সাত বছরেও কালুরঘাট সেতুর নকশা চূড়ান্ত হয়নি

সরকার ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার মাধ্যমে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে একটি নতুন সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে, সাত বছরেরও বেশি সময় পার হলেও বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সেতুটির নকশার বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। এটি একটি ডেডিকেটেড সিঙ্গেল ট্র্যাক রেলসেতু কিংবা একটি ডাবল ট্র্যাক অথবা একটি সড়ক-কাম-রেলসেতু হবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
স্টার ফাইল ফটো

সরকার ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার মাধ্যমে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে একটি নতুন সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে, সাত বছরেরও বেশি সময় পার হলেও বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সেতুটির নকশার বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। এটি একটি ডেডিকেটেড সিঙ্গেল ট্র্যাক রেলসেতু কিংবা একটি ডাবল ট্র্যাক অথবা একটি সড়ক-কাম-রেলসেতু হবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

যদিও বাংলাদেশ রেলওয়ে (বিআর) গত বছরের অক্টোবরে সিঙ্গেল ট্র্যাক রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিলেও এখন এটি নির্ভর করছে নতুন একটি সমীক্ষার ওপর। 

প্রথম সম্ভাব্যতা সমীক্ষার ৬ বছর পর এখন আবার সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করতে যাচ্ছে বিআর। ফলে, এটি সিঙ্গেল ট্র্যাক রেল কাম সড়ক সেতু কিংবা ডাবল ট্র্যাক রেল কাম সেতু হবে তা এ সমীক্ষার ওপর নির্ভর করবে বলে রেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের উপস্থিতিতে গতকাল বুধবার রেল ভবনে অনুষ্ঠিত সভায় নতুন করে সম্ভাব্য সমীক্ষা করার এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা, বিআর এবং কোরিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগিতা তহবিল (ইডিসিএফ) বৈঠকে অংশ নেয়।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মাধ্যমে রেলপথ মন্ত্রণালয় এখন ইডিসিএফকে এই সমীক্ষা চালানোর জন্য একটি চিঠি দেবে এবং সমীক্ষা শুরুর পর তা সম্পন্ন হতে ছয় থেকে সাত মাস সময় লাগতে পারে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হওয়ায় কর্ণফুলী নদীর উপরে ব্রিটিশ-যুগের সেতুটি ব্যবহার এখন অনিরাপদ হয়ে পড়েছে এবং অনেক সময় ধরে এ অবস্থা চলছে।

উভয় পাশের ডেক এবং লোহার বেড়া প্রায়শই নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এবং সেতুর সারফেসে গর্ত তৈরির ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হওয়ায় সেতুটি দিয়ে চলাচল করা কয়েকশো যানবাহনকে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

চলাচলের উপযোগী রাখার জন্য কর্তৃপক্ষকে মাঝে মধ্যেই সেতুটিকে মেরামত করতে হয়। ষোলশহর থেকে দোহাজারী অংশে যেখানে সেতুটি অবস্থিত সেখানে রেলের সর্বোচ্চ গতিসীমা প্রতি ঘণ্টায় মাত্র ৩০ কিলোমিটার।

বোয়ালখালী উপজেলা, পটিয়ার পূর্ব এবং রাঙ্গুনিয়া উপজেলা দক্ষিণের এবং নগরীর চাঁদগাঁও ও মহোরা অঞ্চলের প্রায় দশ লক্ষ মানুষের নদী পার হওয়ার জন্য সেতুটির বিকল্প নেই।

বিআর দীর্ঘসময় ধরে কালুরঘাট ব্রিজটি প্রতিস্থাপনের চিন্তাভাবনা করছে। ১৯৩১ সালে নির্মিত এই সেতুটি মূলত একটি রেলসেতু ছিল। তবে, ৬০ এর দশকে এটিকে রেল-কাম-সড়ক সেতুতে রূপান্তর করা হয়।

গত বছরের অক্টোবরে সেতুটি পরিদর্শন করে রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানান, ২০২২ সালের মধ্যে নতুন কালুরঘাট ব্রিজটি নির্মিত হবে।

বিআর এখন চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজারে একটি রেলপথ নির্মাণ করছে, যা আগামী বছর চালু হওয়ার কথা রয়েছে।

সিদ্ধান্তহীনতার প্রেক্ষাপট

বিআরের নথি অনুযায়ী, ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সরকার সম্ভাব্য সমীক্ষার জন্য ইডিসিএফের প্রযুক্তিগত সহায়তা চায়।

ওই বছরের ডিসেম্বরে প্রকাশিত সমীক্ষায় একটি দুই লেনের সড়ক এবং সিঙ্গেল ট্র্যাক রেল সেতু নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়। ইডিসিএফ ২০১৭ সালের জুলাই মাসে তহবিল সরবরাহের অঙ্গীকার করে।

তবে, বিআর ২০১৮ সালের অক্টোবরে সিদ্ধান্ত নেয়, তারা ডাবল ট্র্যাকের সাথে একটি ডেটিকেটেড রেল সেতু নির্মাণ করবে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে, ইডিসিএফ জানায় যে একটি নতুন সমীক্ষার পরেই কেবল আরও একটি তহবিল সরবরাহের অঙ্গীকার করা হবে।

আগের সমীক্ষা হালনাগাদ করে বিআর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ঘোষণা করে যে তারা একটি দুই লেনের সড়ক-কাম-ডাবল ট্র্যাক সেতু নির্মাণ করবে।

বিআর গত বছরের অক্টোবরে আবারও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। এবার, রাষ্ট্র পরিচালিত পরিবহন সংস্থা জানায় যে, তারা সিঙ্গেল ট্র্যাক রেল ও সড়ক সেতু নির্মাণ করবে।

যোগাযোগ করা হলে রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, পূর্বের সমীক্ষাটি সাত দশমিক ছয় মিটার নেভিগেশনের ছাড়পত্র নিয়ে করা হয়েছিল। তবে, এখন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুসারে ১২ দশমিক দুই মিটার নেভিগেশন ছাড়পত্র রেখে সমীক্ষা করতে হবে। তাই নতুন সমীক্ষার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তিনি গতরাতে ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘যদিও আমরা ইতোমধ্যে দুই লেনের সড়ক কাম ডুয়েল-গেজ সিঙ্গেল ট্র্যাক রেল সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে, সড়কের সঙ্গে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন রেলসেতু নির্মাণ প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাজনক কিনা তা সমীক্ষার পরেই জানা যাবে।'

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সমীক্ষার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’

এদিকে, রেল সূত্র জানিয়েছে, বিআর মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার কোরিয়ান কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানাতে সম্প্রতি রেল মন্ত্রণালয়ের সচিবকে একটি চিঠি দিয়েছেন।

 

প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সুমন আলী

Comments