নদীতে মাছ নেই, পেশা ছাড়ছেন জেলেরা

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে জোড়গাছ দাসপাড়া এলাকায় জাল শুকাচ্ছেন জেলেরা। ছবি: এস দিলীপ রায়

দাসপাড়ার মোহন চন্দ্র দাস, পুলক দাস, রমণী দাসসহ আরও কয়েকজন জেলে জাল ছেড়ে দিয়ে ইজিবাইক চালাচ্ছেন। তাদের মতো আরও অনেক জেলে প্রস্তুতি নিয়েছেন অন্য পেশায় গিয়ে জীবিকা নির্বাহে।

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ের জোড়গাছ দাসপাড়া এলাকায় চলছে জেলেদের নিজেদের দীর্ঘদিনের পেশা ছেড়ে যাওয়ার হিড়িক।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে চর যাত্রাপুর এলাকার লাল্টু চন্দ্র দাস পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে এখন দিনমজুর। ছবি: এস দিলীপ রায়

জোড়গাছ দাসপাড়ার জেলে নবীন চন্দ্র দাস (৫৬) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, নদ-নদীতে তেমন মাছ নেই। জালে মাছ উঠছে না। তারা নিরুপায় হয়ে পড়েছেন। সংসার ঠিক মতো চালাতে পারছেন না মাছ ধরে। তাই বাধ্য হয়েই অনেকে পৈতৃক পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় যোগদান করে আয় করছেন। অনেকেই প্রস্তুতি নিয়েছেন পৈতৃক পেশা ছেড়ে দেবেন।

‘নদ-নদীতে মাছ না থাকায় আমাদের কষ্ট বেড়ে গেছে। আমাদেরকে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে,’ তিনি বলেন।

‘গেল দুই মাস ধরে ইজিবাইক চালিয়ে আয় করছি। আগে নদ-নদীতে জাল দিয়ে মাছ ধরে সংসার চালাতাম। জালের সাথে আমাদের নিবিড় সম্পর্ক কিন্তু জাল দিয়ে আর সংসার চালানো যাচ্ছে না,’ জানালেন জোড়গাছ দাসপাড়ার আপন চন্দ্র দাস (৩৬)।

চিলমারী উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র পাড়ে রমনা দাসপাড়া এলাকার যতীন চন্দ্র দাস (৭৭) ডেইলি স্টারকে বলেন, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলায় ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, জিঞ্জিরামসহ ২৬টি নদ-নদী পাড়ে প্রায় ২০০ জেলে পল্লী রয়েছে। এসব জেলে পল্লীতে প্রায় ৩০০০ পরিবারের বসত।

একসময় নদ-নদীতে প্রচুর মাছ ছিল, খাল-বিল ছিল উন্মুক্ত তাই জেলে পরিবারগুলোর কর্মসংস্থানের সুযোগ ছিল। তাদের ঘরে অভাব ছিল না। এখন প্রভাবশালীরা খাল-বিলগুলো লিজ নিয়ে মাছ চাষ করেন আর নদ-নদীতে নেই মাছ তাই দুর্দিন যাচ্ছে জেলে পরিবারগুলোর।

’আমার চার ছেলের সবাই জাল দিয়ে মাছ ধরতো। এখন দুই ছেলে জাল ছেড়ে দিয়ে অন্য কাজ করছে। অপর দুই ছেলে বলছে তারাও জাল ছেড়ে দেবে,’ বলেন তিনি।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তাপাড়ে কালমাটি দাসপাড়া এলাকার নগেন্দ্র দাস (৪৮) বলেন, ‘পৈতৃক পেশা আকরে ধরে বাঁচতে চান তিনি কিন্তু নদ-নদীতে মাছ না থাকায় জাল দিয়ে তাদের সংসার আর চলে না।’

‘নদ-নদীগুলো বছরের বেশিরভাগ সময় শুকনো থাকায় মাছের প্রজনন ঘটে না আর সেজন্য আশানুরূপ মাছও পাওয়া যায় না। আমি প্রস্তুতি নিয়েছি জাল ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় যাবো,’ যোগ করেন তিনি।

লালমনিরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘দিন দিন পেশাদার জেলের সংখ্যা কমে আসছে। জেলেরা কারেন্ট জাল দিয়ে মাছের পোনা শিকার করার কারণে নদ-নদীতে মাছের বৃদ্ধি হয় না। তাদেরকে সচেতন করা হচ্ছে। সরকারিভাবে যতটুকু প্রণোদনা আসে ততটুকু তাদের মাঝে বণ্টন করা হয়।’

আর প্রভাবশালীদের কারণে জেলেরা সরকারি খাল-বিলের লিজও নিতে পারেন না বলেও জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
Fuel prices cut

Fuel prices cut by Tk 1 per litre

Tk 104 for diesel and kerosene, Tk 121 for petrol, and Tk 125 for octane

16m ago