কালো ছত্রাক প্রতিরোধে ভিটামিন ‘সি’ সবচেয়ে কার্যকর: ড. বিজন

ড. বিজন কুমার শীল। ছবি: সংগৃহীত

বাতাসে ভেসে বেড়ানোর সময় ইনফেকশন সৃষ্টিকারী কালো ছত্রাকের (ব্ল্যাক ফাঙ্গাস) ‘স্পোর’ বা বীজাণু সুস্থ মানুষের শরীরে প্রবেশ করে ক্ষতি করতে না পারলেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে ফুসফুসে বংশবিস্তার শুরু করে। এরপর শরীরের বিভিন্ন জায়গা সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু ঘটাতে পারে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল।

ডায়াবেটিস, এইচআইভি পজিটিভ ও বিশেষ করে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় কালো ছত্রাকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি বলেও জানান তিনি।

এ ছাড়া তিনি বলেন, ‘কালো ছত্রাকে আক্রান্তদের মৃত্যুহার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে।’

আজ শুক্রবার সিঙ্গাপুর থেকে টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. বিজন কুমার শীল এসব তথ্য জানান।

কালো ছত্রাক মূলত বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায় উল্লেখ করে ড. বিজন বলেন, ‘নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় এটি সাধারণত নাক দিয়ে মানবদেহে প্রবেশ করে। প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে মাথাব্যথা, মুখব্যথা, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, চোখ ও মুখের দুদিকে ফুলে যাওয়া এবং চোখে দেখতে সমস্যা হয়।’

কালো ছত্রাককে অত্যন্ত ক্ষতিকর উল্লেখ করে ড. বিজন বলেন, ‘এর ফলে মুখের আকৃতি বদলে যায়। ছত্রাকটি ফুসফুসে গেলে মানুষের নিউমোনিয়া হয় এবং মস্তিষ্কে গেলে মানুষ প্যারালাইজড হয়ে যেতে পারে। অনেকেই এর কারণে মারা যান। যারা একবার কালো ছত্রাকে সংক্রমিত হবেন, তাদের আমৃত্যু ভুগতে হতে পারে।’

বাংলাদেশের পরিবেশ অনুযায়ী এখানেও কালো ছত্রাকের উপস্থিতি থাকতে পারে মন্তব্য করে বিজন কুমার বলেন, ‘আমাদের দেশে এই ছত্রাক আক্রমণের আগের কোনো রেকর্ড আছে কি না, তা দ্রুত খুঁজে বের করতে হবে।’

এ ছাড়া, স্বাস্থ্য বিভাগকে এখন থেকেই ছত্রাকটির বিষয়ে সতর্ক থাকারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

কালো ছত্রাক প্রতিরোধে করণীয়

ড. বিজন কুমার জানান, কালো ছত্রাক প্রতিরোধে সবার আগে ইমিউনিটি সিস্টেম বাড়াতে হবে। তা না হলে একবার যদি ছত্রাকটি সংক্রমিত হয়, তবে দেশে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে।

এ ছাড়া, করোনাভাইরাস থেকে সেরে ওঠার পরও সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন, ভাইরাসের পাশাপাশি কিছু ওষুধের কারণে তাদের ইমিউনিটি সিস্টেম অনেক দুর্বল হয়ে যায়। তাই তাদের কালো ছত্রাকে আক্রান্তের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। আর এটি যেহেতু নাক দিয়ে প্রবেশ করে, তাই সব সময় মাস্ক পরে থাকলে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে।’

কালো ছত্রাক প্রতিরোধে তিনি যে বিষয়টির ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন তা হলো ভিটামিন ‘সি’।

সবাইকে বেশি করে ভিটামিন ‘সি’ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বিজন কুমার বলেন, ‘আমাদের দেশে করোনা আক্রান্তদের প্রতিদিন পাঁচশ মিলিগ্রাম করে ভিটামিন “সি” দেওয়া হয়। অবশ্যই তা বাড়াতে হবে এবং প্রয়োজনে এক হাজার থেকে দুই হাজার মিলিগ্রাম পর্যন্ত ভিটামিন “সি” দিতে হবে।’

বিভিন্ন প্রাণী নিজেরাই ভিটামিন ‘সি’ উৎপাদন করতে পারলেও মানুষ নিজেই নিজের শরীরের জন্য ভিটামিন ‘সি’ উৎপাদন করতে পারে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভিটামিন “সি”র কারণে আমাদের শরীরে ৬০-৮০ শতাংশ টিস্যু তৈরি হয়। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে সবার ভিটামিন “সি” খাওয়া অনেক বেশি প্রয়োজন।’ 

করোনা মহামারির মধ্যে এখন ভারতে নতুন এক আতঙ্কের নাম মিউকরমাইকোসিস বা কালো ছত্রাক।

বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কালো ছত্রাককে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। সবগুলো রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এটিকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে এই রোগে আক্রান্তদের তথ্য কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানাতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন:

এবার ভারতে নতুন মহামারি ‘কালো ছত্রাক’

কোভিড রোগীদের আরেক আতঙ্ক ‘কালো ছত্রাক’

Comments

The Daily Star  | English

JnU students vow to stay on streets until demands met

Jagannath University (JnU) students tonight declared that they would not leave the streets until their three-point demand is fulfilled

28m ago