বাংলাদেশের পাসপোর্ট আগে আন্তর্জাতিক মানের ছিল না?
বাংলাদেশের ই-পাসপোর্টে ‘ইসরায়েল ব্যতীত সকল দেশের জন্য এই পাসপোর্ট বৈধ’ লেখা থেকে ‘ইসরায়েল ব্যতীত’ শব্দ দুটি তুলে দেওয়ায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শব্দ দুটি তুলে দেওয়ায় বাংলাদেশকে স্বাগত জানিয়েছে। কেউ কেউ আবার মনে করছেন সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি মুসলিম দেশ ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ায় বাংলাদেশও সেই পথে হাঁটছে। বিষয়টি নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার টেলিফোনে কথা বলেছে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত শমসের মবিন চৌধুরী বীর বিক্রম, সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে।
শমসের মবিন চৌধুরী এবং ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘“ইসরায়েল ব্যতীত” শব্দ দুটি তুলে দিলেও বাংলাদেশের সঙ্গে ইসরায়েলের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই এবং ইসরায়েল বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হবে না।’
এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘শব্দ দুটি তুলে দেওয়ায় বাংলাদেশের কোনো নাগরিক চাইলে ব্যক্তিগতভাবে ইসরায়েল ভ্রমণ করতে পারবেন।’
ই-পাসপোর্ট থেকে ‘ইসরায়েল ব্যতীত’ কথাটি তুলে দেওয়া বিষয়ে জানতে চাইলে শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘ই-পাসপোর্ট হলো অত্যাধুনিক পাসপোর্ট। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে পাসপোর্টে এই ধরনের কোনো কিছু লেখা থাকার কথা নয়। আন্তর্জাতিক পাসপোর্টের সঙ্গে মিল রাখতেই শব্দ দুটি বাদ দেওয়া হয়েছে।’
আমাদের পাসপোর্ট আগে আন্তর্জাতিক মানের ছিল না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের পাসপোর্ট সব সময় আন্তর্জাতিক মানের ছিল। তবে আগের হাতে লেখা এবং এমআরপি পাসপোর্ট একেক দেশে একেক ধরনের ছিল। তাই বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে শব্দ দুটি তুলে দেওয়া হয়েছে।’
পাসপোর্ট থেকে শব্দ দুটি তুলে দেওয়ায় কেউ অন্য দেশ হয়ে ইসরায়েলে যেতে চাইলে সে ক্ষেত্রে সরকার কী ব্যবস্থা নিতে পারে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেউ ভালো কাজের জন্য ইসরায়েলের দখলকৃত অঞ্চলে যেতে চাইলে বা আল আকসা মসজিদে নামাজের জন্য যেতে চাইলে আমরা তাকে স্বাগত জানাব। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ইসরায়েল কখনই ভিসা দিবে না এবং কেউ যেতেও পারবে না। তাছাড়া বাংলাদেশের কোনো নাগরিক কেন ইসরায়েলে যাবে?’
সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘ইসরায়েলের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করার কোনো পরিকল্পনা নেই এবং সরকার এই পরিকল্পনার ধারে কাছেও নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েলের পররাষ্ট্র দপ্তর তাদের কূটনৈতিক অর্জন হিসেবে সারা বিশ্বকে বিষয়টি দেখাতে চাইবে। তাই তারা শব্দ দুটি পাসপোর্ট থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি বেশি করে প্রচার করছে। ইসরায়েল কি বলে না-বলে সেটাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। কারণ আমরা ইসরায়েলের নীতির বিরোধিতা করে আসছি। ইসরায়েল বিষয়ে আমাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন নেই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘পাসপোর্টে “ইসরায়েল ব্যতীত” শব্দ না লিখেও ইসরায়েল বিষয়ে আমাদের যে অবস্থান, তা আমরা প্রকাশ করতে পারি। যা অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলো করছে। শব্দ দুটি না রাখার সিদ্ধান্ত অনেক আগেই নেওয়া হয়েছে। তবে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের হামলার এই সময় কেউ হয়ত সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার জন্য বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে।’
‘ইসরায়েল ব্যতীত’ শব্দ দুটি তুলে দেওয়ার ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটু বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা যে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেইনি এবং ইসরায়েলের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই তা সরকারকে বারবার প্রচার করতে হবে।’
তাছাড়া পাসপোর্ট থেকে বিষয়টি তুলে দেওয়ার ফলে কেউ অন্যভাবে ইসরায়েলে যেতে চাইলে সরকার প্রযুক্তির মাধ্যমে তার ব্যবস্থা নিতে পারে বলে জানান তিনি।
সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘“ইসরায়েল ব্যতীত” কথাটি তুলে দেওয়ার ফলে কেউ এখন চাইলে ব্যক্তিগতভাবে ইসরায়েল ভ্রমণ করতে পারবে। এমন কি কেউ চাইলে ইসরায়েলের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে বাণিজ্যও করতে পারবে। ইসরায়েল ভ্রমণ বিষয়ে আগে যে বাধা ছিল তা এখন আর থাকল না।’
‘ইসরায়েল ইতিমধ্যে বাংলাদেশের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে এবং তারা চায় মুসলিম বিশ্বের মানুষজন তাদের দেশে আসুক। তারা যদি কোনো বাংলাদেশি নাগরিককে ভিসা দেয় এবং বাংলাদেশের কেউ সেখানে যায়, তাহলে আগে যেমন শাস্তির বিধান ছিল সেটি এখন আর থাকবে না,’ বলেন এম হুমায়ুন কবির।
আরও পড়ুন:
Comments