ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজের অনিশ্চয়তা কাটছে না

ভারতর সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে সময়মতো ভ্যাকসিন না পাওয়ায় দেশের প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ মানুষের দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৮৫৬ জনকে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। সেই হিসাবে সবাইকে দুই ডোজ দিতে মোট প্রয়োজন প্রায় এক কোটি সাড়ে ১৬ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত অ্যাস্ট্রাজেনেকার এক কোটি তিন লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছে।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা, সিনোফার্ম ও স্পুতনিক-ভি ভ্যাকসিন। ছবি: সংগৃহীত

ভারতর সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে সময়মতো ভ্যাকসিন না পাওয়ায় দেশের প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ মানুষের দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৮৫৬ জনকে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। সেই হিসাবে সবাইকে দুই ডোজ দিতে মোট প্রয়োজন প্রায় এক কোটি সাড়ে ১৬ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত অ্যাস্ট্রাজেনেকার এক কোটি তিন লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছে।

অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক, অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান (উপরে বামদিক থেকে), অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ, অধ্যাপক ডা. মুশতাক হোসেন ও ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম (নিচে বামদিক থেকে)।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজের ৮-১২ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া উচিত। দেশে ইতোমধ্যে যাদের প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে, যদি তাদেরকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া না যায়, সেক্ষেত্রে কী হবে? এক্ষেত্রে করণীয়? ভিন্ন ভ্যাকসিন দিয়ে কি দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যাবে? বৈজ্ঞানিক তথ্য কী বলছে?

দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে ডব্লিউএইচওর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক, জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম, কমিটির আরেক সদস্য ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ, রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মুশতাক হোসেন ও ইংল্যান্ডের দ্য ইউনিভার্সিটি অব শেফিল্ডের জ্যেষ্ঠ গবেষক, ব্রিটিশ-বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. খোন্দকার মেহেদী আকরামের সঙ্গে।

অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, ‘আমরা যদি একই ভ্যাকসিন দিয়ে ১২ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ দিতে না পারি, তাহলে আবার অন্য যেকোনো ভ্যাকসিনই তাদেরকে দুটো ডোজই দিতে হবে। তবে, এক্ষেত্রে পরামর্শ হলো তাদের অ্যান্টিবডি বা অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করে নিতে পারলে ভালো হয়। এটা পরীক্ষা করে তাদেরকে আবার নতুন করে দুইটা ডোজ দেওয়ার চিন্তা করতে হবে। সেক্ষেত্রে তাদেরকে যে প্রথম ডোজটা দেওয়া হলো, তা অপচয় হলো। কারণ, ছয় থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে একই ভ্যাকসিন দিয়ে দ্বিতীয় ডোজ দিতে পারলে সবচেয়ে কার্যকারিতা পাওয়া যায়।’

ভিন্ন ভ্যাকসিন দিয়ে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যাবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পাঁচ ধরনের ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে। এখন আমাদেরকে দেখতে হবে যে ফরমুলায় অ্যাস্ট্রাজেনেকা তৈরি হয়েছে, সেই ফরমুলায় একই শক্তিতে যদি কোনো ভ্যাকসিন তৈরি হয়ে থাকে, তাহলে সেটা দেওয়া যাবে। যেমন: স্পাইক প্রোটিন যদি এক হয়, সেটা দিয়ে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যাবে। কিন্তু, যদি স্পাইক প্রোটিন এক না হয়, সেক্ষেত্রে অন্য ভ্যাকসিনের পুরো কোর্স শেষ করতে হবে। যেমন: যেগুলো দুই ডোজের, সেগুলো পুরো দুই ডোজ দিতে হবে, যেগুলো এক ডোজের, সেগুলো এক ডোজ দিতে হবে।’

সিনোফার্ম ও স্পুতনিক-ভি ভ্যাকসিনের স্পাইক প্রোটিন অ্যাস্ট্রাজেনেকার মতো একই কি না, অ্যাস্ট্রাজেনেকার পরিবর্তে সেগুলো দিয়ে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যাবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্পাইক প্রোটিন থেকে যে যে ভ্যাকসিন তৈরি হয়, সেগুলো একটার পরিবর্তে আরেকটা ব্যবহার করা যাবে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং সিনোফার্ম ও স্পুতনিক-ভির স্পাইক প্রোটিন একই। সেক্ষেত্রে যদি অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের আরও ডোজ না পাওয়া যায়, এর পরিবর্তে ওই দুইটা দিয়েও দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে দেওয়া যাবে।’

অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘যাদেরকে প্রথম ডোজ হিসেবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে, একই ভ্যাকসিন দিয়ে যদি দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া না যায়, তাহলে অন্য ভ্যাকসিন দিয়ে দিতে হবে।’

কিন্তু, অন্য ভ্যাকসিন দিয়ে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার বিষয়টি এখনো পরীক্ষিত নয়। সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিজ্ঞানসম্মতভাবে যেকোনো একটা ভ্যাকসিন দিয়েই দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যেতে পারে। ভ্যাকসিনে আমরা স্পাইক প্রোটিন অ্যান্টিজেন ব্যবহার করছি। অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনেও স্পাইক প্রোটিন অ্যান্টিজেন, ফাইজার, সিনোভ্যাকও একই। এক ভ্যাকসিনের সঙ্গে আরেক ভ্যাকসিনের মিল হলো অ্যান্টিজেন একই। ফলে একটা দিয়ে প্রথম ডোজ দিলে অন্যটা দিয়ে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যাবে বলে আমি মনে করছি। সেক্ষেত্রে আমাদের যাদেরকে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন দিয়ে প্রথম ডোজ দিয়েছি, সিনোফার্ম বা স্পুতনিক-ভি দিয়ে তাদেরকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যাবে।’

ভিন্ন ভ্যাকসিন দিয়ে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হলে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যে ভ্যাকসিনটা দেওয়া হলো, যদি সেটার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে থাকে, তাহলে কাউকে সেটা দেওয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন: কাউকে প্রথম ডোজ হিসেবে অ্যাস্ট্রাজেনেকা, দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে স্পুতনিক-ভি দেওয়া হলো। এখন যদি অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে, তাহলে যাকে দেওয়া হবে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিবে। একইভাবে স্পুতনিক-ভির যদি কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে, তাহলে যাকে দেওয়া হবে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিবে। কিন্তু, প্রথম ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও দ্বিতীয় ডোজ সিনোফার্ম কিংবা স্পুতনিক-ভি দেওয়ার কারণে কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যাবে না। অর্থাৎ, দ্বিতীয় ডোজ ভিন্ন ভ্যাকসিন দেওয়া হলে কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যাবে না।’

অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান বলেন, ‘আমরা আট সপ্তাহ ব্যবধানে দ্বিতীয় ডোজ দিচ্ছি। সেটা ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত ব্যবধানে দেওয়া যেতে পারে। যারা দ্বিতীয় ডোজ পাবেন, এই সময়ের মধ্যে যদি তাদের জন্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন জোগাড় করতে না পারি, তাহলে ভিন্ন টিকা দিয়ে দ্বিতীয় ডোজ দিলে সুফল পাওয়া যাবে কি না, বৈজ্ঞানিকভাবে সেটা এখনো প্রমাণিত না। যে কারণে সরকার চেষ্টা করছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন জোগাড় করতে। যদি জোগাড় করা না যায়, তাহলে যাদেরকে প্রথম ডোজ দেওয়া হলো, সেই টিকাগুলো অপচয় হলো। সেরাম ইনস্টিটিউট বারবার আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছে যে, টিকা দেবে। তারা যদি আরও আগে আমাদেরকে জানাত, তাহলে আমরাও আরও আগে প্রথম ডোজ দেওয়া স্থগিত করতে পারতাম। কিন্তু, বারবারই তারা জানিয়েছে যে, আমরা টিকা পাব। এখন আমরা সবাই অসহায়। সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। দেখা যাক আমরা পাই কি না।’

‘এক্ষেত্রে সরকার যেটা করতে পারে, যাদের প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে, তাদের অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করতে পারে। যদি দেখা যায় যে, তাদের শরীরে যথেষ্ট অ্যান্টিবডি আছে, তাহলে তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে পারে। যেমন: যাকে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে, তাকে যদি ১২ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া না যায়, তাহলে তার অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করতে হবে। পরীক্ষায় যদি দেখা যায় যে, তার শরীরে যথেষ্ট অ্যান্টিবডি টাইটার রয়েছে, তাহলে তাদের আরও কিছু সময় পরে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যেতে পারে’, বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘করোনাভাইরাসের ভিন্ন ভ্যাকসিন দিয়ে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার বিষয়ে কার্যকারিতা এখনো প্রমাণিত নয়। কাজেই এখনই এটা দেওয়া ঠিক হবে না। এটা দিয়ে লাভ হবে কি না, সেটা গবেষণার বিষয়।’

অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ বলেন, ‘সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন আনার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। যাদেরকে শেষের দিকে ভ্যাকসিন দেওয়া হলো, ১২ সপ্তাহের আগেই আশা করছি তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার মতো ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। শুধু তো ভারত না, যুক্তরাষ্ট্রসহ সম্ভাব্য বিভিন্ন উৎস থেকেই অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন আনার চেষ্টা চলছে।’

‘ভিন্ন ভ্যাকসিন দিয়ে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে তো এখনো কোনো পরীক্ষা হয়নি। যে ভ্যাকসিনে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে, সেটা দিয়েই দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া উত্তম। আমরা অপেক্ষা করতে পারি। কারণ, ১২ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজটা দিলে ভালো। কিন্তু, এরপরেও তো দেওয়া যাবে। তা ছাড়া, প্রথম ডোজ যে দেওয়া হলো, সেটারও তো একটা কার্যকারিতা আছে’, যোগ করেন তিনি।

অধ্যাপক ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘১২ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দিতে পারলে ভালো। কিন্তু, এরপরেও তো দেওয়া যাবে। সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। আমরা আশা করছি শেষের দিকে যাদের প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে, তাদের ১২ সপ্তাহের মধ্যেই দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যাবে। কিন্তু, আরও কিছু সময় যদিও অপেক্ষা করতে হয়, সেটা করা যাবে। আরও কিছু সময় পরেও দেওয়া যেতে পারে।’

ডব্লিউএইচওর পরামর্শ ৮-১২ সপ্তাহের মধ্যে এই ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘১২ সপ্তাহের মধ্যে হলে ভালো। আমরা তো আট সপ্তাহ পর দিচ্ছিলাম দ্বিতীয় ডোজ। এখন হাতে ১২ সপ্তাহ সময় আছে। এর মধ্যেই ভ্যাকসিন চলে আসতে পারে। আর না আসলে কিছু সময় অপেক্ষা করাই যায়।’

ব্রিটিশ-বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম বলেন, ‘এখন বাংলাদেশে আট সপ্তাহ ব্যবধানে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হচ্ছে। যদি অ্যাস্ট্রাজেনেকার আরও ভ্যাকসিন পাওয়া না যায়, তাহলে ১২ সপ্তাহ পরেও দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যেতে পারে। যদি ১২ সপ্তাহ পরেও দেওয়া না যায়, তাহলে ১৪, ১৮ বা ২০ সপ্তাহ পরেও যদি পাওয়া যায়, তখন দিতে হবে। মানে যখন অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন জোগাড় করা যাবে, তখনই তাদেরকে দ্বিতীয় ডোজটা দিতে হবে। তবে, সেক্ষেত্রে প্রথম ডোজ নেওয়ার ১২ সপ্তাহ পর স্বাস্থ্যসুরক্ষা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। কারণ, তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ডোজের পর কার্যকারিতা তিন মাস পর্যন্ত ৭৬ শতাংশ। অর্থাৎ যারা প্রথম ডোজ নিয়েছে, ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত তারা সর্বোচ্চ ৭৬ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকারিতা পাবেন। তাই এই সময়ের পরে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া না গেলে সুরক্ষার জন্যে অতিরিক্ত সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে।’

‘১২ সপ্তাহের বেশি সময়ের পর দ্বিতীয় ডোজ নিলে যে কাজ করবে না কিংবা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেবে, বিষয়টি কিন্তু এমন নয়। ১২ সপ্তাহের বেশি সময়ের পর দ্বিতীয় ডোজ দিলেও ভ্যাকসিন কাজ করবে। সেক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ ৭৫-৮০ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকারিতা পাওয়া যাবে বলে আশা করা হয়। মানে ১২ সপ্তাহ পর দিতে পারলে ভালো। কিন্তু, ভ্যাকসিন জোগাড় করতে না পারলে আরও কিছু দেরি হলে কোনো অসুবিধা নেই’, বলেন তিনি।

এই মুহূর্তে ভিন্ন ভ্যাকসিন দিয়ে কোনোভাবেই দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া উচিত নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ যে তথ্য, সেই অনুযায়ী যে ভ্যাকসিন দিয়ে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে, সেটা দিয়েই দ্বিতীয় ডোজ দিতে হবে। ভিন্ন ভ্যাকসিন দিয়ে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আমাদের নেই। এটা নিয়ে গবেষণা চলছে। সেটার ফলাফল পেলে আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারব। কিন্তু, গবেষণা ছাড়াই যদি ভিন্ন ভ্যাকসিন দিয়ে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়, তাহলে “অ্যান্টিবডি ডিপেন্ডেন্ট এনহান্সমেন্ট”সহ (এডিই) বিভিন্ন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এর ফলে মৃত্যু-ঝুঁকিও থাকে। সেসব ভুলে গেলে চলবে না। এখন ভিন্ন ভ্যাকসিন দিয়ে দ্বিতীয় ডোজ দিলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় কি না, সেটা আগে গবেষণা করে দেখতে হবে। তারপর সিদ্ধান্তে আসতে হবে। এর আগে কোনোভাবেই ভিন্ন ভ্যাকসিন দিয়ে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যাবে না। আমি যতদূর জানি, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও বলেছে যে, ভিন্ন ভ্যাকসিন দিয়ে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে না।’

‘বাংলাদেশে চীনের সিনোফার্মের ও রাশিয়ান স্পুতনিক-ভি— এই দুটি ভ্যাকসিন আসার কথা চলছে। এর মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও স্পুতনিক-ভি একই প্লাটফর্মের ভ্যাকসিন। কিন্তু, তারপরেও যেহেতু এখনো কোনো গবেষণা নেই, তাই একটার দ্বিতীয় ডোজের পরিবর্তে আরেকটা ব্যবহার করা যাবে না। অ্যাস্ট্রাজেনেকা, মডার্না, ফাইজার কিংবা কেউই কিন্তু বলেনি যে তাদের ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে অন্য ভ্যাকসিন ব্যবহার করা যাবে। ডব্লিউএইচও-ও এখনো ভিন্ন ভ্যাকসিন দিয়ে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার কোনো পরামর্শ দেয়নি। গবেষণার ফল পাওয়ার আগে ডব্লিউএইচও কোনো পরামর্শ দেবেও না। কাজেই এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। একই ভ্যাকসিন দিয়ে আমাদেরকে দ্বিতীয় ডোজ দিতে হবে। যাদেরকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে, তাদেরকে একই ভ্যাকসিন দিয়ে দ্বিতীয় ডোজ দিতে হবে’, যোগ করেন ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম।

উল্লেখ্য, চুক্তি অনুসারে, বাংলাদেশকে ছয় ধাপে তিন কোটি টিকা দেওয়ার কথা ছিল সেরামের। জানুয়ারিতে ৫০ লাখ ডোজের প্রথম চালানটি ঠিকমতো দিলেও ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয় চালানে মাত্র ২০ লাখ টিকা পাঠায় সেরাম। এরপর থেকে আর কোনো চালানই পাঠায়নি তারা। আর ভারত থেকে উপহার হিসেবে ৩৩ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়া গেছে। ভারত সরকার ভ্যাকসিন রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরপরই ২৬ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ সরকার প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

Comments