‘গরিবের আবার ঈদ কিসের’

বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাওয়া কৃষক ফারুক মিয়া। ছবি: স্টার

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার হাওরপাড়ে কাদিপুর ইউনিয়নের কৌলারশি এলাকা। আজ শুক্রবার ঈদের দিন দুপুর ১২টার দিকে দেখা হয় সাত বছর বয়সী নিপা বেগমের সঙ্গে। কিন্তু তার ভেতরে নেই ঈদের আমেজ।

দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী নিপা ওই এলাকার ফারুক মিয়ার সন্তান। অভাবের তাড়নায় মেয়েকে ঈদের পোশাক কিনে দিতে পারেননি হাকালুকি হাওরপাড়ের বর্গাচাষি ফারুক মিয়া।

নিপা জানায়, আজ সকালে শুধু সেমাই খেয়েছে। বাবা তাকে নতুন কাপড় কিনে দেয়নি।

নিপার বড় ভাই জুয়েল আহমেদ (২০) বলেন, ‘সকালে ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে একটু সেমাই খেয়েছিলাম। বৃষ্টির কারণে ঈদ মনে হচ্ছে না।’

ঈদ দিনটা কীভাবে কাটছে জানতে চাইলে নিপা ও জুয়েলের বাবা ফারুক মিয়া বলেন, ‘গরীবের আবার ঈদ কিসের। ধান পেয়েছি, কিন্তু দাম কম বলে বিক্রি করিনি। এক মন ধান বিক্রি করলে পাব ৮০০ টাকা। এই টাকা দিয়ে জীবিকার চাকা ঘোরে না। এক মণ ধান বিক্রির টাকা দিয়ে ১২ জন সদস্যের এই পরিবারে একদিনের বাজারই হয় না।’

দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে কোনো ত্রাণ পাননি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘অনেক চাপাচাপি করার পর কয়েকদিন আগে ৪৫০ টাকার একটি অনুদান পেয়েছিলাম।’

ফারুক মিয়া জানান, ধান বিক্রি করলে কেজি প্রতি ২০ থেকে ২২ টাকা পেলেও চাল কিনতে হয় ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে।

অশ্রুসিক্ত নয়নে তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো মানুষের কপালে ভালো খাবার বলতে কিছু নেই, প্রতিদিন যা খাই আজও তাই। সাধ থাকলেও তা পূরণ করার সাধ্য নেই। এক কেজি গরুর মাংস কিনতে গেলে যে টাকা লাগবে তার জন্য প্রায় এক মণ ধান বিক্রি করতে হবে।’

‘পরিবারে সারা মাসের ভাতের যোগান দেবো, নাকি সেই টাকায় একদিন আয়েশ করে পোলাও-মাংস খাবো?,’ যোগ করেন তিনি।

এলাকায় বিশুদ্ধ পানিরও সংকট আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার এক আত্মীয়ের সহায়তায় দুই বছর আগে একটি টিউবওয়েল স্থাপন করি। কিছুদিন ভালো চললেও সেটা নষ্ট হওয়ায় বিপাকে পড়ে গেছি। শুনেছি সরকার থেকে দরিদ্রদের জন্য নলকূপ স্থাপন করে দিচ্ছে। কিন্তু আমরা তো কিছুই পাই না। কেউ আমাদের খবরও রাখে না।’

এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা মোক্তাদির হোসেন বলেন, ‘হাওরপাড়ের বর্গা চাষিদের কারোই নিজস্ব হাল নেই। চাষ করতে গিয়ে অন্যের হাল, সেচ, মাড়াই, বীজ, সার, ওষুধের টাকা দিয়ে ফলনের চার ভাগের এক ভাগ ধানের দাম চলে যায়। ধান ঘরে তুলে দুই ভাগ দিতে হয় মালিককে। আর বাকিটা তার সারা বছরের সঞ্চয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আর এই সঞ্চয় পুঁজি করেই পরিবার নিয়ে তাদের বেঁচে থাকার লড়াই। শুরু ফারুক না, হাওরপাড়ের সব বর্গাচাষিরই একই অবস্থা।’

Comments

The Daily Star  | English

BNP will consider China's Teesta proposal 'positively' if elected: Fakhrul

"We talked about the Teesta programme and explained what we need. And they responded positively," says the BNP spokesperson

48m ago