‘চাকরিটা না থাকলে, মৃত্যু ছাড়া উপায় থাকবে না’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রশাসন ভবন থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা শেষে গাড়িতে উঠছেন শিক্ষা মন্ত্রনালয় গঠিত চার সদস্যের তদন্ত দল। গতকাল শনিবার সময় তখন বিকেল ৪টা ২৫ মিনিট।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন রাবি সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহান। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রশাসন ভবন থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা শেষে গাড়িতে উঠছেন শিক্ষা মন্ত্রনালয় গঠিত চার সদস্যের তদন্ত দল। গতকাল শনিবার সময় তখন বিকেল ৪টা ২৫ মিনিট।

ঠিক সেই সময় সম্প্রতি ‘অবৈধ’ নিয়োগে চাকরি পাওয়া ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা ঘিরে ধরেন তদন্ত দলের গাড়িটি। তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীরকে উদ্দেশ্য করে তাদেরকে হাতজোড় করতে দেখা যায়। সংবাদকর্মীদের ধারণকৃত এক ভিডিওতে পুরো ঘটনাটিই উঠে এসেছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, চাকরি পাওয়া ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা তদন্ত প্রধানকে উদ্দেশ্য করে বলছেন, ‘শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলনে আমরা জেল খেটেছি। আমাদের বিষয়টি দেখবেন, স্যার।’

এক নেতা বলেন, ‘আমাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে গেছে। আমাদের চাকরিটা জরুরি।’

‘এই চাকরিটা না হলে, আমরা আত্মহত্যা করতাম,’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

‘চাকরি না থাকলে, আমাদের মৃত্যু ছাড়া উপায় থাকবে না,’ বলেও আকুতি জানান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

এরপর গাড়ি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন সদ্য সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহানের ‘অবৈধ’ নিয়োগের ঘটনা তদন্তে আসা চার সদস্যের তদন্ত কমিটি।

এর আগে তদন্ত কমিটির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন অধ্যাপক আবদুস সোবহান। বের হওয়ার সময় ছাত্রলীগের নেতারা স্লোগান দিতে থাকেন, ‘সোবহান স্যার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই। সোবহান স্যারের কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ক্যাম্পাসে।’

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে, নিয়োগ পাওয়া ছাত্রলীগ নেতা ওমর ফারুক ফারদিন বলেন, ‘বিদায়ী উপাচার্যকে নিয়ে বিরোধীরা কেউ যেন কোনো কটূক্তি না করতে পারে, সেজন্য তাকে নিরাপত্তা দিতে গিয়েছিলাম আমরা।’

শিক্ষা মন্ত্রনালয় কর্তৃক ঘোষিত এই ‘অবৈধ’ নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ দিন কথা বলেছেন অধ্যাপক সোবহান।

তিনি বলেন, ‘যারা ডিজার্ভ করে তারাই নিয়োগ পেয়েছে। তাদের প্রত্যেকেই অনার্স-মাস্টার্স পাস এবং আওয়ামী পরিবারের সন্তান। দীর্ঘদিন ধরে তাদের জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে যাচ্ছিল৷ তাই আমি “মানবিক” কারণে “ছাত্রলীগ”কে চাকরি দিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘তাদের (ছাত্রলীগের) ক্রমাগত দাবি এবং চাপের পরিপ্রেক্ষিতে আমি বোধ করেছি যে, তাদের চাকরি পাওয়া উচিত। তাই তাদের চাকরি দিয়েছি। এখানে অন্য কেউ জড়িত নয়।’

সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও কেন নিয়োগ দেওয়া হলো? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী উপাচার্যের ক্ষমতাবলে এ নিয়োগ দিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি এটা যৌক্তিক, তাই আমি নিজ দায়িত্বে এটা দিয়েছি।’

উল্লেখ্য, এর আগে গত ৬ মে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান তার মেয়াদের শেষ কার্যদিবসে ১৩৭ জনকে নিয়োগ দেন।

এই নিয়োগকে অবৈধ উল্লেখ করে একই দিন সন্ধ্যায় তদন্ত কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গতকাল শনিবার তদন্ত কমিটির সদস্যরা ক্যাম্পাসে এসে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালামসহ নিয়োগ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বৈঠক করেন।

বৈঠক শেষে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘স্বল্প সময়ের মধ্যে পুরো বিষয়টি তদন্ত করে আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে চাই। এর জন্য আমরা সবার সঙ্গে কথা বলেছি, সমস্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছি। আমরা বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেব।’

 

আরও পড়ুন:

রাবিতে ‘অবৈধ’ নিয়োগের সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের

রাবি উপাচার্যের নিয়োগ দুর্নীতি: ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি রাবিতে

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ অবৈধ: শিক্ষা মন্ত্রণালয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মহানগর ও রাবি ছাত্রলীগের সংঘর্ষ

রাবি উপাচার্যের জামাতার বিরুদ্ধে ‘গোপন নথি’ চুরির অভিযোগ

‘দুর্নীতিবিরোধী’ শিক্ষকদের বাধার মুখে রাবি সিন্ডিকেট সভা স্থগিত

আজও রাবি প্রশাসন ও সিনেট ভবনে তালা ঝুলছে

উপাচার্য ভবনের পরে রাবি সিনেট ও প্রশাসন ভবনেও তালা

রাবি উপাচার্য ভবনে আবারও তালা!

রাবিতে দুর্নীতি-অনিয়ম: ইউজিসি প্রতিবেদন দিলেও সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করছে সরকার

ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদন একপেশে ও পক্ষপাতমূলক: রাবি উপাচার্য

এবার প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়েছে রাবি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা

উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন রাবি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা

ছাত্রলীগকে চাকরি দিতে ‘সর্বোচ্চ’ অগ্রাধিকারের আশ্বাস রাবি উপাচার্যের

রাবি উপাচার্যের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থে নির্মিত মাদ্রাসা

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

6h ago