মালদ্বীপে আটকা পড়েছে বলিউড তারকারা
ভারতজুড়ে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ধাক্কায় বলিউডের বেশ কিছু তারকা মালদ্বীপে গিয়েছিলেন ছুটি কাটাতে। তবে মালদ্বীপেও এখন করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ভ্রমণ নিষিদ্ধ করেছে ভারত মহাসাগরের দ্বীপ রাষ্ট্রটি। ফলে আপাতত দেশে ফিরতে পারছেন না ছুটি কাটাতে গিয়ে আটকে পড়া ভারতীয়রা।
গত মার্চের মাঝামাঝিতে ভারতে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আভাস পেয়েই দেশ ছাড়েন অনেক বলিউড তারকা। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় আলিয়া ভাট, শ্রদ্ধা কাপুর, জাহ্নবী কাপুর, দিশা পাটানি ও সারা আলী খানের মতো তারকাদের সমুদ্র সৈকত, বিলাসবহুল রিসোর্ট ও সুইমিং পুলসহ মালদ্বীপের নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে।
শুধু তারকারাই নন, এ বছর মালদ্বীপের পর্যটকদের একটা বড় অংশই ভারতীয়। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার ভারতীয় মালদ্বীপে ঘুরতে গেছেন।
সিএনএন জানিয়েছে, করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ওপর মালদ্বীপ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। মালদ্বীপের পর্যটন ও অভিবাসন মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্ত গত বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর করা হয়েছে। বলা হয়েছে, অন্তত ১৪ দিনের মধ্যে যারা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো ভ্রমণ করেছেন, তারাও মালদ্বীপে প্রবেশ করতে পারবেন না।
গত কয়েক মাস ধরে বলিউড তারকাদের স্বর্গে পরিণত হয়েছিল ব্যয়বহুল পর্যটন রাষ্ট্র মালদ্বীপ। অক্সিজেন ও আইসিইউ সংকটে বিপর্যস্ত ভারতীয়রা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢুকলেই মালদ্বীপের সৈকতে কোনো না কোনো বলিউড তারকার হাস্যোজ্জ্বল ছবি দেখতে পেয়েছেন। চরম দুর্যোগের সময় দেশ ছেড়ে তাদের মালদ্বীপে আয়েশ করতে দেখে উঠেছে সমালোচনার ঝড়ও।
তবে চাইলেও আপাতত নতুন করে আর কারও মালদ্বীপের সমুদ্রের নীলে হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ হচ্ছে না।
করোনা পরিস্থিতি লাগামহীন হতেই বিভিন্ন দেশ ভারতের সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়। এ অবস্থায় চাপ বাড়ায় ভারত থেকে মালদ্বীপের ফ্লাইটের ভাড়া চার গুণেরও বেশি বেড়ে যায়। ভারতভিত্তিক চার্টার্ড উড়োজাহাজ কোম্পানি ক্লাব ওয়ার এয়ার-এর সিইও রাজন মেহরা সিএনএনকে জানিয়েছেন, এপ্রিল মাসে চার্টার্ড ফ্লাইটে মালদ্বীপ যাওয়ার জন্য জনপ্রতি ৬৫ হাজার ডলারেরও বেশি গুনতে হয়েছে ভারতীয়দের।
ভারতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন। মৃতের সংখ্যা এতোই বেশি যে তাদের সৎকার করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। কঠিন এ পরিস্থিতিতে বলিউড তারকারা এগিয়ে আসবেন বলে আশা ছিল ভক্তদের। কিন্তু তা না করে তাদের গা বাঁচিয়ে মালদ্বীপে ছুটি কাটাতে দেখে ক্ষুব্ধ হয়েছেন তারা। দরিদ্র ভারতীয়দের পাশে না দাঁড়িয়ে তারকারা নিজেদের সম্পদের প্রদর্শনীতে ব্যস্ত বলে তারা হতাশা প্রকাশ করেছেন।
বিখ্যাত অভিনেতা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকীসহ তারকাদের অনেক সহকর্মীও তাদের কাজকে দায়িত্বজ্ঞানহীন বলে অভিহিত করেছেন।
যেসব তারকা মালদ্বীপ বা অন্য দেশে ছুটি কাটাতে যাননি, তাদের নিয়েও সমালোচনা থেমে নেই ভক্তদের। সমালোচকরা বলছেন, বিপুল সংখ্যক ভক্ত থাকার সুবাদে চাইলেই তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে করোনা সংক্রান্ত সাহায্যের আবেদন জানাতে পারতেন। মানুষকে সংগঠিত করতে পারতেন। কিন্তু তাদের বেশিরভাগকেই এ ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি।
তবে মালদ্বীপে ছুটি কাটিয়ে এলেও আলিয়া ভাটকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার হেল্পলাইন নম্বর শেয়ার করতে দেখা গেছে। মে মাসের শুরুর দিকে আলিয়াসহ অন্য বলিউড তারকাদের ভার্চুয়াল অর্থ সংগ্রহ তহবিলের সঙ্গে যুক্ত হতে দেখা গেছে। ‘আমি ভারতের জন্য শ্বাস নিই’ নামের এই তহবিল থেকে ২০ লাখ মার্কিন ডলার ভারতের করোনা তহবিলে জমা হয়েছে।
করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারত যখন বিপর্যস্ত, বলিউড তারকারা তখন বাস্তব জীবনের তারকা হয়ে এগিয়ে আসবেন- এমনটাই আশাই ছিল ভক্তদের। কিন্তু, তা না করে ছুটির আমেজে মালদ্বীপের সমুদ্র সৈকতে ঘুরে বেড়িয়েছেন অনেক তারকা। ভক্তদের প্রত্যাশা বা সামাজিক দায়বদ্ধতা- কোনোটিরই ধার ধারেননি তারা।
Comments