মুশফিকের একক নৈপুণ্যে লড়াইয়ের পুঁজি

Mushfiqur Rahim
চোখ জুড়ানো সেঞ্চুরির পথে মুশফিকুর রহিমের শট। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

প্রথম ম্যাচেও দলের বিপর্যয়ে চওড়া হয়েছিল মুশফিকুর রহিমের ব্যাট। রিভার্স সুইপে সেবার সেঞ্চুরি হাতছাড়া হলেও এবার সেই আক্ষেপ কাটল। এবার আরও বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাটিংয়ে মাত করেছেন তিনি। বাউন্ডারি মারা কঠিন দেখে, দৌড়ে রান নেওয়ার দিকে মন দিয়েছিলেন। তাতে শতভাগ সফল হয়ে করেছেন দৃষ্টিনন্দন সেঞ্চুরি। তার এমন দিনে শুরুতে বিপদে পড়া বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত পেল লড়াইয়ের পুঁজি।

মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার মাহমুদউল্লাহর ৪০ পেরুনো এক ইনিংস ছাড়া পুরোটাই প্রায় মুশফিকের একার লড়াই। ধীরগতির কঠিন উইকেটে তার ঝলকে ২৪৬  রান করেছে বাংলাদেশ। দলের অর্ধেকের বেশি রান এসেছে মুশফিকের ব্যাটে। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি আউট হন ১২৫ রান করে।  

আড়াইশ ছাড়িয়ে যেতে না পারলেও উইকেটের ধরন বলছে স্পিন আক্রমণে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের পক্ষে এই রান ডিফেন্ড করা খুব সম্ভব।

টস জিতে ব্যাট করতে গিয়ে ইসুরু উদানার এলোমেলো প্রথম ওভারে আগ্রাসী শুরু পেয়েছিলেন তামিম ইকবাল। টানা তিন চারে শুরু তার। ওই ওভারে পয়েন্ট ১২ রানে পান জীবনও। দুশমন্ত চামিরার পরের ওভারেই বিদায় বাংলাদেশ অধিনায়কের।

চামিরার ফুল লেন্থের ভেতরে ঢোকা বল ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন। ব্যাটে নিতে পারেননি। মাঠের আম্পায়ার আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে তাকে ফেরায় শ্রীলঙ্কা। চামিরার ওই ওভারে খানিক পর হুবহু আরেক ডেলিভারিতে অন্ধকার বাংলাদেশের ড্রেসিং রুম। আরেকটি ভেতরে ঢোকা বলে সাকিব আল হাসানও কোন রান না করেই ফেরেন এলবিডব্লিউ হয়ে।

১৫ রানেই পড়ে যায় দুই উইকেট। এরপর মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ছিলেন লিটন দাস। রানের খোঁজে থাকা এই ব্যাটসম্যান থিতু হয়ে গিয়েছিলেন। আভাস দিচ্ছিলেন বড় ইনিংসের। চামিরার ঝাঁজ অনায়াসে খেলে চাপ সরিয়েছিলেন সহজে।

কিন্তু চায়নাম্যান লাকসান সান্দাকান আসতেই বাজে শটে হয় তার ইতি। সান্দাকানের অনেক বাইরের বল তাড়া করে লোপ্পা ক্যাচ দেন পয়েন্টে। ৪২ বলে করেন ২৫ রান।

মোহাম্মদ মিঠুনের জায়গায় পাঁচে সুযোগ পেয়েছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন, কাজে লাগাতে পারেননি। ১২ বলে ১০ করে যেভাবে আউট হয়েছেন, নিশ্চিতভাবে কয়েকদিন আক্ষেপে পুড়ার কথা। ওয়াইড বলে ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে।

৭৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বেকায়দায় পড়া বাংলাদেশের ত্রাতা ভূমিকায় ফের পাওয়া যায় মুশফিক-মাহমুদউল্লাহকে। হাতের তালুর মতো চেনা মন্থর উইকেটের ভাষা বুঝে নিয়ে দুজনে টেনে নিতে থাকেন ইনিংস। ওভারপ্রতি পাঁচের কাছাকাছি রান করে এগিয়ে যেতে থাকে তাদের জুটি।

 ইনিংসের মাত্র দ্বিতীয় ওভারে ক্রিজে যেতে হয়েছিল মুশফিককে। তামিম-সাকিবকে হারিয়ে তখন দিশেহারা অবস্থা দলের। চাপের মধ্যে গিয়ে থিতু হতে সময় নিয়েছেন। আরেক পাশে আসা-যাওয়ার মধ্যে নিজেকে রেখেছেন সচল। বাউন্ডারি মারা কঠিন দেখে আগের দিনের মতো দৌড়ে রান নেওয়ায় মন দেন বেশি।

পঞ্চম উইকেটে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর ৮৭ রানের জুটি থেমেছে উইকেটকিপিংয়ের দক্ষতায়। সান্দাকানের লেগ স্টাম্পের বল পেছন দিকে খেলতে গিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। দারুণ রিফ্লেক্সে সরে গিয়ে ক্যাচ জমান অধিনায়ক কুসল পেরেরা। আগের ম্যাচে ফিফটি করা মাহমুদউল্লাহ এবার ফেরেন ৫৮ বলে ৪১ করে।

আফিফ হোসেন পেয়েছিলেন ভালো একটি মঞ্চ। থিতু হয়ে ফিনিশ করার সুযোগ ছিল তার সামনে। এই তরুণও করেন হতাশ। ৯ বলে ১০ রান করে উদানার বলে মিড অনে যায় তার ক্যাচ।

খানিক পর আটে নামা মেহেদী হাসান মিরাজকে গুগলিতে বোকা বানিয়ে বোল্ড করে দেন হাসারাঙ্গা। দ্রুত ৩ উইকেট হারানোর পর বৃষ্টিতে ২৬ মিনিট বন্ধ থাকে খেলা। ১৪ বল পরই ফের নামে ঝুম বৃষ্টি। এই ১৪ বলের মধ্যে মুশফিক ছাড়িয়ে যান ৯০। অষ্টম সেঞ্চুরির থেকে তখন ৪ রান দূরে দাঁড়িয়ে তিনি।

৭০ পর্যন্ত মেরেছেন কেবল এক বাউন্ডারি। পরিস্থিতি দাবি মেটাতে বড় শটের ঝুঁকির দিকে যাননি, আবার রানের চাকাও পড়তে না দিয়ে নিয়েছেন প্রচুর এক-দুই রান।

দ্বিতীয় দফা বৃষ্টি থেমে খেলা শুরুর পর তিন অঙ্কে যেতে সময় নেননি মুশফিক। ১১৪ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের আরেকটি শতক। সাইফুদ্দিন আর শরিফুল ইসলাম পর পর আউট হয়ে গেলে ৫০ ওভার ব্যাট করা কঠিন হয়ে পড়ে। ৪৯তম ওভারে মুশফিক নিজেই কাভারে ক্যাচ দিলে ১১ বল কম খেলতে পারে বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ: ৪৮. ১ ওভারে ২৪৬   (তামিম ১৩, লিটন ২৫ , সাকিব ০ , মুশফিক  ১২৫, মোসাদ্দেক ১০, মাহমুদউল্লাহ  ৪১, আফিফ ১০, মিরাজ ০, সাইফুদ্দিন ১১, শরিফুল  ০, মোস্তাফিজ  ০* ; উদানা ২/৪৯ , চামিরা ৩/৪৪, হাসারাঙ্গা ১/৩৩, শানাকা ০/৩৮, সান্দাকান ৩.৫৪  , ধনঞ্জয়া ০/২৩ )

 

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Trump to decide on US action in Israel-Iran conflict within 2 weeks

Israel hits nuclear sites, Iran strikes hospital as conflict escalates

1d ago