দুষ্কৃতিকারী বা জঙ্গিগোষ্ঠী বোমা রেখেছে: নারায়ণগঞ্জের এসপি
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে শক্তিশালী আইইডি বোমা উদ্ধার ও নিষ্ক্রিয়ের ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করবে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)।
পুলিশের উদ্দেশে কিংবা নিজেদের কার্যক্রমের জানান দিতে দুষ্কৃতিকারী বা জঙ্গিগোষ্ঠী বোমা রেখেছে বলে ধারণা করছেন পুলিশ সুপার।
আজ বুধবার ভোর সাড়ে ১২টায় বোমা উদ্ধার ও নিষ্ক্রিয়ের ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফয়সাল আলম বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এ মামলায় এখনো পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করা যায়নি। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে দুষ্কৃতিকারী বা জঙ্গিগোষ্ঠী এটি করতে পারে। পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশে মামলাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এটিইউ।’
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি কে বা কারা, কেন এখানে বোমা রেখেছে। দুষ্কৃতিকারী বা কোনো জঙ্গি সংগঠন হতে পারে। যেহেতু এটিইউ তদন্ত করছে, সেহেতু দ্রুতই এ সম্পর্কে জানানো যাবে।’
বোমা রেখে যাওয়ার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘পুলিশকে উদ্দেশ্যে করে এবং পুলিশের মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য রেখে যেতে পারে। আবার যেহেতু সেখানে অনেক মানুষ থাকে, সেহেতু বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেদের জানান দেওয়াও হতে পারে, যে জঙ্গিরা তাদের কার্যক্রম করছে। অথবা জনগণকে ভয় দেখানোর জন্যেও হতে পারে।’
এসপি বলেন, ‘বোমা যেখানে রেখেছে, বিস্ফোরণ হলে খুব বেশি ক্ষতি হতো না। কারণ দুটি দেয়ালের মাঝে রেখেছে। আর একটি মাত্র বোমা। আমরা ধারণা করছি, উপস্থিতি জানান দেওয়াই তাদের উদ্দেশ্য ছিল। তারপরও এটিইউ তদন্ত শেষে ভালো বলতে পারবে।’
এর আগে, ঢাকায় বিভিন্ন সময় পুলিশ বক্সের কাছে বোমা উদ্ধার কিংবা হামলা হয়েছে, এটা কি তারই অংশ? জবাবে তিনি বলেন, ‘সেই অপতৎপরতার একটা অংশ এর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারে।’
নারায়ণগঞ্জে জঙ্গি আছে? জানতে চাইলে পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বলেন, ‘আমরা নারায়ণগঞ্জকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিই। এখানে অনেক লোকের বাস। এখানে যে জঙ্গি নেই, এ কথা বলা যাবে না। তবে জঙ্গিরা যেন কোনো বড় ধরনের অপতৎপরতা না করতে পারে, সেজন্য আমাদের কার্যক্রম চলমান আছে।’
নারায়ণগঞ্জে প্রবেশ ও বের হওয়াসহ ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে ঢাকায় প্রবেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট সাইনবোর্ড মোড়। আজ সকালে সরেজমিনে সাইনবোর্ড এলাকায় দেখা যায়, সার্বক্ষণিক জনগণ ও যানবাহনের ভিড়। কোথাও কোথাও ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের। গত ১৭ মে সাইনবোর্ড মোড়ে জেলা পুলিশের ট্রাফিক বক্সের পাশে শক্তিশালী ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বোমা নিষ্ক্রিয় করা হলেও এ বিষয়ে তেমন কোনো ভয়ভীতি দেখা যায়নি স্থানীয়দের মধ্যে। স্বাভাবিক সময়ের মতোই চলাফেরা করছেন সবাই।’
শ্যামলী পরিবহনের টিকিট কাউন্টারের কর্মী সজিব আহমেদ বলেন, ‘ভয়ের কী আছে। বোমা ছিল নিষ্ক্রিয় করে ফেলেছে। সেসময় মানুষ কম ছিল, কেউ এমন গুরুত্ব দেয়নি, তাই রেখে যেতে পেরেছে। এখন পুলিশের পাশাপাশি আমরাও নজর রাখি, কেউ আবার ব্যাগ রেখে গেলো কিনা।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট আসিফ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সেদিন বোমা উদ্ধার হওয়ার পর মানুষের মধ্যে যেন আতঙ্ক ছড়িয়ে না যায়, সেজন্য বুঝতে দিইনি। যার জন্য মানুষের মধ্যে তেমন কোনো ভয় নেই। আর যারা জানে, তারা একটু দূরে থাকে।’
বোমা দেখে একটু ভয় পেয়েছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। ঈদের ছুটি শেষে অনেকেই গ্রাম থেকে ফিরছেন, ফলে সাইনবোর্ড এলাকায় ভিড় বেশি। তাই আমরা সন্দেহভাজনদের চেক করছি। অন্যথায় ভিড় করতে দিচ্ছি না।’
পুলিশ সার্জেন্ট আসিফ হোসেন আরও বলেন, ‘সাইনবোর্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। সেখানে আমরা সাত জন দায়িত্ব পালন করি। ঈদকে ঘিরে চার জন অতিরিক্ত যোগ হয়েছেন। তবুও এ সংখ্যা এখানে পর্যাপ্ত নয়।’
সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টায় উপজেলার সাইনবোর্ড মোড়ে জেলা পুলিশের ট্রাফিক বক্সের পাশে একটি ব্যাগে বোমা সাদৃশ্য বস্তু দেখতে পান সার্জেন্ট আসিফ হোসেন।
তিনি ঊর্ধ্বতনদের জানালে ৪টা থেকে পুলিশ বক্স এলাকা চারদিক থেকে ঘেরাও করে রাখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে ডিএমপির বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট এসে রোবট দিয়ে রাত পৌনে ৮টায় নিরাপদে একটি বোমা নিষ্ক্রিয় করে।
পরে পুলিশ জানায়, এটি ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস বোমা। এর বিস্ফোরণ স্থলের ২৫ মিটারের মধ্যে যারা থাকবে, তাদেরই ভয়াবহ ক্ষতি হবে বলে ধারণা বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটের।
আরও পড়ুন:
Comments