ইসি থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাচ্ছে এনআইডি সেবার দায়িত্ব

জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংক্রান্ত সব সেবা প্রদানের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তরিত হতে যাচ্ছে।
ফাইল ছবি

জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংক্রান্ত সব সেবা প্রদানের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তরিত হতে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (পিএমও) এনআইডি সংক্রান্ত সব সেবার দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা সুরক্ষা সেবা বিভাগের কাছে হস্তান্তর করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছে।

সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব হুমায়ুন কবির খন্দকার গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে পিএমও থেকে সোমবারে ইস্যু হওয়া চিঠিটির অনুলিপি পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন।

‘পিএমও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছে। বেশ কিছু আইন ও নিয়মকানুন বদলাতে হবে এবং এরপর দায়িত্বগুলো আমাদেরকে কাছে স্থানান্তর করা হবে’, গতকাল বলেছেন মোকাব্বির হোসেন।

হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন, তিনি মঙ্গলবার বিকেলে চিঠিটির অনুলিপি পেয়েছেন। ‘আমরা এ বিষয়টিকে শিগগিরই পর্যালোচনা করব।’

ইসি দায়িত্ব পরিবর্তনের বিষয়টি জানত কি না, জানতে চাইলে হুমায়ুন বলেন, ‘আমি এর (চিঠি পাওয়ার) আগে এ বিষয়টি সম্পর্কে জানতাম না।’

বর্তমানে এনআইডি সংক্রান্ত সেবাগুলো ইসি প্রদান করছে, যারা ১৮ বছরের বেশি বয়সী ১০ কোটি নাগরিকের তথ্য সমৃদ্ধ এনআইডি ডাটাবেসটি তৈরি করেছে।

এনআইডি সেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে— নাগরিকদেরকে নিরাপদ জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু করা ও এ সংক্রান্ত সব কার্যক্রমের ব্যবস্থাপনা করা। যেমন: জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন ডাটাবেসকে হালনাগাদ রাখা এবং প্রযোজ্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানদেরকে ব্যক্তি-পরিচয় যাচাই সেবা দেওয়া।

২০১০ সালে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইনটি পাস হওয়ার পর একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ এনআইডি বিভাগ তৈরি করা হয়েছিল। ২০০৭-২০০৮ সালে বাংলাদেশে ভোটার তালিকা হালনাগাদের অংশ হিসেবে ছবিযুক্ত এনআইডি কার্ড ইস্যু করা শুরু হয়েছিল।

পিএমওর চিঠিতে বলা হয়েছে, এনআইডি কার্যক্রম নির্বাহী বিভাগের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বিভিন্ন দেশের উদাহরণের আলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন সুরক্ষা সেবা বিভাগকে এই দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।

এতে আরও বলা হয়েছে, এ প্রক্রিয়ার জন্য জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন ২০১০ এর প্রয়োজনীয় সংশোধন করা যেতে পারে। যেমন: ‘নির্বাচন কমিশন’ শব্দটির পরিবর্তে ‘সরকার’ বসানো যেতে পারে।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এ সেবা সংক্রান্ত বর্তমান অবকাঠামো ও জনবলকে সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তরের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জুলাইয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পিএমওর কাছে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, এনআইডি সংক্রান্ত সব কার্যক্রম মন্ত্রণালয়ের কাছে স্থানান্তর করা উচিত।

প্রত্যুত্তরে পিএমও আগস্টে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে এ বিষয়টির ওপর তাদের মতামতসহ একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় এবং এর জন্য একটি সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।

গত বছরের নভেম্বরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ পিএমওর কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে এনআইডি সংক্রান্ত সেবা দেওয়ার জন্যে একটি আলাদা বিভাগ তৈরি করার প্রস্তাব দেয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা এনআইডি সংক্রান্ত দায়িত্বগুলো গ্রহণ করতে চান। কারণ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার এনআইডি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তথ্য নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। পাসপোর্ট ইস্যু করার জন্যেও এনআইডি তথ্য প্রয়োজন হয়।

ইসির উদ্বেগ

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার কাছে দেওয়া একটি স্মারকলিপিতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন গতকাল ইসি থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

তারা একইসঙ্গে এনআইডি সেবাগুলোকে ইসির অধীনেই রাখার দাবিও জানায়।

স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ‘এনআইডি সেবাগুলো ইসি থেকে দেওয়া হবে, এটাই যৌক্তিক, কারণ ভোটার তালিকার ডাটাবেস ব্যবহার করেই এনআইডি কার্ড তৈরি করা হয়’।

ভোটার লিস্ট ও এনআইডি কার্ড তৈরির কাজগুলো পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, যা জনগণের অর্থও বাচায়।

এনআইডি কার্ডগুলো ভোটার তালিকা অনুযায়ী তৈরি করা হয়।

অবাধ, মুক্ত ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্ভুল ও সঠিক ভোটার তালিকা তৈরি করার সাংবিধানিক দায়িত্বটি নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হয়েছে।

‘ভোটার তালিকার সার্ভারের দায়িত্ব অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করলে ইসির কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে’, স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে।

ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Unrest emerges as a new threat to RMG recovery

The number of apparel work orders received by Bangladeshi companies from international retailers and brands for the autumn and winter seasons of 2025 dropped by nearly 10 percent compared to the past due to major shocks from the nationwide student movement and labour unrest in major industrial belts over the past two and half months.

9h ago