থেমে যেতে পারে টিকাদান কর্মসূচি

ভ্যাকসিন আনতে এখনো নতুন চুক্তি করতে পারেনি সরকার
স্টার ফাইল ছবি

কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের মজুদ দ্রুত শেষ হয়ে আসছে এবং হঠাৎ করেই দেশব্যাপী চলমান টিকাদান কর্মসূচি থেমে যেতে পারে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে হাতে থাকা অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের ছয় লাখ ডোজ আর এক সপ্তাহের মধ্যেই শেষ হয়ে যেতে পারে এবং এই বিষয়টি প্রতিহত করার জন্যে সরকার এখনো কোনো সম্ভাব্য সরবরাহকারীর সঙ্গে চুক্তি সই করতে পারেনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা.এ বি এম খুরশীদ আলম দ্য ডেইলি স্টারকে গতকাল বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু, এখনো আমরা ভ্যাকসিনের উৎসগুলোর কাছ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাইনি। আমরা যদি খুব দ্রুত সাড়া না পাই, তাহলে আমাদের টিকাদান কর্মসূচি স্থগিত রাখতে হবে।’

ভ্যাকসিনের সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে সরকার গত ২৬ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া বন্ধ রেখেছে। টিকা দেওয়ার অনলাইন নিবন্ধণ প্রক্রিয়া ৫ মে থেকে বন্ধ আছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক বলেছেন, ‘রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও কুষ্টিয়া জেলায় ভ্যাকসিনের স্বল্পতার কারণে টিকাদান কর্মসূচি স্থগিত করে রাখা হয়েছে।’ দেশজুড়ে স্থাপিত দুই হাজার ৫০০ টিকাদান কেন্দ্রের কয়টিতে কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে, তা তিনি জানাতে পারেননি।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিটিউট বাংলাদেশের কেনা ভ্যাকসিনের চালান পাঠাতে ব্যর্থ হওয়ার পর দেশব্যাপী শৃঙ্খলভাবে চলতে থাকা টিকাদান কর্মসূচি বিঘ্নিত হয়।

জানুয়ারি থেকে শুরু করে ছয় মাস ধরে প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ভ্যাকসিনের চালান পাঠানোর কথা ছিল সেরামের। সেরাম চুক্তি অনুযায়ী প্রথম ৫০ লাখ ডোজ পাঠিয়েছে, কিন্তু এরপর ফেব্রুয়ারিতে তারা মাত্র ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাঠায়। এরপর থেকে আর কোনো চালান আসেনি বাংলাদেশে।

ইতোমধ্যে ভারত সরকার অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর উদ্দেশ্যে ভ্যাকসিন রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ দিয়েছে।

বাংলাদেশে সেরামের স্থানীয় এজেন্ট বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা সেরামের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু, তারা পরবর্তী চালান কবে আসতে পারে সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।’

কোভ্যাক্স নামের বৈশ্বিক প্রকল্প থেকে বাংলাদেশের এ বছর ছয় কোটি ৮০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়ার কথা। ভ্যাকসিনের এই জোটটি আগে ঘোষণা করেছিল যে, মে থেকে জুনের মধ্যে বাংলাদেশ এক কোটি ২৭ লাখ ভ্যাকসিন পাবে। কিন্তু, গতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশ কোভ্যাক্সের কাছ থেকে চালান পাঠানোর বিষয়ে কোনো তথ্য পায়নি।

এ ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে সরকার টিকার বিকল্প উৎসের খোঁজে নামে এবং ভ্যাকসিনের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্যে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। কিন্তু, সেক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সরকার অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত।

বাংলাদেশে ভ্যাকসিনের যৌথ-উৎপাদনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু, সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে টিকার ডোজগুলো কিনে টিকাদান কর্মসূচিকে চলমান রাখার বিষয়ে বেশি আগ্রহী।

মন্ত্রী বলেছেন, ভ্যাকসিন উৎপাদন একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। ‘যারা আবেদন (ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্যে) করেছে, তাদের (প্রতিষ্ঠান) বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর আমাদেরকে একটি প্রতিবেদন পাঠাবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি জানানো হবে’, বলেন তিনি।

তিনি জানান, প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন শুরু করার জন্যে চার থেকে পাঁচ মাস সময় লাগবে।

‘আমরা এখন ভ্যাকসিন কেনার দিকে নজর দিচ্ছি’, বলেন তিনি।

সরকার বিভিন্ন পর্যায়ে ১৬ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে গণটিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মোট জনসংখ্যার মাত্র দুই শতাংশ মানুষ অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের দুই ডোজই পেয়েছে, আর চার শতাংশেরও কম মানুষ গত রোববার পর্যন্ত টিকার একটি ডোজ পেয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) গত মাসে জানিয়েছে, বিশ্বের ধনী রাষ্ট্রগুলো কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের বৈশ্বিক সরবরাহের সিংহভাগটি পেয়েছে, আর দরিদ্র দেশগুলো এক শতাংশেরও কম ভ্যাকসিন পেয়েছে।

ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক ড. টেড্রস আধানম গেব্রিয়াসুস বলেছেন, ‘বিশ্বজুড়ে বিতরণ করা ৭০০ মিলিয়ন ডোজের মাঝে ৮৭ শতাংশ পেয়েছে উচ্চ ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো। আর নিম্ন আয়ের দেশগুলো পেয়েছে মাত্র শূন্য দশমিক দুই শতাংশ।’

মেডিকেল শিক্ষার্থী ও নার্সদের জন্যে সিনোফার্ম

১২ মে উপহার হিসেবে পাওয়া চীনের সিনোফার্ম ভ্যাকসিনের পাঁচ লাখ ডোজ মেডিকেল শিক্ষার্থী ও নার্সদের টিকা দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হবে।

খুরশীদ আলম বলেন, ‘আমাদেরকে এটা নিশ্চিত করতে হবে যাতে মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা, বিশেষত যারা পঞ্চম বর্ষে আছে, তারা যেন দ্রুত টিকা পায়। আমরা এই মহামারি পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই মেডিকেল শিক্ষার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টি করতে চাই না। কারণ, তারাই আমাদের ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা।’

ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Türk concerned over changes in Bangladesh's legislation banning activities of parties

"This [the changes in legislation] unduly restricts the freedoms of association, expression, and assembly," says the UN high commissioner for human rights

56m ago