করোনাভাইরাস

দুই ধরনের টিকা নেওয়া যায়?

ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের দুই ধরনের টিকা নেওয়ার পর গ্রহণকারীর শরীরে ঠাণ্ডা অনুভূতি, ক্লান্তি ও মাথাব্যথার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে বলে জানা গেছে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল থেকে।

কোভিড-১৯ প্রতিরোধে দুই ধরনের টিকা মিলিতভাবে কতটা কার্যকর, তা এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি।

আজ বৃহস্পতিবার বিবিসি এক প্রতিবেদনে বিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটের বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছে।

একজনের শরীরে ভিন্ন ধরনের ভ্যাকসিন দেওয়ার বিষয়টি কতটা নিরাপদ ও কার্যকর— তা নিয়ে গবেষণা করছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন দলের অধ্যাপক ম্যাথিউ স্নেপ বলেন, ‘এটা আসলে একটি কৌতুহল উদ্রেককারী ফলাফল, অপরিহার্যভাবেই যেটা আমরা আশা করিনি।’

কেউ দুই ধরনের ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে গত ফেব্রুয়ারি থেকে গবেষণা শুরু হয়। এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল, দুই ডোজে দুই ধরনের ভ্যাকসিন নিলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বি কি না, করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে বেশি কার্যকরী কি না তা দেখা। সেই সঙ্গে ভ্যাকসিন সংকটে ক্লিনিকগুলোতে অন্য ভ্যাকসিন সরবরাহ করা।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন সরবরাহে অনিশ্চয়তা এবং রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনা থাকায় কানাডার অন্টারিও ও কুইবেক প্রদেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ভবিষ্যতে তারা দুই ধরনের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করবে।

ল্যানসেট মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত ওই প্রবন্ধের লেখক অক্সফোর্ডের গবেষকরা জানিয়েছেন, তারা ৮৩০ জনের ওপর এই গবেষণা চালিয়েছেন। যাদের বয়স ৫০-এর ওপরে। অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়ার পর যাদের ফাইজারের টিকা দেওয়া হয়েছে, তারা চার সপ্তাহ পর স্বল্পমেয়াদী ও হালকা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা জানিয়েছেন। ফাইজারের টিকা দেওয়ার পর যারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন, তারাও একই ধরনের কথা বলেছেন।

ধারণা করা হচ্ছে, আগামী জুনের মধ্যে গবেষণার পূর্ণ ফলাফল প্রকাশ করা হবে। তবে প্রাথমিকভাবে পাওয়া উপাত্তগুলো মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটে প্রকাশ করা হয়েছে।

শেষ পর্যন্ত পরীক্ষায় যদি ভিন্ন ধরনের দুই ডোজ টিকা নেওয়ার বিষয়টি নিরাপদ ও কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়, তবে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর সরকারের পক্ষে টিকাদান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া তুলনামূলক সহজ হবে।

কয়েকটি দেশে অবশ্য ইতোমধ্যেই ভিন্ন ধরনের দুই ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হচ্ছে। ফ্রান্সে প্রথম ডোজ হিসেবে যারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন, তাদের অনেককে দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে।

গবেষণার নেতৃত্বে থাকা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পেডিয়াট্রিক্স ও ভ্যাকসিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ম্যাথিউ স্নেপ আরও বলেন, ‘এটি প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে কি না, তা এখনও জানি না। তবে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সেটি জানতে পারব।’

তিনি আরও জানান, মিশ্র ভ্যাকসিনে তুলনামূলক বেশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও, তা কয়েকদিনের মধ্যেই স্বাভাবিক হয়ে যেতে দেখা গেছে। তবে, ভ্যাকসিন গ্রহণের পর কর্মস্থলে মানুষের অনুপস্থিতি বাড়তে পারে বলেও মনে করেন তিনি।

গবেষণার বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, যাদেরকে মিশ্র ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে, তাদের প্রায় ১০ শতাংশ অতি মাত্রায় ক্লান্তি অনুভব করার কথা জানিয়েছেন। অন্যদিকে যারা একই ধরনের টিকার দুই ডোজ নিয়েছেন, তাদের মাত্র তিন শতাংশ এ ধরনের ক্লান্তি অনুভব করছেন।

এ গবেষণা ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সীদের ওপর করা হয়েছে জানিয়ে ম্যাথু স্নেপ বলেন, ‘কম বয়সীদের ক্ষেত্রে মিশ্র টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আরও বেশি হতে পারে।’

এ ছাড়া, অক্সফোর্ডের গবেষকরা ১২ সপ্তাহের ব্যবধানে ভিন্ন ধরনের ভ্যাকসিনের দুই ডোজ দিয়েও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন। মডার্না ও নোভাভ্যাক্সের টিকা নিয়েও এ ধরনের গবেষণার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

গবেষকরা জানান, সব ধরনের ভ্যাকসিনের সঙ্গে মিশ্রণ সমানভাবে কার্যকর হয় না। তবে, লক্ষ্যবস্তু একই থাকলে এটি সম্ভব হতে পারে। করোনার ক্ষেত্রে এই অভিন্ন লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন। এই মিশ্র ব্যবস্থাটি হেটেরোলজিয়াস বুস্ট নামে পরিচিত।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh’s poverty jumps

Ratio of people living in extremely poor conditions has risen to 9.35% this year

1h ago