বঙ্গবন্ধু সেতুতে বিধিনিষেধের প্রভাব সামান্যই

বঙ্গবন্ধু সেতু। স্টার ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের মধ্যে আরোপিত বিধিনিষেধের আওতায় গত মাসের শুরু থেকেই দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ ছিল। যদিও ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে দেশের উত্তর-পশ্চিমের জেলাগুলোতে চলাচলকারী যানবাহনের ক্ষেত্রে এর প্রভাব ছিল খুবই সামান্য।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) মাসিক প্রতিবেদন অনুসারে, এপ্রিল মাসে দেশের সবচেয়ে বড় এই সেতু দিয়ে প্রায় ৫ লাখ ৭২ হাজার যানবাহন পার হয়েছে। মার্চে এই সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ১৪ হাজার।

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত বছরের এপ্রিল মাসে যখন গণপরিবহন চলাচল বন্ধ ছিল, তখন এই সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ১০ হাজারের মতো।

সূত্রমতে, ‘লকডাউন’ এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি ও মটরসাইকেল চলাচল উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে এসব হালকা যান অনেকটা বাসের জায়গা নিয়েছে।

কোভিড-১৯ মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে সরকার গত ৫ এপ্রিল থেকে জরুরি কাজ ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়া ও গণপরিবহন চলাচলের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করে।

চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারির পরের দিন গতকাল সোমবার সরকার দূরপাল্লার বাস, যাত্রীবাহী ট্রেন ও লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দেয়।

নতুন শর্তে বলা হয়, আন্তঃজেলা বাসসহ সব ধরনের গণপরিবহন স্বাস্থ্যবিধি মেনে আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে পারবে।

সেতু কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদন যা বলছে

যমুনা নদীর ওপর তৈরি বঙ্গবন্ধু সেতু রাজধানীর সঙ্গে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমের জেলাগুলোকে সরাসরি সড়ক ও রেলপথের মাধ্যমে যুক্ত করেছে।

সেতু কর্তৃপক্ষ গত এপ্রিল মাসে মোট ৪৯ কোটি ১৮ লাখ টাকার টোল আদায় করেছে। মার্চে এর পরিমাণ ছিল ৫৯ কোটি টাকার কিছু বেশি।

গত বছরের এপ্রিলে বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল আদায় হয়েছিল ২৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। করোনার বিস্তার রোধে ওই বছরের ২৬ মার্চ থেকে পরের প্রায় দুই মাস গণপরিবহন চলাচল বন্ধ ছিল।

সূত্রমতে, স্বাভাবিক সময়ে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে প্রতিদিন ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ বাস চলাচল করে। অর্থাৎ প্রতি মাসে এই সেতু দিয়ে চলাচলকারী বাসের সংখ্যা ১ লাখ ৫ হাজার থেকে ১ লাখ ১৫ হাজার পর্যন্ত।

এ ছাড়া এই সেতু দিয়ে স্বাভাবিক সময়ে দৈনিক ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার ব্যক্তিগত গাড়ি পার হয়। ‘লকডাউনের’ মধ্যে এটা আড়াই থেকে তিন গুণ বেড়েছে। আর মোটরসাইকেলের সংখ্যাও বেড়েছে বহুগুণ।

এদিকে চলতি মাসের শুরুর দিকে ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে সেতু দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের সংখ্যাও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।

সেতু কর্তৃপক্ষ যেহেতু প্রতি মাসের শেষে চলাচলকারী যানবাহনের পরিসংখ্যান প্রকাশ করে, সেহেতু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।

যদিও ঈদুল ফিতরের আগে ১২ মে সকাল ৬টা থেকে ১৩ মে সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে রেকর্ডসংখ্যক যানবাহন পার হয়েছে। এ সময়ে আদায়কৃত টোলের পরিমাণও রেকর্ড ছাড়িয়েছে।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির পাভেল তখন জানিয়েছিলেন, ওই দিন সেতু দিয়ে পার হওয়া যানবাহনের সংখ্যা ছিল ৫২ হাজার ৭৩০টি। আর আদায়কৃত টোলের পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।

প্রায় একই রকম চিত্র ছিল ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ মহাসড়কের মুক্তারপুর সেতুতে।

সেতু কর্তৃপক্ষের হিসাবে, মুক্তারপুর সেতু থেকে এপ্রিল মাসে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৫১ লাখ টাকা। মার্চে এর পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

আর গত বছরের এপ্রিলে এই সেতু থেকে আদায়কৃত টোলের পরিমাণ ছিল ৮৩ লাখ টাকা।

বাস-ট্রেন-লঞ্চ চলাচল শুরু

গতকাল সোমবার থেকে সারাদেশে আন্তঃজেলা বাসসহ ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ জানান, মাস্ক ছাড়া কোনো যাত্রী যেন বাসে উঠতে না পারে, সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করার জন্য তাদের সব সদস্যদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এনায়েত উল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, কেউ সরকারি নির্দেশনা ভঙ্গ করছে কিনা- তা দেখার জন্য বাস টার্মিনালগুলোতে সমিতির পক্ষ থেকে লোক রাখা হয়েছে।

গতকাল রাজধানীর গাবতলী, শ্যামলী, কল্যাণপুর ও মিরপুর মাজার রোড এলাকা পরিদর্শন করে দ্য ডেইলি স্টারের এই প্রতিবেদক দেখতে পান, পরিবহন শ্রমিকরা লাউডস্পিকার ব্যবহার করে বাসে ওঠার আগে মাস্ক পরার জন্য যাত্রীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন।

বাংলাদেশ বাস ট্রাক মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক শুভঙ্কর ঘোষ রাকেশ জানান, পরিবহন মালিকদের প্রত্যাশার তুলনায় এদিন যাত্রীর সংখ্যা ছিল কম।

শ্যামলী এনআর ট্রাভেলস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভঙ্কর এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরা আশা করছি পর্যায়ক্রমে যাত্রীর সংখ্যা বাড়বে।’

একই সঙ্গে গতকাল ৩৭ জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেন চালু করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

এ ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশনাগুলো ঠিকঠাক পালন করা হচ্ছে কিনা- তা দেখার জন্য রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পরিদর্শন করেন।

বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ঢাকা) খায়রুল ইসলাম বলেন, গতকাল সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঢাকা থেকে আটটি ট্রেন ছেড়ে গেছে।

আরেক রেলওয়ে কর্মকর্তা বলেন, গতকাল বিক্রিত টিকিটের পরিমাণ ছিল মোট আসনের প্রায় ৪০ শতাংশ।

একই দিনে ভোর ৬টায় ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে সারা দেশে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, সব ধরনের সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করতে তারা কাজ করছেন।

প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ

Comments

The Daily Star  | English

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

10h ago