কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখার আহ্বান ব্যবসায়ীদের
সরকারের প্রতি কালো টাকা সাদা করার অবাধ সুবিধা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা জানিয়েছেন, এ ধরণের কর সুবিধা শুধুমাত্র সেসব খাতে দেওয়া উচিৎ যেখানে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয় এবং দেশের অর্থনীতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
তাদের যুক্তি- বিরাট সংখ্যক মানুষের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি হওয়া প্রয়োজন, বিশেষ করে করোনাভাইরাস মহামারিতে। মহামারি সংকটে অর্থনীতিতে মন্দা নেমে এসেছে। যার ফলে, অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘যেসব শিল্প খাতে কর্মসংস্থানের নতুন ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে, সেগুলোতে সরকার কালো টাকাকে সাদা করার অনুমতি দিতে পারে।’
‘তবে সকল খাতের জন্য কালো টাকাকে সাদা করার অবাধ সুযোগ দেওয়া উচিৎ হবে না। বিশেষ করে যেসব খাতে নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরির সুযোগ কম, কিংবা যেগুলো সমাজে খুব একটা প্রভাব রাখে না।’
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট রিজওয়ান রহমান জানিয়েছেন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ সৎ করদাতাদের প্রতি অন্যায্য, কারণ এতে একটি অসম প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয় এবং তা ব্যবসায়ীদের মনোবল ভেঙে দেয়।
তিনি বলেন, ‘সরকার যখন করের আওতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছে, ঠিক তখনই এ বিষয়টি মানুষকে ঠিকমতো কর দেওয়াকে নিরুৎসাহিত করছে। আমাদের এমন একটি নীতিমালা তৈরি করা উচিৎ যা মানুষকে কর দিতে উৎসাহিত করে এবং যাতে তাদের অর্জিত টাকা কালো টাকায় রূপান্তরিত না হয়। যারা কর ফাঁকি দেয় তাদেরকে সুবিধা দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়।’
তিনি জানান, সরকার চাইলে কালো টাকাকে অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করার অনুমতি দিতে পারেন। ‘তবে এ সুযোগটি হবে স্বল্পমেয়াদী’, বলেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত বছরের বাজেট ঘোষণার সময় কালো টাকা সাদা করার এই বিধানটি প্রকাশ করেন এবং জানান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ কোনো কর্তৃপক্ষ কর না দেওয়া অর্থের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলতে পারবে না।
ব্যক্তিগত করদাতারা জরিমানা হিসেবে ১০ শতাংশ কর দিয়ে অঘোষিত নগদ টাকা, ব্যাংকের আমানত, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড ও অন্যান্য সিকিউরিটিকে বৈধ করে নিতে পারবে, যা ২৫ শতাংশ নিয়মিত করের চেয়ে অনেক কম।
গত কয়েক বছর ধরে সরকার অঘোষিত কালো টাকার মালিকদেরকে আবাসনসহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করার সুযোগ দিয়েছে। করদাতারা যে কোনো অঘোষিত সম্পত্তি যেমন- জমি, দালান ও ফ্ল্যাটকে প্রতি বর্গফুট হিসেবে কর দিয়ে বৈধ করে নিতে পারেন।
এর ফলশ্রুতিতে কালো টাকার মালিকরা এই খাতে ভিড় জমায় এবং ঢাকা শহরে বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের দাম অনেক বেড়ে যায়। বস্তুত ঢাকা শহরে জমি এবং ফ্ল্যাটের দাম ইউরোপ, কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরের মতোই দামি।
জমি ও ফ্ল্যাটের দাম ইতোমধ্যেই মধ্যম আয়ের মানুষদের ক্রয় ক্ষমতার অনেক ঊর্ধ্বে চলে গেছে।
স্টক এক্সচেঞ্জেও বিপুল পরিমাণ অঘোষিত অর্থের অনুপ্রবেশ ঘটতে দেখা গেছে। ফলে, বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে শেয়ারের মূল্য কয়েকটি সেশন জুড়ে অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে।
ব্যবসা সংশ্লিষ্ট কয়েকজন জানিয়েছেন, কালো টাকা একটি দেশের জন্য শাখের করাতের মত। যদি অঘোষিত তহবিলটি লাভজনক খাতে প্রবেশ করতে না দেওেয়া হয় তাহলে দেশ থেকে একটি বিশাল পরিমাণ টাকা অবৈধ পথে দেশের বাইরে পাচার হয়ে যাবে।
অপরদিকে, কিছু খাতে এ অর্থকে প্রবেশ করানোর অনুমোদন দেওয়া হলে এই বাড়তি তহবিল সে খাতের পণ্য বা সেবার মূল্যমানের ক্ষেত্রে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। এ ব্যাপারটি আবাসন খাতের ক্ষেত্রে দেখা গেছে।
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন ‘কালো টাকা’ শব্দটির প্রতি আপত্তি জানান।
তিনি বলেন, ‘এটি কালো টাকা নয়; এটি অঘোষিত টাকা।’
বর্তমান অর্থ বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার কোটি অঘোষিত টাকা আবাসন খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছিল। যা এই খাতকে মহামারির মাঝেও প্রাণবন্ত থাকতে সহায়তা করেছে।
এই খাতে ৩০ লাখ মানুষ কাজ করেন, তবুও এই সংকটের মাঝেও কাউকে চাকরিচ্যুত করা হয়নি। আলামিন জানান, এই প্রগতিশীল শিল্পটি দেশের অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে বড় অবদান রাখছে।
তিনি আসন্ন বাজেটে আবাসন খাতের ক্ষেত্রে অঘোষিত অর্থ বিনিয়োগের বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গিটিকে অপরিবর্তিত রাখতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
‘এই সুযোগটি আগামী কয়েক বছরের জন্য থাকা উচিৎ। এটি অবৈধ পুঁজির বিদেশে পাচার হওয়া ঠেকাবে। যদি সরকার আমাদের দাবিদাওয়া মেনে নেয়, তাহলে ফ্ল্যাটের দাম কমে আসার পথ সুগম হবে’।
প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান
Comments