মুক্তিযুদ্ধ

২২ মে ১৯৭১: ভীমনালি গণহত্যা; দিল্লিতে সীমান্ত গান্ধীর বিবৃতি

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ২২ মে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এদিন কাবুল থেকে পাঠানো সীমান্ত গান্ধী খান আবদুল গাফফার খানের দেওয়া এক বিবৃতির অনুলিপি দিল্লিতে প্রকাশ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের জনমত গঠনের লক্ষ্যে কলকাতায় বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীরা বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন। দ্য স্যাটারডে রিভিউ ‘পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সুনামগঞ্জের জোয়াইতে দুর্গম অঞ্চলে মুক্তিযাদ্ধাদের ২৮ দিনের একটি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ২২ মে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এদিন কাবুল থেকে পাঠানো সীমান্ত গান্ধী খান আবদুল গাফফার খানের দেওয়া এক বিবৃতির অনুলিপি দিল্লিতে প্রকাশ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের  জনমত গঠনের লক্ষ্যে কলকাতায় বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীরা বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন। দ্য স্যাটারডে রিভিউ ‘পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সুনামগঞ্জের জোয়াইতে দুর্গম অঞ্চলে মুক্তিযাদ্ধাদের ২৮ দিনের একটি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়।

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং এপিপির মার্কিন চিকিৎসকেরা যুক্তরাষ্ট্রে এক গোপন চিঠি পাঠান। ন্যাশনাল হেরাল্ড পত্রিকায় ‘আগরতলা হাসপাতালে গণহত্যার প্রমাণ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এদিন হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড ’করিমগঞ্জ সীমান্তে পাকিস্তানি সৈন্য সমাবেশ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ২২ মে পিরোজপুরের ভীমনালিতে গণহত্যা চালায় হানাদারেরা। দেশের বহু স্থানে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে মুক্তিবাহিনী।

দিল্লিতে খান আবদুল গাফফার খানের বিবৃতির অনুলিপি প্রচার

২২ মে খান আবদুল গাফফার খান তথা সীমান্ত গান্ধী’র এক বিবৃতির অনুলিপি দিল্লিতে প্রচার করা হয়। সেই বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে মধ্যস্থতা করতে চেয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের হাতে  ক্ষমতা হস্তান্তর করলে পাকিস্তান অখণ্ড থাকবে। কারণ পূর্ব পাকিস্তান তো বটেই পশ্চিম পাকিস্তানেও জয়ী হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। তারাই সংখ্যাগুরু অথচ তাদের প্রতি অবিচার করে ক্ষমতার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা হয়নি। তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়নি দেশের দায়ভার। পাকিস্তানের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করলে এখন আওয়ামী লীগকে দায়ী করা হচ্ছে।  এদিক ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বৈঠকের সময় তাকে ভাবি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সম্বোধন করেছেন। অথচ তিনি সেই দায়িত্ব অর্পণ করেননি। ৬ দফার উপর ভিত্তি করে আওয়ামী লীগ ১৯৭০ এর নির্বাচনে জয়লাভ করেছে, এখন সরকার বলছে ৬ দফা পাকিস্তানের পক্ষে বিপজ্জনক। পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতা ও সামরিক প্রশাসকেরা সবসময় ইসলামের কথা বলে, অথচ আজ পূর্ব পাকিস্তানে যা হচ্ছে তা কি ইসলাম সমর্থন করে? এতে কি পাকিস্তানের আদৌ কোনো সুফল ও কল্যাণ বয়ে আনছে? পাকিস্তান ধ্বংস হচ্ছে কাইয়ুম খান ও ভুট্টোর ভুল নীতির কারণে।"

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এদিন মুক্তিযুদ্ধের খবর

২২ মে দ্য স্যাটারডে রিভিউ ’পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি বিশেষ  প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই প্রতিবেদনে বলা হয়, "পূর্ব পাকিস্তানের যে মানুষগুলো গত বছরের বন্যার কারণে এখনও গৃহহীন এবং ক্ষুধাপীড়িত, তারাই এখন আবার মনুষ্যসৃষ্ট এক দুর্যোগের শিকার। তাদের দেশ পরিণত হয়েছে এক অনুমোদিত বধ্যভূমিতে। বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ আজ প্রায় শূন্যের কোঠায়। যারা জরুরী চিকিৎসা বা অন্যান্য সাহায্যে এগিয়ে আসতে চেয়েছিল তাদের বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এই বিদ্রোহের উদগীরণ অবধারিত ছিল। যদিও সাধারণ নির্বাচনে বিপুল ভোটে স্বায়ত্তশাসনের পক্ষেই রায় এসেছিল। ইসলামাবাদের কেন্দ্রীয় সরকার জনতার এই রায়কে সম্মান দিতে শুধু ব্যর্থই হয়নি, বরং সামরিক বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়ে এর বাস্তবায়নকে বানচাল করেছে। পুরো দেশে গণহত্যা,  নির্যাতন, নিপীড়ন চালিয়ে সাক্ষাৎ নরকের সৃষ্টি করেছে।

২২ মে  আনন্দবাজার পত্রিকায় ‘ঢাকায় গ্রেনেড আক্রমণের কথা পরোক্ষে স্বীকার’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা বাহিনী কর্তৃক খোদ ঢাকা শহরের বুকে গেরিলা আক্রমণ চালাবার যে সংবাদ ইতোপূর্বে ভারতে এসে পৌঁছেছিল পাকিস্তান পরোক্ষভাবে তা স্বীকার করেছে। ২১ মে  পাক বেতার থেকে বলা হয়, সামরিক আইন প্রশাসক এ বলে সতর্ক করে দিয়েছেন যে, নাশকতার কাজে লিপ্ত ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। নাশকতার কাজে লিপ্ত ব্যক্তিদের ধরিয়ে দিলে পুরস্কার দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। বেতার ঘোষণায় আরও বলা হয়েছে যে ঢাকা শহরে গ্রেনেড ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দশ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সপ্তাহের গোড়াতে খবর পাওয়া গিয়েছিল যে, মুক্তিফৌজের কমান্ডো দল ঢাকায় গভর্নরের বাসভবন, সিভিল সেক্রেটারিয়েট ও নিউ মার্কেটে মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংকের ওপর হানা দিয়েছে।

২২ মে পিটিআই এর বরাতে ন্যাশনাল হেরাল্ড পত্রিকায় ‘আগরতলা হাসপাতালে গণহত্যার প্রমাণ’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আগরতলার জেনারেল হাসপাতালকে নির্দোষ পূর্ব পাকিস্তানিদের ওপর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অমানবিক নৃশংসতার একটি ছবি হিসেবে উপস্থাপন করা যায়- পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত এলাকা ঘুরে আসার পর এমনটিই লিখেছেন একজন ইউএনআই সংবাদদাতা। এই প্রতিবেদনে বলা হয়, "২৬০ শয্যার আগরতলা জেনারেল হাসপাতালে রোগীদের স্থান সংকুলান হচ্ছে না। বেশিরভাগই এখানে হিংস্র হানাদারদের নৃশংসতার শিকার। হাসপাতালটিতে ৫৩০ জন রোগী আছেন, যা এর ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি। হৃদয়স্পর্শী ঘটনাগুলোর মাঝে ছিল একটি ১৩ বছরের ছেলে এবং একটি ৯ বছরের মেয়ের ঘটনা। দু’জনেই পাকিস্তানি শেলিং-এ চোখের দৃষ্টি হারিয়েছে। হালিদ হুসাইন সাহেবকে (২৭) তীব্র মানসিক ধাক্কা এবং অবসাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিলো। তিনি গত ২৭ এপ্রিল চট্টগ্রাম ছেড়ে যখন আসেন যখন হানাদারেরা চট্টগ্রাম শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নির্বিচারে বাঙালী নিধন শুরু করেছে। তিনি রাজনীতিতে একেবারেই আগ্রহী ছিলেন না। কিন্তু নিজের লোকদের হত্যা করতে দেখার পর তিনি মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সুসজ্জিত দখলদার বাহিনীর কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়া কি মুক্তি বাহিনীর পক্ষে সম্ভব হবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে হুসাইন সাহেব মনে করিয়ে দিলেন, শক্তিশালী ফ্রান্সের সঙ্গে আলজেরিয়ান এবং তিউনিশিয়ান বাহিনীর যুদ্ধের কথা। তিনি বলেন- যদি এই দেশগুলো স্বাধীনতা জিতে নিতে পারে তবে মুক্তিবাহিনীও পাকিস্তানি হানাদারদের  কাছ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন করতে পারবে। পাকিস্তানি বুদ্ধিজীবীদের একদল ত্রিপুরা শহরের নরসিংহ রিফিউজি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন।"

২২ মে হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড ’করিমগঞ্জ সীমান্তে পাকিস্তানি সৈন্য সমাবেশ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেখানে বলা হয় "পাকিস্তানি সেনারা আসাম সীমান্তের খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে। এ বিষয়ে আলোচনায় একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হাউসে বলেন, এই সরকার করিমগঞ্জের উল্টো পাশে পাকিস্তানি সেনাদের জড়ো হওয়ার ব্যাপারে অবগত আছে- সেখানে তারা কাসুরিয়া নদীর পাড়ে বাংকার তৈরি করেছে। মুখ্যমন্ত্রী একইসঙ্গে  বলেছেন, তিনি করিমগঞ্জ সীমান্তজুড়ে পাকিস্তানের প্রস্তুতি সংক্রান্ত ব্যাপারে হাউসের সদস্যদের অনুভূতি প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে অবহিত করবেন। এর আগে হাউসের সদস্যরা আসামের করিমগঞ্জ সীমান্ত শহরজুড়ে পূর্ব বাংলার জাকিগঞ্জে পাকিস্তানি সৈন্যদের জড়ো হওয়ার খবর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

২২ মে ইউএনআই একটি প্রতিবেদনে বলে,  "বুধবারে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ৭০০০ এর বেশি শরণার্থী অসম-এর মিজো পাহাড় জেলায় এসেছে। ২৫ মার্চ যুদ্ধ শুরু হবার পর থেকে মিজো পাহাড় অঞ্চলে এটাই বড় আকারের শরণার্থী অন্তঃপ্রবাহ।"

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরকে ঢাকা মার্কিন দূতাবাস ও চিকিৎসকদের চিঠি

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং এপিপির মার্কিন চিকিৎসকেরা যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো এক চিঠিতে জানান, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক পাকিস্তানকে পাঠানো অস্ত্র সাহায্যের অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিরীহ বাঙালিদের উপরে প্রয়োগ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, চীন থেকে পাঠানো সামরিক সাহায্য ও একই সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ নাগরিকদের উপর প্রয়োগ করা হচ্ছে।"

ঢাকায় এদিন

২২ মে ঢাকায় জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর মিয়া তোফায়েল নতুন করে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন দাবি করেন।

ভারতে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে এদিন

২২ মে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে কলকাতায় বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীরা "বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রাম পরিষদ" নামে একটি সংগঠন গঠন করেন। সংগঠনের  সভাপতি করা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ আর মল্লিককে। সংগঠনের  কার্যকরী পরিষদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করা হয় জহির রায়হান, ওয়াহিদুল হক, মওদুদ আহমদ, অনুপম সেন, সৈয়দ আলী আহসান, খান সারওয়ার মুরশিদ, কামরুল হাসান, রণেশ দাশগুপ্ত,  ব্রজেন দাস, মুস্তাফা মনোয়ার ও ফয়েজ আহমদকে।

২২ মে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী  দিল্লিতে বলেন, "পাকিস্তানের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার কোনো ইচ্ছা আমাদের  নেই। তবে পূর্ব বাংলার চলমান ঘটনায় ভারতের বিশেষ উদ্বেগের কারণ রয়েছে । ভারত পূর্ব বাংলায় এমন অবস্থা চায়, যেন  শরণার্থীরা নিজ দেশে  ফিরে নিরাপদ বোধ করে এবং নিরাপদে জীবন যাপন চালাতে  পারে।

২২ মে ভারতের দিল্লির ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয় পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত শরণার্থীদের সংখ্যা ৩৩ লাখ ৯৩১ জনে দাঁড়িয়েছে।

২২ মে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম আসামের করিমগঞ্জের সীমান্ত এলাকায় দুটি এবং হলদিবাড়ীতে একটি শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন। এরপর তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, "পাকিস্তান ভারতীয় এলাকায় গোলাগুলি করতে থাকলে ভারতের পক্ষে নীরব দর্শক হয়ে বসে থাকা সম্ভব হবে না।"

২২ মে দিল্লিতে জনসংঘ তাদের সংসদীয় দলের সভায় বলা হয়, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেওয়ায় সরকারকে লোকসভার অধিবেশনে নিন্দা জানানো হবে। এসময় দলের  সভাপতি অটল বিহারি বাজপেয়ীকে এ ব্যাপারে অন্য বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার দায়িত্ব দেয়া হয়।

দেশব্যাপী গণহত্যা, প্রতিরোধ যুদ্ধ ও নানা ঘটনা

ভীমনালি গণহত্যা

২২ মে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর একটি দল পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার ভীমনালি গ্রামে গণহত্যা চালায়। এই গণহত্যায় শহীদ হন ১৮ জন নিরীহ সাধারণ মানুষ।

২২ মে সকাল দশটার দিকে রাজাকার কমান্ডার ইঞ্জিনিয়ার আবদুল জব্বারের নির্দেশে প্রায় ৫০০ রাজাকারের একটি দল ভীমনালি গ্রাম ঘিরে ফেলে। এসময়  গ্রামবাসী বারুই পরিবারের বাড়িতে জড়ো হয়েছিল। রাজাকারের গ্রামে পৌঁছালে প্রায় ২০০ বাঙালি হিন্দু লাঠি, বর্শা নিয়ে ওয়াপদা বাঁধের অবস্থান গ্রহণ করেন। এসময় সশস্ত্র রাজাকারেরা তাদের উপর গুলি চালালে তারাও পাল্টা প্রতিরোধ যুদ্ধ চালায়। প্রায় ২ ঘণ্টা যুদ্ধের পর একপর্যায়ে  ভারী অস্ত্রের সামনে টিকে না পেরে পনেরো জন  গ্রামবাসী গুলিবিদ্ধ হন এবং বাকিরা পিছু হটে যান। লালু খান নামে এক রাজাকার  এসময়  নিহত হয়েছিল। এরপর রাজাকারেরা শহীদ গ্রামবাসীর লাশগুলি টেনে এনে খালে ফেলে দেয়। গণহত্যার পরে রাজাকারসহ ইঞ্জিনিয়ার আবদুল জব্বার ৮০ জন বাঙালি হিন্দু পরিবারের বাড়ি ঘরে ঢুকে লুটপাট চালিয়ে গান পাউডার দিয়ে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। 

২২ মে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আবদুল গফুরকে আহ্বায়ক করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শান্তি কমিটি গঠিত হয়।

২২ মে চট্টগ্রামের লালদিঘিতে নেজামে ইসলামীর এক জনসভায় নেজামে ইসলামীর মহাসচিব মওলানা সিদ্দিক আহমদ বলেন, রাষ্ট্রবিরোধী ব্যক্তিদের তৎপরতা বন্ধ করার কাজে সেনাবাহিনীকে সাহায্য করা শুধু শান্তি কমিটির দায়িত্ব না, এই দায়িত্ব দেশের  প্রতিটি নাগরিকের।

২২ মে রংপুরে সাবেক এমএনএ সিরাজুল ইসলাম ও সাবেক এমপিএ আব্দুর রহমান এক যুক্ত বিবৃতিতে সেনাবাহিনীকে সমর্থনদানের জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

২২ মে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শালদা নদীতে ক্যাপ্টেন আবদুল হকের নেতৃত্বে হানাদারদের একটি প্রতিরক্ষা ঘাঁটির ওপর আক্রমণ চালায় মুক্তিবাহিনী। এই আক্রমণে ৪ হানাদার সৈন্য নিহত ও ১১ জন আহত হয়।

২২ মে মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার আবুল হাশেমের  নেতৃত্বে ও বিডিআর সদস্য ফরহাদের সহায়তায় মুক্তিবাহিনী ও ইপিআরের ৪টি কোম্পানি  নালিতাবাড়ি ব্রিজ ধ্বংস করে। এর আগে বেশ কবার চেষ্টা চালিয়েও ব্রিজটি ধ্বংস করতে ব্যর্থ হয়েছিল মুক্তিবাহিনী। 

সূত্র –

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র সপ্তম, অষ্টম, নবম, দ্বাদশ, ত্রয়োদশ খণ্ড।

দৈনিক পাকিস্তান, ২৩ মে ১৯৭১

দৈনিক অমৃতবাজার পত্রিকা, ২৩ মে ১৯৭১

দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা ২৩ মে ১৯৭১

আহমাদ ইশতিয়াক[email protected]

 

Comments

The Daily Star  | English

Students besiege HC demanding resignation of 'pro-AL fascist judges'

A group of students marched to the High Court premises to besiege the court, demanding the resignation of "pro-Awami League fascist judges"

50m ago