করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে মোদি সরকারের অবহেলা ‘অমার্জনীয়’: ল্যানসেট
মহামারিতে বিপর্যস্ত ভারতের এ পরিস্থিতির জন্য নরেন্দ্র মোদির সরকারকে দায়ী করে কড়া সমালোচনা করেছে মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যানসেট। ল্যানসেটের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে সতর্ক করা সত্ত্বেও সেটি উপেক্ষা করেছে নরেন্দ্র মোদি প্রশাসন।
সিএনএন জানায়, ল্যানসেটের ওই সম্পাদকীয়তে করোনার সংক্রমণ নিয়ে মোদি সরকারের অবহেলা ‘অমার্জনীয়’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
রবিবার সকালে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে চার লাখ তিন হাজার ৭৩৮ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, একই সময় ৪০৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে শনাক্ত মোট রোগীর সংখ্যা দুই কোটি ২২ লাখ ৯৬ হাজার ৪১৪ জনে দাঁড়িয়েছে, মোট মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৩৯৮ জনের।
গতকাল শনিবার ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন জানান, ভারতে প্রায় নয় লাখ কোভিড -১৯ রোগীর অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে, যা মোট সক্রিয় রোগীর প্রায় এক চতুর্থাংশ। এ ছাড়া, আরও এক লাখ ৭০ হাজার রোগী ভেন্টিলেটরে আছেন বলে জানান তিনি।
ল্যানসেট জানায়, ভারত করোনা মোকাবিলায় ‘প্রাথমিক সাফল্য’ নিয়ে বিভ্রান্ত হয়েছে। ভারত সরকার জনসাধারণকে ধারণা দিয়েছে যে, দেশটি ভাইরাসকে পরাজিত করেছে, যা এক ধরনের আত্মতৃপ্তি। এর ফলে অপর্যাপ্ত প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও তারা সেটা নিয়ে মাথা ঘামায়নি। এপ্রিলের আগে কয়েক মাস সরকারের কোভিড -১৯ টাস্কফোর্স কোনো বৈঠকও করেনি।
এ ছাড়া, ভারতের টিকাদান কার্যক্রমও শুরুতে ধীরগতিতে ছিল। ‘সুপারস্প্রেডার ইভেন্টের ঝুঁকি’ সম্পর্কে সতর্কতা সত্ত্বেও, ভারতে ধর্মীয় উত্সব ও রাজনৈতিক সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
ল্যানসেটের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ‘ভারত সরকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করোনা ব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনা নিয়ন্ত্রণেই অতিরিক্ত সক্রিয় ছিল। তারা করোনা ব্যবস্থাপনা নিয়ে মোদির সমালোচনা করে লেখা টুইটগুলো মুছে ফেলতে টুইটারের কাছে আবেদন জানায়। সংকটের সময় সমালোচনা ও খোলামেলা আলোচনাকে দমন করতে মোদি সরকারের যে প্রয়াস, তা অমার্জনীয়।’
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের মূল্যায়ন অনুযায়ী, আগস্টের মধ্যেই ভারতে ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
ল্যানসেটের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ‘যদি এমনটা ঘটে, তবে একমাত্র মোদি সরকারই এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী থাকবে।’
শনিবার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ভারতে ৩ কোটি ৫০ লাখ মানুষ ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে। এর অর্থ হলো, ভারতের ১৩০ কোটি জনসংখ্যার প্রায় ২ দশমিক ৭ শতাংশকে সম্পূর্ণ টিকা দেওয়া হয়েছে।
ল্যানসেটের ওই সম্পাদকীয়তে ভারত সরকারের প্রতি ভ্যাকসিন সরবরাহ বাড়ানো ও ভ্যাকসিনের ন্যায়সঙ্গত বণ্টন ব্যবস্থা তৈরির জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া, ভারতে করোনা পরিস্থিতির সঠিক তথ্য প্রকাশ, জিনোমিক পরীক্ষা বাড়ানো ও জনসাধারণের কাছে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, গণজমায়েত বন্ধ, কোয়ারেন্টিনে থাকা ও পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা ব্যাপকভাবে প্রচারের আহ্বান জানিয়েছে ল্যানসেট।
সাময়িকীটি বলছে, মোদি প্রশাসনের ‘নিজেদের ভুল স্বীকার’ করে নেওয়ার ওপরই সংকট থেকে উত্তরণে ভারতের সাফল্য নির্ভর করছে।
Comments