বাজেটে কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ না রাখার আহ্বান টিআইবির

চলতি অর্থবছর অপ্রদর্শিত অর্থের মোড়কে কালো টাকা সাদা করার যে অনৈতিক সুযোগ সরকার ঢালাওভাবে দিয়েছে, সেটি অনির্দিষ্ট মেয়াদে বাড়ানোর বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

চলতি অর্থবছর অপ্রদর্শিত অর্থের মোড়কে কালো টাকা সাদা করার যে অনৈতিক সুযোগ সরকার ঢালাওভাবে দিয়েছে, সেটি অনির্দিষ্ট মেয়াদে বাড়ানোর বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

টিআইবি জানায়, দীর্ঘমেয়াদে কালো টাকা সাদা করার এমন সুবিধা সৎ ও বৈধ আয়ের ব্যক্তি করদাতাকে নিরুৎসাহিত করার মাধ্যমে কর ব্যবস্থায় খেলাপির সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের ঝুঁকি তৈরি করবে এবং এতে আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ না রাখায় দেশে দুর্নীতি সহায়ক একটি উদার পরিস্থিতি তৈরি হবে, যা সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানকে দুর্বল করার মাধ্যমে আইনের শাসন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার যে কোনো চেষ্টাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে।

এসব শঙ্কা বিবেচনায় রেখে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতার’ নীতির প্রতি সামঞ্জস্য রেখে নতুন বাজেটে (২০২১-২২ অর্থবছর) কালোটাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ বাতিল করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে টিআইবি।

‘দেশের অর্থনীতিতে যতদিন অপ্রদর্শিত অর্থ থাকবে, ততদিন তা ঘোষণার সুযোগ থাকবে...’ বলে অর্থমন্ত্রীর যে বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তাতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আজ শনিবার এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘চলতি বাজেটে অর্থের উৎস নিয়ে যে কোনো ধরনের প্রশ্ন করার বিধান উঠিয়ে দিয়ে বৈধ উপায়ে অর্জিত “অপ্রদর্শিত অর্থ” এবং অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত কালো টাকার মধ্যকার ফারাক একাকার করে দেওয়া হয়েছে। এমন বাস্তবতায় কালোটাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ অনির্দিষ্ট মেয়াদে রাখার পরিকল্পনা দেশের কর ব্যবস্থায় ন্যায় ও ন্যায্যতার প্রশ্নকে প্রকট করে তুলবে এবং দুর্নীতিবাজদের জন্য করোনাকালীন সময়ে নতুন প্রণোদনা হিসেবে বিবেচিত হবে। তাই এমন অপরিণামদর্শী ও আত্মঘাতী পরিকল্পনা থেকে সরকার সরে আসবে সেটিই প্রত্যাশিত।’

মাত্র ১০ ভাগ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকলে সৎ করদাতারা কেন সর্বোচ্চ ২৫ থেকে ৩০ ভাগ কর দেবেন? এমন প্রশ্ন রেখে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সাময়িকভাবে এমন সুযোগ থেকে সরকার কিছুটা রাজস্ব পেলেও ধীরে ধীরে তা বড় সংখ্যক করদাতাদের খেলাপি হতে উৎসাহিত করবে, যা দীর্ঘমেয়াদে রাজস্ব ক্ষতির মাত্রাকে বাড়িয়ে দেবে এবং কর খেলাপির নতুন এক সংস্কৃতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করবে। চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে রেকর্ড ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ বৈধ হওয়ার খবরে নীতনির্ধারক মহলে যে সন্তুষ্টির বাতাবরণ তৈরি হয়েছে, সেটি সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের প্রতি একরকম উপহাসই বলা চলে। কেননা মহামারির মাঝেও বিপুল অর্থ সাদা করার প্রবণতাই বলে দেয়, দেশে একটি দুর্নীতি সহায়ক ব্যবস্থা বিদ্যমান আছে এবং সেটি যে কোনো পরিস্থিতিকেই নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য কাজে লাগাতে প্রস্তুত দুর্নীতিগ্রস্তরা।’

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রদানের দীর্ঘদিনের অসাংবিধানিক চর্চা বন্ধ করার এখনই উপযুক্ত সময় মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘বৈধ পথে অর্থ উপার্জনকারী করদাতা থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি ব্যবসায়ী সংগঠন বিভিন্ন সময়ে ঢালাও এ সুযোগের বিরোধিতা করলেও সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি বরং সংবিধানের ২০ (২) অনুচ্ছেদকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। এক্ষেত্রে দূরদৃষ্টি, সংবিধান ও আইনের শাসনের প্রতি সরকার আনুগত্য দেখিয়ে আসন্ন বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল করবে এমনটাই আশা। একইসঙ্গে, কালো টাকার মালিকদের সম্পদের উৎস অনুসন্ধানের মাধ্যমে কার্যকর জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে দুর্নীতির মহোৎসবের হ্রাস টেনে ধরা যায়।’

Comments

The Daily Star  | English

Rab will never again get involved in enforced disappearances, killings: DG

Rab will never get involved in incidents such as enforced disappearances and killings anymore, the force’s Director General AKM Shahidur Rahman said today

1h ago