ঈদের দিনও প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার পৌঁছেনি বিঘাই ইউনিয়নের ৪০১৩ পরিবারে
তালিকাভুক্ত হয়েও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতির ‘খামখেয়ালীপনার’ কারণে ঈদ ও করোনাকালীন সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া মানবিক সহায়তার অর্থ এখনও হাতে পায়নি পটুয়াখালী সদর উপজেলার ছোট বিঘাই ইউনিয়নে চার হাজার ১৩টি হতদরিদ্র পরিবার।
ওই ইউনিয়নের ছয় জন ইউপি সদস্য পটুয়াখালী প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের কাছে এই অভিযোগ তুলে ধরেন।
এ ছাড়াও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিএফ’র ১৩ বস্তা চাল নিয়েও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
ইউপি সদস্য ফারুক হাওলাদার, বাচ্চু প্যাদা, জালাল খান, আসলাম মৃধা, ফাতেমা বেগম ও হোসনেয়ারা বেগম সাংবাদিকদের জানান, ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলতাফ হোসেনের খামখেয়ালীপনার কারণে হতদরিদ্র পরিবারগুলোর কাছে ঈদ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া মানবিক সহায়তা বিতরণ করা হয়নি। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ১৫ দিন আগে জনপ্রতি ৪৫০ টাকা হারে ওই মানবিক সহায়তার বরাদ্দ করা হলেও ঈদের দিনও এসব হতদরিদ্রদের কাছে তা পৌঁছায়নি।
তালিকাভুক্ত ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, ‘চার মেয়ে ও এক ছেলেসহ সাত জনের সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছি। করোনাকালে এমনিতেই কাজ নেই। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া মানবিক সহায়তার ৪৫০ টাকা পেলেও কোনো রকমে ঈদটা করতে পারতাম। কিন্তু তাও পেলাম না।’
এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গত ৬ মে ঈদ সহায়তার অর্থের চেক হাতে পেয়ে ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু ব্যাংক খুচরা টাকা দিতে না পারায় যথাসময়ে ওই টাকা উত্তোলন করতে ও বিতরণ করতে পারিনি।’
ওই ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ট্যাগ অফিসার) সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র হাওলাদার বলেন, ‘ইউপি চেয়ারম্যান এ বিষয়ে আমাকে কিছুই জানাননি।’
পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘১৫ দিন আগেই প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তার অর্থের চেক ছাড় করা হয়েছিল। তবে কেন ওই ইউনিয়নে যথাসময়ে এ সহায়তার অর্থ বিতরণ করা হয়নি তার খোঁজ নিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ওই ইউনিয়নের ৪৫০ জন তালিকাভুক্ত জেলের মধ্যে দুমাসের ভিজিএফ‘র ৮০ কেজি করে মোট ৩৬ টন চাল বিতরণেও অনিয়মের অভিযোগ করেন ইউপি সদস্যরা।
অভিযোগ পেয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লতিফা জান্নাতি ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টির সত্যতা পান।
লতিফা জান্নাতি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে সরেজমিনে চাল পরিমাপ করে ১৩ বস্তা চাল কম পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন বলেন, ‘পটুয়াখালী থেকে ট্রলারে করে এই চাল আনতে হয়েছে এবং ট্রলারে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত হওয়ায় সব চাল গোডাউন থেকে আনা যায়নি।’
তবে চেয়ারম্যানের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে ট্যাগ অফিসার সুভাষ চন্দ্র হাওলাদার বলেন, ‘আমি উপস্থিত থেকে গোডাউন থেকে ৩৬ টন চাল ট্রলারে তুলে দিয়েছি। চাল কম হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
Comments