কুড়িগ্রামে স্পিরুলিনা উৎপাদনে ৭ তরুণের সাফল্য

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে পুষ্টিগুণে ভরপুর সামুদ্রিক শৈবাল স্পিরুলিনা চাষে সাফল্য পেয়েছেন নিভৃত পল্লীর সাত তরুণ উদ্যোক্তা। এই সাত তরুণ কৃত্রিমভাবে স্পিরুলিনা উৎপাদন করে কর্মসংস্থান ও দেশ-বিদেশে রপ্তানির উজ্জ্বল সম্ভাবনার স্বপ্নও দেখছেন।
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে পুষ্টিগুণে ভরপুর সামুদ্রিক শৈবাল স্পিরুলিনা কৃত্রিমভাবে চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন সেখানকার সাত তরুণ উদ্যোক্তা। ছবি: স্টার

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে পুষ্টিগুণে ভরপুর সামুদ্রিক শৈবাল স্পিরুলিনা চাষে সাফল্য পেয়েছেন নিভৃত পল্লীর সাত তরুণ উদ্যোক্তা। এই সাত তরুণ কৃত্রিমভাবে স্পিরুলিনা উৎপাদন করে কর্মসংস্থান ও দেশ-বিদেশে রপ্তানির উজ্জ্বল সম্ভাবনার স্বপ্নও দেখছেন।

এই সাত তরুণ উদ্যোক্তা হলেন ফুলবাড়ী উপজেলার প্রাণকৃষ্ণ গ্রামের সেলিম রেজা, এরশাদ হোসেন, গোলাম ওয়াদুদ, জাকির সরকার, হাসান বাপ্পী, মাসুদ রানা ও ফাতেমা আক্তার মিতু।

প্রাণকৃষ্ণ গ্রামের এরশাদ হোসেনের বাড়ির উঠানে মাত্র তিন শতাংশ জমির উপর তৈরি করা হয়েছে স্বপ্নের গ্রিন হাউস। ‘ফুলবাড়ী এগ্রো’ নামে একটি সংগঠন খুলে সমাজ-সেবাসহ উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন এই তরুণরা।

উদ্যোক্তা সেলিম রেজা বলেন, ‘স্পিরুলিনা নামটি অধিকাংশ মানুষের কাছে অপরিচিত। স্পিরুলিনা হলো সাইনো ব্যাকটেরিয়া। এটি অতি ক্ষুদ্র নীলাভ সবুজ শৈবাল, যা সূর্যালোকের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন করে। বাংলাদেশে স্পিরুলিনাকে গ্রিন ডায়মন্ড বলা হয়ে থাকে। প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেলস সমৃদ্ধ প্রকৃতির আশ্চর্য এই খাবারটি অনেকে সামুদ্রিক শৈবাল হিসেবে চেনেন।’

’শক্তিবর্ধক এই সম্পূরক খাবারটি বর্তমানে কৃত্রিম জলাধারে বাণিজ্যিকভাবেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় উৎপাদন হচ্ছে। পুষ্টিহীনতা ছাড়াও রক্তশূন্যতা, রাতকানা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, আলসার, বাত, হেপাটাইটিস ও কান্তি দূরীকরণে বেশ উপকার,’ জানান তিনি।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্পিরুলিনা চাষের উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে বাকি ছয় জনকে নিজেই স্পিরুলিনার চাষ করার কৌশল শেখান সেলিম।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে পুষ্টিগুণে ভরপুর সামুদ্রিক শৈবাল স্পিরুলিনা কৃত্রিমভাবে চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন সেখানকার সাত তরুণ উদ্যোক্তা। ছবি: স্টার

তিনি বলেন, ‘গ্রিন হাউজের ভেতরে ১৯ হাজার লিটার পানি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন দুটি হাউসে ২৪ হাজার লিটার পানিতে স্বপ্নের স্পিরুলিনা চাষ করা শুরু করেছি। দুই হাউজে অক্সিজেন সরবরাহ চলছে অনবরত। পাম্পের সাহায্যে হাউজের মধ্যে পানি তুলে ছাকনি দিয়ে হারভেস্টিং পদ্ধতিতে শৈবালগুলো আলাদা করা হচ্ছে।

উদ্যোক্তা এরশাদ হোসেন জানান, গত ১১ মার্চ গ্রিণ হাউস তৈরি করে স্পিরুলিনার মাদার কালচার ছাড়া হয়েছে। প্রতি কেজি মাদার কালচার সরবরাহ করতে ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

‘আমরা গত এক বছরে মেডিসিন কিনতে খরচ করেছি প্রায় ৪৫ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা,’ বলেন এরশাদ।

তিনি জানান, ‘গত ৫ এপ্রিল থেকে স্পিরুলিনা আহরণ শুরু হয়েছে। প্রতি হাজার লিটারে সপ্তাহে গড়ে ১ কেজি করে সামুদ্রিক স্পিরুলিনা উৎপাদন হচ্ছে। আমরা বর্তমানে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা দামে প্রতি কেজি স্পিরুলিনা পাইকারি দরে বাজারজাত করছি।’

উদ্যোক্তা মাসুদ রানা বলেন, ‘আমরা ২৪ হাজার লিটার পানিতে কৃত্রিমভাবে স্পিরুলিনার বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করেছি। এটিই দেশে সর্ববৃহৎ স্পিরুলিনা চাষের উৎপাদন কেন্দ্র।’

‘দেশের বাজারে স্পিরুলিনার চাহিদা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, স্পিরুলিনার চাহিদা মেটাতে দেশের নাম করা ওষুধ কোম্পানিগুলোকে বাইরের দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশে স্পিরুলিনার চাষ হলে আমদানি নির্ভরতা কমে যাবে।

তিনি বলেন, স্পিরুলিনা উৎপাদন করে প্রতি মাসে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুর রশিদ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সাত তরুণের উদ্যোগে এই প্রথম স্পিরুলিনা চাষ শুরু হয়েছে কুড়িগ্রামে। উপজেলা কৃষি বিভাগ সাত তরুণ উদ্যোক্তার পাশে থাকবে।

Comments

The Daily Star  | English

Yunus seeks US support to rebuild Bangladesh, implement reforms

Tells US delegation that Bangladesh is in a significant moment in its history

50m ago