পরিযায়ী পাখি আমাদের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ করছে: পরিবেশ মন্ত্রী
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, প্রতি বছর শীত মৌসুমে সুদূর সাইবেরিয়া এবং ইউরোপ থেকে বাঁচার তাগিদে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি এসে আমাদের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ করছে। এসব পরিযায়ী পাখি সংরক্ষণে সরকারের কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণে পাখি নিধন কমেছে।
আজ বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস উপলক্ষে বন অধিদপ্তর আয়োজিত অনলাইন আলোচনা সভায় এ কথা বলেন পরিবেশ মন্ত্রী।
মন্ত্রী এসময় পরিবেশ রক্ষায় এসব পাখির আবাসস্থল রক্ষায় দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, পাখি নিধন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে সকলের সহযোগিতা চাই।
পাখি সংরক্ষণে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ উল্লেখ করে পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে আবাসিক ও পরিযায়ী পাখিসহ প্রায় ৭১০ প্রজাতির পাখির মধ্যে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসীলে ৬৫০ প্রজাতির পাখি রক্ষিত প্রাণী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পরিযায়ী পাখি শিকার/হত্যার জন্য সর্বোচ্চ এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরিযায়ী পাখি সংরক্ষণে বাংলাদেশের সোনাদিয়া, নিঝুম দ্বীপ, টাংগুয়ার হাওর, হাকালুকি হাওর, হাইল হাওর এবং গাঙগুইরার চর ইস্ট এশিয়ান অস্ট্রেলিয়ান ফ্লাইওয়ে সাইট হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘পরিযায়ী জলচর পাখির পরিযায়ন পথ বিষয়ক গবেষণার উদ্দেশ্যে পাখি শুমারি ও পাখির গায়ে রিং পরানো এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিপিএস স্যাটেলাইট ট্যাগিং করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে পরিযায়ী পাখির পরিযায়ন সম্পর্কিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘দেশব্যাপী অবৈধভাবে পাখি শিকার ও বাণিজ্য বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অপরাধীকে হাতেনাতে ধরা ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড করা হচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে বর্তমানে এ সংক্রান্ত অপরাধ বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। পরিযায়ী পাখি সংরক্ষণে স্থানীয় জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন পথসভা, র্যালি, আলোচনা সভা ও প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘২০২০-২১ অর্থবছরে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার শামুকখোল পাখির কলোনির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া পরিবারের মাঝে ৩ লাখ ১৮ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়েছে। পাখিসহ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সরকার পুরস্কার প্রণোদনা প্রদান করে থাকে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘মহাবিপন্ন’ প্রাণী শকুনের জন্য মরণঘাতী ওষুধ ডাইক্লোফেনাক উৎপাদন ও বিক্রি সারাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং সুন্দরবন ও সিলেটে দুটি ভালচার সেভ জোন ঘোষণা করা হয়েছে। অসুস্থ ও আহত শকুনদের উদ্ধার ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দিনাজপুরের সিংড়ায় একটি শকুন উদ্ধার ও পরির্চযা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভায় শকুন রক্ষায় ক্ষতিকর ‘কিটোপ্রোফেন’ ওষুধের উৎপাদন বন্ধের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জনগণের সহযোগিতা নিয়ে বর্তমান সরকার পাখিসহ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সফল হবে।’
বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার, সচিব জিয়াউল হাসান এনডিসি, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক এবং বাংলাদেশ বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন ফেডারেশন এর সভাপতি ড. এস এম ইকবাল প্রমুখ।
Comments