গাজায় যুদ্ধবিরতি মানার আহ্বান জাতিসংঘের, শান্তির দাবিতে তেল আবিবে সমাবেশ

গাজায় যুদ্ধবিরতি ‘পুরোপুরিভাবে মেনে চলার’ আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ।

আল-জাজিরা’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের অনুমোদিত বার্তায় ‘সংঘর্ষে বেসামরিক লোকজনের প্রাণহানিতে দুঃখ’ প্রকাশ করা হয়।

পাশাপাশি, ফিলিস্তিনিদের, বিশেষ করে, গাজায় বেসামরিক জনগণের জন্য জরুরিভিত্তিতে মানবিক সহায়তা দেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

গত ১০ মে শুরু হওয়া টানা ১১ দিন ইসরায়েলি বোমা হামলায় গাজায় অন্তত ৬৬ শিশুসহ ২৪৮ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১৯ শ’র বেশি।

নিরাপত্তা পরিষদের বার্তায় ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল নামে দুটি পৃথক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সেই অঞ্চলে শান্তি স্থাপনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

গতকাল অন্যান্য আরব ও মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রকে সঙ্গে নিয়ে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি হামলা বন্ধের জন্যে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কাতার।

গাজায় ইসরায়েলি ‘গণহত্যা’র জন্যে দায়ী সে দেশের কর্মকর্তাদের বিচার করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে আহ্বান জানিয়েছে মৌরিতানিয়ার পার্লামেন্ট।

দেশে দেশে বিক্ষোভ-সমাবেশ

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতিকে সমর্থন জানানোর পাশাপাশি ইসরায়েলি সরকারকে দ্রুত ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে শান্তি স্থাপনের আহ্বান জানিয়ে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় কয়েক হাজার ইসরায়েলি তেল আবিবে সমাবেশ করেছেন।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুসালেম পোস্ট জানিয়েছে, সমাবেশে ইসরায়েলের নাগরিকদের একটি অংশ সেখানকার ইহুদি ও আরবদের একত্রে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।

গাজায় ইসরায়েলের টানা ১১ দিন গোলা বর্ষণের পর দেশটির ভেতরে জাতিগত দাঙ্গার পর হাজার হাজার মানুষ এমন দাবি নিয়ে সমাবেশ করলেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সমাবেশে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের দখলদারিত্বের অবসান ঘটানোর আহ্বানও জানানো হয়েছে।

এছাড়াও, ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন ও সহমর্মিতা এবং ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও সামরিক অবরোধের দাবি জনিয়ে গতকাল ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়ায় বিক্ষোভ হয়েছে।

লন্ডনে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া আমল নাগভি নামের একজন আল-জাজিরাকে বলেছেন, ‘আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে একত্রিত হয়েছি। …অনেকেই মনে করেন এসব সমাবেশে কোনো ফল হয় না। …অনেক কিছুই বদলে গেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত না শান্তি আসছে ও ফিলিস্তিনকে আমরা একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে পাচ্ছি ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

যুদ্ধবিরতির পর ধ্বংসস্তূপের ট্রমা

আল-জাজিরা’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় ধ্বংসস্তূপের ওপর এখন ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রাম করতে হচ্ছে সেখানকার অধিবাসীদের। তারা ইসরায়েলি হামলায় নিহত প্রিয়জনদের দাফনের পাশাপাশি নিজেদের বিধ্বস্ত বাড়িঘর নিয়েও চিন্তিত।

কেউ কেউ ভাবছেন, হয়তো কোনো একদিন ইসরায়েলের হামলায় তারাও নিহত হবেন।

গাজায় মুগাজি শিবিরের ১৭ বছর বয়সী ইব্রাহিম আল-তালা তার আত্মীয় ও বন্ধুদের চিরবিদায় জানিয়েছেন ফেসবুকের মাধ্যমে। গাজায় ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলার সময় তার ঘরের পাশে বোমা পড়েছিল। সেসময় তার মনে হয়েছে, এটাই বুঝি তার ও স্বজনদের জীবনের শেষ দিন।

তিনি লিখেছেন, ‘আমার এলাকায় বেশ কয়েকটি জায়গায় ৪০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়েছে। আগের যুদ্ধগুলোতে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল। এবার তা ছিল না। বোমা ও শেলের শব্দ এত বিকট যে তা বলে বোঝাতে পারব না।’

গাজার সুজাইয়া এলাকার রিম হানি (২৫) তার মা-বাবা ও পাঁচ ভাইবোনের সঙ্গে থাকেন। গত ১৪ মে তাদের বাসা থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে বোমা পড়ে।

তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমিও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের বিদায় বার্তা দিয়ে রেখেছি। তাদের অনুরোধ করে বলেছি, আমি মারা গেলে তারা যেন আমাকে স্মরণ করে এবং আমার জন্যে দোয়া করে।’

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago