‘হামরা মাটিত পড়া ধান কুড়াই’

ধান কাটার মৌসুম শুরু হলে গ্রামে দেখা যায় শিশু থেকে বৃদ্ধ নানা বয়সী ধানকুড়ানিদের। ছবি: স্টার

‘হামরা মাটিত পড়া ধান কুড়াই। ধান কুড়ি কুড়ি ঘরোত থই, আর যখন ঘরোত খাবার না থাইকবে তখন ধান থাকি চাইল করি খামো।’ কথাগুলো বলছিলেন গ্রামে ধানকুড়ানি বলে পরিচিত আমেনা বেওয়া (৫৮)।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার উত্তর সাপ্টানা গ্রামের এই ধানকুড়ানি আরও বলেন, ‘অ্যাকনা দুকনা করি ধান কুটি কুটি করি কুড়াই। সারাদিন ধান কুড়িয়া তিন-পাঁচ কেজি ধান পাই। এইল্যাই হামার ম্যালা।’

একই গ্রামের ধানকুড়ানি হিসেবে পরিচিত মহুয়া খাতুন (৩৬) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘হামার তো আর জমিজমা নাই যে হামরা আবাদ কইরমো। হামরা থাকি মাইনসের জমিত। মাইনসে ধান কাটি যেইকনা ধান মাটিত পড়ে সেইকনা ধান কুড়াই। ১৫-১৬ দিন ধান কুড়িয়া ঘরোত দেড় থাকি দুই মণ ধান জমবার পাই।’

ধান কাটার মৌসুম শুরু হলে গ্রামে দেখা যায় শিশু থেকে বৃদ্ধ নানা বয়সী ধানকুড়ানিদের।

কৃষকরা জমি থেকে ধান কাটার সময় কিছু ধান মাটিতে পড়ে যায়। ধানকুড়ানিরা মাটি থেকে এসব ধান কুড়িয়ে নেন। এক মৌসুমে প্রত্যেক ধানকুড়ানি সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন মণ ধান পেতে পারেন। যা তাদের সংসারে দুঃসময়ে খাবারের জোগান দেয়।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার চন্দ্রঘোনা গ্রামের ধানকুড়ানি জামেলা বেওয়া (৫৫) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কয়েকবছর আগোত ম্যালা ধান পাছিলোং অ্যালা আর পাওয়া যায় না। যেইকনা ধান কুড়ি পাং তাতে হামার চলে।’

এই গ্রামের কৃষক আফাস উদ্দিন (৬০) জানান, ধানের মৌসুম আসলে গ্রামে শুধু কৃষকের ঘরেই ধান থাকে না, ধানকুড়ানিদের ঘরেও থাকে। গ্রামে অনেক ধানকুড়ানির ঘরে ডুলিও রয়েছে ধান রাখার জন্য।

কুড়িগ্রামে এনজিও প্রতিনিধি মোবারক হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ধানকুড়ানিরা দিনভর জমিতে পরে থাকা ধান কুড়িয়ে তিন থেকে পাঁচ কেজি ধান পান। তারপরও তারা প্রতিদিন সকালে মাঠে ছোটেন ধান কুড়াতে। দরিদ্র এই মানুষগুলো তাদের বিপদের সঞ্চয় হিসেবে এগুলো রেখে দেন।’

Comments

The Daily Star  | English
US attack on Iran nuclear sites

Iran denounces US attack as ‘outrageous’

Iran says 'no signs of contamination' after US attacks on key nuclear sites

10h ago