২৬ মে ১৯৭১: বুরুঙ্গা গণহত্যা
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ২৬ মে একটি ঘটনাবহুল দিন। এদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী লোকসভায় পাকিস্তানি হানাদারদের পূর্ব বাংলায় গণহত্যা ও সীমান্ত রাজ্যগুলোর নিরাপত্তা ও শরণার্থী বিষয়ে তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। ব্রিটেনের ওয়ার অন ওয়ান্টের দুই প্রতিনিধি সীমান্তের শরণার্থী শিবির পরিদর্শন ও পাকিস্তানে না ঢুকতে দেয়া বিষয়টি কলকাতায় উপস্থাপন করেন। পূর্ব পাকিস্তান থেকে যারা শরণার্থী হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছেন তাদের সাহায্য করতে যুক্তরাষ্ট্র রাজি আছে বলে, বিবৃতি দেন জাতিসংঘের এক মুখপাত্র। করাচিতে চীনের কনসুলেট জেনারেল কুন চি তার বিবৃতিতে বলেন, "অখণ্ড পাকিস্তান রক্ষায় চীন পাকিস্তানকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে। প্রয়োজনে পাকিস্তানের উপর হামলা হলে সামরিক সাহায্য দিতেও দ্বিধাবোধ করবে না চীন।" এদিন ছিল বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন। কলকাতায় বাংলাদেশ মিশন কবি ভবনে গিয়ে এদিন কবিকে পুষ্পস্তবক দিয়ে কবিকে শ্রদ্ধা জানায়। অন্যদিকে এদিন বাংলাদেশ মিশনের সামনে সঙ্গীত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সিলেটের বালাগঞ্জের বুরুঙ্গায় এদিন পৈশাচিক গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি হানাদারেরা। এই গণহত্যায় শহীদ হন ৯৪ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। এদিন ছাতকে রাজাকারদের হাতে ধরা পড়া ১৮ জন মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে যাওয়া তরুণের মধ্যে ১৭ জনকে নির্মম কায়দায় হত্যা করে হানাদারেরা। ব্রিটেনে এদিন পাকিস্তান ক্রিকেট দল ও স্থানীয় একটি ক্রিকেট দলের মধ্যে খেলা শুরু হওয়ার আগে বাঙালিরা পূর্ব পাকিস্তানে চলমান গণহত্যার প্রতিবাদ জানায়। দেশব্যাপী এদিন হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে মুক্তিযোদ্ধারা।
লোকসভায় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ভাষণ
২৬ মে আগের দুই দিনের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী লোকসভায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য দেন। একই সঙ্গে তিনি ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণ নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যে ভয়ংকর অবস্থা ও গণহত্যা চলছে, তাতে করে বিশ্বের সব দেশকে এগিয়ে এসে দায়িত্ব নিতে হবে। দায়িত্ব না নিলে এর পরিণাম বিপজ্জনক হবে। এখন পূর্ব বাংলায় সাধারণ মানুষ কি অবস্থার মধ্যে বাস করছে তা অকল্পনীয়। তাদের তীব্র বাস্তুসমস্যা দেখা দিয়েছে। তাদের বাড়িঘর, বাসগৃহ সমস্ত কিছু পুড়িয়ে দিয়েছে, ওখানে নিরীহ নরনারী শিশুদের উপর পৈশাচিক গণহত্যা চালানো হয়েছে। পূর্ব বাংলার সমস্যা এখন কেবল তাদের সমস্যাই নয়, বরং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। আমরা উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করি না। কিন্তু এখানে বাংলাদেশের সমস্যাও আমরা দেখছি। বাংলাদেশের স্বার্থও আমাদের দেখতে হবে। আর এই জন্যই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়টি আমাদের ভেবে দেখতে হচ্ছে।
ভারতে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে এদিন
২৬ মে দিল্লিতে ভারত সরকারের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, তিন দিন ধরে সীমান্তে যেভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে তার জন্য পূর্বাঞ্চলে সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার জন্য বলা হয়েছে। পাকিস্তান যদি সংযত না হয় তবে কঠিন ফল ভোগ করতে হবে তাদের।
২৬ মে ব্রিটিশ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ওয়ার অন ওয়ান্টের দুই প্রতিনিধি রেভারেন্ড ব্রুসকেন্ট ও জন হরগান শরণার্থী শিবির ও সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে কলকাতায় ফিরে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, "আমরা পশ্চিমবঙ্গে আসার আগে পূর্ব পাকিস্তানে যাওয়ার জন্য অনুমতি চাইলে পাকিস্তান সরকার সেই অনুমতি দেয়নি। অথচ আমরা শুনেছি পাকিস্তানে কি নির্মম হত্যাযজ্ঞ চলছে। শরণার্থীরা আমাদেরকে সব খুলে বলেছে। ভারত সরকারকে ধন্যবাদ যে তারা মানবিক কারণে সীমান্ত উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। পূর্ব পাকিস্তানের এই সমস্যা অচিরেই সমাধান হওয়া প্রয়োজন।
কলকাতায় বিদ্রোহী কবির জন্মদিন উদযাপন
২৬ মে ছিল বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন। এদিন নজরুল ৭৩ বছরে পদার্পণ করলেন। কবির জন্মদিন উপলক্ষে কলকাতায় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের বাংলাদেশ মিশনের প্রধান হোসেন আলী সকালে কবি ভবনে গিয়ে কবিকে পুষ্পমাল্য পরিয়ে দেন। এসময় কবির সহধর্মিণীর হাতে পুষ্পস্তবক দেয়া হয়। এদিন সকালে কলকাতায় বাংলাদেশ মিশনের সামনে সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে নজরুল একাডেমি। এই অনুষ্ঠানে "তোরা সব জয়ধ্বনি কর" গান দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন গণনাট্য সংস্থার শিল্পীরা। আর অনুষ্ঠান শেষ হয় বিশিষ্ট রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী সন্জীদা খাতুনের কণ্ঠে "আমার সোনার বাংলা" গানের মধ্য দিয়ে। এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য নিজের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে আমরা সবাই রাজি আছি বলে সংকল্প করা হয়। এই অনুষ্ঠানে কবিকে শ্রদ্ধা জানান রণেশ দাশগুপ্ত। এদিন কবিভবনে গিয়ে বিদ্রোহী কবিকে বহু বাংলাদেশি লেখক, সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীরা সম্মান ও শ্রদ্ধা জানান। এদিন সন্ধ্যায় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কবিকে পুষ্পমাল্য পরিয়ে সম্মান জানানো হয়।
বহির্বিশ্বে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত ঘটনা ও বিবৃতি
জাতিসংঘের মুখপাত্রের বিবৃতি
২৬ মে জাতিসংঘের এক মুখপাত্র বলেন, 'পূর্ব পাকিস্তান থেকে যারা শরণার্থী হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছেন তাদের সাহায্য করতে যুক্তরাষ্ট্র রাজি আছে। একই সঙ্গে জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্টের সঙ্গে জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি আগা শাহীর মধ্যে আলোচনা হয়েছে। এই আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। আমরা আশা করি দারুণ একটি সমাধান দেখতে পাবো।'
ব্রিটেনে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের ম্যাচে গণহত্যার প্রতিবাদ
২৬ মে ব্রিটেনের কেন্টের ক্রিকেট মাঠে পাকিস্তান ক্রিকেট দল ও কেন্ট ক্রিকেট দলের মধ্যে তিন দিনব্যাপী একটি ম্যাচের প্রথম দিন খেলা শুরু হওয়ার পর প্রায় ৫০-৬০ জন প্রবাসী বাঙালি প্ল্যাকার্ড হাতে পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানান। এসময় আন্দোলনের একজন নেতা বলেন, এখন বাংলাদেশে গণহত্যা চলছে, অথচ আমরা চোখ বুজে সব সহ্য করছি। আমরা ন্যূনতম প্রতিবাদ করার মানসিকতাটুকু হারিয়ে ফেলেছি। গণহত্যা বন্ধের জন্য আজ আমরা হানাদারদের নৃশংসতা ও নির্মমতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে হাজির হয়েছি। এসময় কয়েকজন প্রতিবাদকারী মাঠে ঢুকে সাইট স্ক্রিনের সামনে দিয়ে হেঁটে যান। এ সময় খেলা কিছুক্ষণ বন্ধ ছিল।
চীনের পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন প্রকাশ
করাচিতে চীনের কনসুলেট জেনারেল কুন চি তার বিবৃতিতে বলেন, "অখণ্ড পাকিস্তান রক্ষায় চীন পাকিস্তানকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে। প্রয়োজনে পাকিস্তানের উপর হামলা হলে সামরিক সাহায্য দিতেও দ্বিধাবোধ করবে না চীন।"
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য
২৬ মে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী কিথ হলিয়ক সিঙ্গাপুর সফরকালে পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে যা হচ্ছে তা নির্মমতা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এই গণহত্যা ও নিপীড়নের সময় আর যাই হোক নিউজিল্যান্ড চুপ ও নিষ্ক্রিয় থাকতে পারে না। বাঙালি শরণার্থী ও নিরীহ সাধারণ মানুষের প্রতি নিউজিল্যান্ডের জনগণ ও সরকার সবসময়ই মানবিক ও সহানুভূতিশীল।
মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগের প্রধান চার্লস ডব্লিউ ব্রে'র বিবৃতি
২৬ মে মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগের প্রধান চার্লস ডব্লিউ ব্রে ওয়াশিংটন থেকে এক বিবৃতিতে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের বিষয়টি একান্তই পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এই বিষয়ে আমরা কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করতে পারি না। যুক্তরাষ্ট্র চায় না হস্তক্ষেপের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় কোনো ধরনের উত্তেজনার সৃষ্টি না হোক। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তান ও ভারতকে দায়িত্বশীল ও সংযত আচরণ করার জন্য অনুরোধ করেছে।
দেশব্যাপী গণহত্যা ও প্রতিরোধযুদ্ধ
বুরুঙ্গা গণহত্যা
২৬ মে দুপুরে পাকিস্তানি হানাদারেরা সিলেটের বালাগঞ্জের বুরুঙ্গায় নির্মম গণহত্যা চালায়। এই গণহত্যায় শহীদ হন ৯৪ জন সাধারণ মানুষ।
এর আগের দিন দুপুর বেলা, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আসার খবরে বুরুঙ্গা এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিকেল ৪টার দিকে গ্রামবাসীরা স্থানীয় চেয়ারম্যান ইনজাদ আলীর সাথে দেখা করে। এসময় চেয়ারম্যান ইনজাদ আলীর নির্দেশে বুরুঙ্গা এবং তার আশপাশের গ্রামগুলোতে ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করা হয় যে ২৬ মে, বুরুঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে একটি শান্তি কমিটি গঠন করা হবে এবং 'পিস কার্ড' বিতরণ করা হবে।
চেয়ারম্যানের আশ্বাসের পরও গ্রামবাসীর মধ্যে কিছুটা আতংক ও ভয় ছিল। কিন্তু তারা চেয়ারম্যানের কথায় বিশ্বাস করে সকাল আটটায় বুরুঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এসে জমা হতে থাকে। তখন বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এক হাজারেরও বেশি মানুষ সমবেত হয়েছে। সকাল ৯টার দিকে আব্দুল আহাদ চৌধুরী এবং ড. আব্দুল খালেক, ক্যাপ্টেন নূর উদ্দিনের সহযোগিতায় পাকিস্তানি হানাদারেরা জিপে করে বিদ্যালয় মাঠে এসে পৌঁছে। এসময় তারা তাদের হাতের তালিকা দেখে উপস্থিতির হিসাব নেয়। এর মধ্যে হানাদারদের অন্য একটি দল গ্রামের ঘরে ঘরে যায় এবং পুরুষদের বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উপস্থিত হতে আদেশ দেয়। সকাল ১০টার দিকে হিন্দু এবং মুসলিমদের আলাদা করা হয়। এরপর হিন্দুদের অফিস কক্ষে একত্র করা হয় আর মুসলিমদের বিদ্যালয়ের অন্য একটি শ্রেণীকক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর কালেমা পাঠ করতে এবং পাকিস্তানের জাতীয় সংগীত গাইতে বলা হয় তাদের। তারপর বেশিরভাগ লোককে ছেড়ে দেয়া হয়। বাকি মুসলিমদের বলা হয় চারগাছি দড়ি দিয়ে হিন্দুদের বেঁধে দিতে। এসময় কিছু হিন্দু ভয়ে চিৎকার করতে শুরু করেন। এসময় পাকিস্তানি হানাদারেরা ব্রাশফায়ার শুরু করে।
এদিন দুপুরের দিকে, বিদ্যালয় ভবন থেকে হিন্দুদের বাইরে মাঠে নিয়ে এনে নব্বই জনকে তিনটি সারিতে দাঁড় করিয়ে ক্যাপ্টেন নূর উদ্দিনের নির্দেশে মেশিনগান থেকে ব্রাশফায়ার শুরু করে হানাদারেরা। গণহত্যা শেষে হানাদারেরা শহীদদের লাশ কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে দেয়। এরপর সিলেট জজ কোর্টের একজন নামকরা উকিল রাম রঞ্জন ভট্টাচার্যকে হানাদারেরা চলে যেতে বলে। তিনি তার চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই তাকে পিছন থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। গণহত্যার পর আহাদ চৌধুরী এবং ড. আব্দুল খালেকের নেতৃত্বে আট থেকে দশ জন রাজাকারের একটি দল পুরো গ্রামে লুটপাট চালায়।
২৬ মে কুড়িগ্রামে কালুরঘাটে মুক্তিযোদ্ধাদের ‘রেকি’ দলের সঙ্গে পাকিস্তানি হানাদারের সম্মুখ সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে হানাদারদের ২ জন সৈন্য নিহত হয়।
২৬ মে ছাতকে ১৮ জন যুবক মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে যাওয়ার পথে বেতুরার চেয়ারম্যান ও তার রাজাকার দলের হাতে ধরা পড়ে। এরপর তাদেরকে হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। হানাদারেরা এই ১৮ যুবকের মধ্যে ১৭ জনকে ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ রাস্তার মাধবপুরের নিকট সারি বেঁধে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে। বাকি একজন পালিয়ে প্রাণে বেঁচে যান।
২৬ মে মুক্তিবাহিনীর একদল মুক্তিযোদ্ধা কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের জগন্নাথ দিঘির হানাদারদের ক্যাম্পে অতর্কিত হামলা চালায়। মুক্তিবাহিনীর এই হামলায় খুলনার সাবেক এমপিএ আবদুল হামিদ ও বাগেরহাটের মুসলিম লীগ নেতা আবদুস সাত্তার নিহত হন।
২৬ মে মুক্তিবাহিনীর টহলদার দল ব্রাহ্মণবাড়িয়া- কুমিল্লা সড়কের ওপর উজানিশার সেতুর নিকট পাহারারত হানাদারদের ক্যাম্পে অতর্কিত আক্রমণ চালান। মুক্তিবাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে হানাদারদের ১৩ সৈন্য নিহত ও ৩ জন সৈন্য আহত হয়। এসময় মুক্তিবাহিনী বিস্ফোরক লাগিয়ে একটি স্প্যান ধ্বংস করে।
২৬ মে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সৈন্যরা ভারী কামানের সাহায্যে মুক্তিবাহিনীর পাটেশ্বরী প্রতিরোধ ঘাঁটিতে তীব্র আক্রমণ চালায়। এ সময় হানাদার বাহিনীর সৈন্যরা ধরলা নদীর দক্ষিণ তীর থেকে গোলাবর্ষণ শুরু করলে এ আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা ভূরুঙ্গামারীর দিকে ফিরে আসেন, তখন পাটেশ্বরী প্রতিরোধ ঘাঁটি ভেঙে যায়।
তথ্যসূত্র-
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র সপ্তম, অষ্টম, নবম, দ্বাদশ, ত্রয়োদশ চতুর্দশ খণ্ড
দৈনিক পাকিস্তান, ২৭ মে ১৯৭১
দৈনিক অমৃতবাজার পত্রিকা, ২৭ মে ১৯৭১
দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৭ মে ১৯৭১
দৈনিক যুগান্তর, ২৭ মে ১৯৭১
দৈনিক পূর্বদেশ, ২৭ ও ২৮ মে ১৯৭১
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর- এক, দুই, তিন, চার, ছয়
আহমাদ ইশতিয়াক [email protected]
Comments