ঈশ্বরদীতে লিচু পাড়া শুরু, জুনের প্রথম সপ্তাহে বাজারে আসবে বোম্বে লিচু

দাম ভাল পাওয়ায় আশাবাদী চাষি ও ব্যবসায়ীরা
স্টার ফাইল ছবি

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার চর সিলিমপুর গ্রামের লিচু চাষি ও মৌসুমি লিচু ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম এ বছর তিনটি বাগান কিনেছেন। তার তিনটি বাগানে প্রায় দেড়শতাধিক লিচু গাছ আছে। যার বেশিরভাগই হাইব্রিড বোম্বে ভ্যারাইটির লিচু। এছাড়াও, আছে দেশি প্রজাতির আটি লিচুর গাছ। বোম্বে লিচু এখনো পুরোপুরি না পাকলেও আটি লিচু বাজারজাত করা শুরু করেছেন সালাম। ভাল দাম পেয়ে সালাম খুশি হলেও লিচুর ফলন বিপর্যয়ে আশানুরূপ লাভ হবে না বলে জানান তিনি।

লিচু ব্যবসায়ী সালাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রতিবছর একটি বড় গাছ থেকে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার লিচু পাওয়া যায়। তবে, এবার ফলন বিপর্যয়ের কারণে বড় গাছ থেকে ১০ থেকে ১২ হাজারের বেশি লিচু পাওয়া যাচ্ছে না। ফলন বিপর্যয়ের কবলে পড়েছে ছোট গাছগুলোও।’

প্রায় আড়াই লাখ টাকা দিয়ে তিনটি লিচু বাগান কিনে ৩.৫ থেকে ৪ লাখ টাকার লিচু বিক্রির লক্ষ্য থাকলেও ফলন বিপর্যয়ের কারণে এখন খরচ তুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান সালাম।

সালামের মত একই অবস্থা লিচুর রাজধানী বলে পরিচিত ঈশ্বরদী উপজেলার প্রতিটি লিচু চাষি ও মৌসুমি লিচু ব্যবসায়ীর। ফলন বিপর্যয়ের কারণে কাঙ্ক্ষিত ফলন না পাওয়ায় দেশের অন্যতম প্রধান লিচু উৎপাদনকারী এলাকা ঈশ্বরদী ও পাবনার লিচু চাষি ও ব্যবসায়ীরা আছেন দুশ্চিন্তায়।

চর সিলিমপুর গ্রামের লিচু বাগান মালিক ও ব্যবসায়ী মো. দুলাল হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এ বছর প্রচণ্ড খরার কারণে লিচুর বেশিরভাগ মুকুল শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। অতিরিক্ত খরার কারণে লিচুগুলো বড় হওয়ার সময় পর্যাপ্ত পানি না পাওয়ায় অনেক লিচু গাছে ফেটে নষ্ট হয়ে যায়। লিচু ফলনের সময়ে ঝড়ের কারণে ক্ষতি না হলেও এবার খরার কারণে গাছেই নষ্ট হয়ে গেছে বেশিরভাগ লিচু।’

একটি বড় গাছ থেকে বছরে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার লিচু পাওয়া যায়। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু

অধিকাংশ এলাকায় লিচু বাগানে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ লিচুর ফলন হয়েছে আর বাকিটা নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকরা সার ও বিষ দিয়ে ক্ষতি কমানোর চেষ্টা করলেও প্রকৃতি অনুকূলে না থাকায় এ বছর লিচুর ফলন বিপর্যয় হয়েছে বলে জানান দুলাল হোসেন।

পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক আব্দুল কাদের দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এ বছর পাবনায় তিন হাজার চারশ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। যা থেকে লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৪১ হাজার মেট্রিক টন।’

তবে, অতিরিক্ত খরার কারণে এ বছর কিছুটা ফলন বিপর্যয় হয়েছে বলে স্বীকার করলেও দাম ভাল পাওয়ায় কৃষকদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।

খরার কারণে প্রায় ৫০ শতাংশ লিচু নষ্ট হয়ে গেছে বলে কৃষকরা দাবি করলেও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক আব্দুল কাদের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ লিচুর ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন।

লিচু ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের পর থেকে পাবনার ঈশ্বরদী ও আশপাশের এলাকার লিচু ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে আটি লিচুগুলো বাজারজাত করা হচ্ছে বলে জানান তারা। আরও সপ্তাহখানেক এই লিচু ভাঙা হবে। এরপর জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে বাজারে আসবে উচ্চ ফলনশীল বোম্বে লিচু।

প্রতিদিন ঈশ্বরদী থেকে ২০ থেক ৩০ ট্রাক লিচু দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হচ্ছে। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু

ঈশ্বরদীর দিঘা এলাকার লিচু ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান শামিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রথম থেকেই এবার লিচুর ভাল দাম পাচ্ছেন কৃষকরা। বাগান থেকে প্রায় ১৬০ থেকে ২০০ টাকা শ আটি লিচু বিক্রি হচ্ছে। বাজার এমন চড়া থাকলে বোম্বে লিচু বাজারজাত করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে লিচু চাষি ও ব্যবসায়ীরা।’

শামিম জানান, এখনো ২৫ শতাংশ লিচু ভাঙা হয়নি, প্রতিদিন ঈশ্বরদী থেকে ২০ থেক ৩০ ট্রাক লিচু দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাজারজাত করার জন্য পাঠানো হচ্ছে। পুরোপুরি লিচু ভাঙা শুরু হলে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক লিচু দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাজারজাত করার জন্য পাঠানো যাবে।

এদিকে সরেজমিনে ঈশ্বরদী ও এর আশপাশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গাছ থেকে লিচু পাড়া, লিচু বাছাই করা, লিচু, প্যাকেট করা, ট্রাকে লিচু লোড করাসহ পুরো এলাকা জুড়ে এখন লিচু নিয়ে ব্যস্ততা চলছে। আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহ এ ব্যস্ততা থাকবে বলে জানান লিচুর সাথে জড়িত বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা।

Comments

The Daily Star  | English

Please don't resign: An appeal to Prof Yunus

Every beat of my patriotic heart, every spark of my nation building energy, every iota of my common sense, every conclusion of my rational thinking compels me to most ardently, passionately and humbly appeal to Prof Yunus not to resign from the position of holding the helm of the nation at this crucial time.

3h ago