ইসরায়েলি গণমাধ্যমে বাংলাদেশের নতুন পাসপোর্ট প্রসঙ্গ

‘ইসরায়েল ব্যতীত বিশ্বের সব দেশের ক্ষেত্রে এই পাসপোর্ট বৈধ’—বাংলাদেশের পাসপোর্টে লেখা এই বাক্যটি থেকে বাদ পড়েছে ‘ইসরায়েল ব্যতীত’ কথাটি।

গতকাল শনিবার ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম ‘দ্য জেরুজালেম পোস্টে’ এই কথা উল্লেখ করে বলে হয়েছে, ‘বাংলাদেশ ইসরায়েলেরও ওপর থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গিলাদ কোহেন এই অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।’

কিছুদিন আগেও বাংলাদেশি নাগরিকদের পাসপোর্টে বিশেষভাবে উল্লেখ ছিল, ‘ইসরায়েল ব্যতীত বিশ্বের সব দেশের ক্ষেত্রে এই পাসপোর্ট বৈধ।’

জেরুজালেম পোস্টের খবরে আরও বলা হয়, ‘কোনো আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক আলোচনা না হলেও বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশটির সাপ্তাহিক ব্লিটসকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলে ভ্রমণের সম্ভাবনা তৈরি করতে নতুন সরবরাহ করা পাসপোর্টগুলোতে সুনির্দিষ্টভাবে “ইসরায়েল ব্যতীত” কথাটির উল্লেখ থাকছে না।’

জেরুজালেম পোস্টের খবরে আরও বলা হয়, ‘অতীতে বাংলাদেশি নাগরিকরা যারা ইসরায়েল ভ্রমণ করেছেন অথবা ভ্রমণের চেষ্টা করেছেন, তাদের রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অথবা বাংলাদেশ ফিরতে সমস্যায় পড়তে পারেন বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।’

২০০৩ সালে তেল আবিবে অনুষ্ঠিত এক লেখক সম্মেলনে যোগ দিতে চাইলে সাপ্তাহিক ব্লিটসের সম্পাদক সাংবাদিক সালাহ চৌধুরীর ক্ষেত্রেও এরকম ঘটে। এরপর ধারাবাহিকভাবে তাকে কারাবন্দী, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা ও ধর্ম অবমাননায় অভিযুক্ত করা হয়।’

গিলাদ কোহেন বাংলাদেশের এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল যেভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মরোক্কো ও সুদানের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে; দুদেশের সরকারের মধ্যে তেমন আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন।

এছাড়া কোহেন এক টুইটার বার্তায় জানিয়েছেন, ‘গ্রেট নিউজ! বাংলাদেশে ইসরায়েলের ওপর থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। এটি একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ এবং আমি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাব এ ব্যাপারে আরেকটু এগিয়ে এসে ইসরায়েল সরকারর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে। যাতে আমাদের দুদেশের মানুষই উপকৃত ও উন্নতি করতে পারে।’

তবে বাংলাদেশ ইসরায়েলের ব্যাপারে নীতির পরিবর্তন করেনি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

এ বিষয়ে আজ রোববার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘নতুন পাসপোর্টে ‘ইসরায়েল ব্যতীত (except Israel)’ না লেখার অর্থ এই না যে বাংলাদেশ তার অবস্থান পরিবর্তন করেছে। বাংলাদেশ এখনো ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়নি।’

এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকেও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশি ই-পাসপোর্টের আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে ‘ইসরায়েল ব্যতীত’ কথাটি বাদ দেওয়া হলেও, এতে মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে বাংলাদেশে পররাষ্ট্রনীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি এবং বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের ইসরায়েল ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা অপরিবর্তিত থাকবে।

ইসরায়েল সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকার তার অবস্থান থেকে বিচ্যুত হয়নি এবং বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে তার দীর্ঘস্থায়ী অবস্থানে অটুট আছে বলেও জানানো হয়েছে।

পোস্টে আরও বলা হয়, সম্প্রতি আল-আকসা মসজিদ ও গাজায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। জাতিসংঘের প্রস্তাবের আলোকে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল দুটি পৃথক রাষ্ট্র এবং পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ নীতিগত অবস্থানে দৃঢ়।

আরও পড়ুন:

বাংলাদেশ এখনও ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয় না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda urges unity, quick action to institutionalise democracy

She also demanded a comprehensive list of victims of abduction, murder, and extrajudicial killings

1h ago