাঁচটি প্রবন্ধ সংকলন, ত্রিশের বেশি সংকলিত গ্রন্থ, বিশের অধিক অনুবাদিত গ্রন্থ থেকে অজস্র  সাহিত্য সমালোচনা। পঞ্চাশের দশকের প্রথম ভাগ থেকে নব্বইয়ের দশকের  শেষভাগ পর্যন্ত, টানা ৫০ বছরেরও অধিক সময় ধরে বিস্তৃত ছিল আলাউদ্দিন আল আজাদের সাহিত্য। একাধারে  প্রগতিশীল ও মানবতাবাদী ভাবধারায় সাহিত্যচর্চা। অন্যদিকে গ্রামের মানুষ ও তাদের সংগ্রাম, প্রকৃতির ঐশ্বর্য ও সংহারমূর্তি সাহিত্যে তুলে ধরা কিংবা নগরজীবনের কৃত্রিমতা, রাজনীতিক সংগ্রাম, নিপীড়ন, প্রতারণা সমস্তই ছিল আলাউদ্দিন আল আজাদের সাহিত্যের উপজীব্য। আলাউদ্দিন আল আজাদের সাহিত্যে এসেছে বাংলাদেশ, পূর্ব পাকিস্তান পটভূমি। আলাউদ্দিন আল আজাদ ছিলেন ভাষা আন্দোলনের গণমুখী ও স্বদেশপ্রেমী সাহিত্যধারার সাহিত্যিক। বাংলা এবং বাঙালির জীবনকে উপজীব্য করে সাহিত্যের মূল ধারায় এমন বিস্তৃতি খুব কম সাহিত্যিকই দিতে পেরেছেন। তাইতো আলাউদ্দিন আল আজাদ যেমন থাকবেন তার সৃষ্টিকর্মের মধ্যে দিয়ে, তেমনই চিরকাল থাকবেন সমস্ত বাংলা ভাষাভাষী মানুষের অন্তরের অন্তরস্থলে।

কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক, কবি , প্রাবন্ধিক, শিক্ষাবিদ আলাউদ্দিন আল আজাদের জন্ম বার্ষিকী ছিল গত ৬ মে। বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই বাংলা কথাসাহিত্যের এই মহারথীর প্রতি।

তথ্যসূত্র- 

সাহিত্যের সব্যসাচী আলাউদ্দিন আল আজাদ - ড. সফিউদ্দিন আহমদ।

আলাউদ্দিন আল আজাদের কবিতা: ব্যাপ্তি ও দীপ্তি।

আহমাদ ইশতিয়াক [email protected]

আরও পড়ুন:

Comments

The Daily Star  | English
government changed office hours

Govt office hours 9am-3pm from Sunday to Tuesday

The government offices will be open from 9:00am to 3:00pm for the next three days -- from Sunday to Tuesday -- this week, Public Administration Minister Farhad Hossain said today

1h ago