সাতক্ষীরায় ৪ উপজেলার ৪৯ স্থানে বাঁধ ভেঙে চিংড়ি ঘের ও গ্রাম প্লাবিত
![](https://bangla.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/feature/images/satkhira1_1.jpg?itok=VjKCyz8-×tamp=1622040869)
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জোয়ারের পানিতে সাতক্ষীরার চার উপজেলার ৪৯টি স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ভেঙে গ্রাম ও চিংড়ি ঘের প্লাবিত হয়েছে। ফলে, ইতোমধ্যে প্রায় হাজারখানেক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এবং অনেক স্থানের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
লোকালয় প্লাবিত ও পানিবন্দি মানুষ
শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ থেকে বুড়িগোয়ালিনী পাঁচ কিলোমিটার ও হরিনগর থেকে চুনকুড়ি পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় পানি উন্নয়নের বোর্ডের বাঁধের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে চিংড়ি ঘের, ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে।
কলবাড়ি এলাকার আকবর আলী বলেন, ‘আম্পানের পর প্রায় এক বছর গৃহহীন ছিলাম। মাত্র দুই মাস আগে বাড়ি ফিরেছি। আবার একই অবস্থা।’
দাতিনাখালি গ্রামের আব্বাস গাজী বলেন, ‘এ যাত্রায় রক্ষা পেলে অন্য কোথাও চলে যাব। এত দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকা যায় না, বছর বছর গৃহহীন হয়ে সহায় সম্বল হারাতে হয়।’
মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের নারী সদস্য সেলিনা সাঈদ বলেছেন, ‘চুনকুড়ি এলাকায় হৃদয় মণ্ডল, সুবল মণ্ডল, বিশ্বনাথ মণ্ডল, বিমল মণ্ডল, হানিফ গাজী, মাদেকা ফকির, রনজিৎ মণ্ডল, হরিদাস মণ্ডল, জগন্নাথ মণ্ডলসহ ৫০টি পরিবারের কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে।’
![](https://bangla.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/news/images/satkhira2_1.jpg?itok=jQHrkTZj×tamp=1622041041)
কোন কোন উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত
ইয়াসের প্রভাবে শ্যামনগর, আশাশুনি, কালিগঞ্জ ও দেবহাটা উপজেলা কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব উপজেলায় ১৫টি স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ভেঙে গেছে এবং ৩৬টি বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। এতে প্রায় সাত শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়েছে।
শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের তিন নম্বর এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ভেঙে গেছে। এছাড়া গাড়রামারি, চাঁদনিমুখো, জেলেখালি ও নাপিতখালি এলাকায় বাঁধ উপচে চিংড়ি ঘেরে পানি ঢুকছে। বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের বুড়িগোয়ালিনী, দাতিনাখালি, পশ্চিম দুর্গাবাটি এলাকায় বাঁধ ভেঙেছে। এছাড়া, কলবাড়ি, নীলডুমুর ও দাতিনাখালি এলাকায় বাঁধের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের পাঁচ স্থান ভেঙে ও পাঁচ স্থান দিয়ে বাঁধ উপচে পানি ঢুকে গ্রাম প্লাবিত করেছে। কৈখালী ইউনিয়নের পাঁচটি স্থান দিয়ে বাঁধ উপচে ও একটি স্থানে ভেঙে পানি গ্রামের মধ্যে ঢুকে ঘরবাড়ি প্লাবিত করেছে। রমজাননগর ইউনিয়নের বাঁধের পাঁচটি স্থান উপচে ও দুইটি স্থান ভেঙে গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কাশিমারী ইউনিয়নে একটি স্থানে, আটুলিয়ার একটি স্থানে ও নূরনগর ইউনিয়নে দুইটি স্থান দিয়ে বাঁধ উপচে পানি প্রবাহিত হয়ে ঘরবাড়ি প্লাবিত করেছে।
আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নে কুড়িকাউনিয়া ভেঙে এবং চালকা ও শুভ্রকাটির বাঁধ উপচে গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আশাশুনির সদর ইউনিয়নের জেলেখালি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। দেবহাটার উপজেলার কমরপুর এলাকার সীমান্ত নদী ইছামতীর পানি তোড়ে বাঁধ ভেঙে বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। এছাড়ার ভাতশালা, চর রহিমপুর, বসন্তপুর নাঙ্গলা বাঁধের ওপর দিয়ে পানি উপচে চিংড়ি ঘের তলিয়ে গেছে।
কালিগঞ্জ উপজেলার ভাড়াশিমলা ইউনিয়নের পূর্ব নারায়ণপুর, কুশলিয়া ইউনিয়নের বাজার গ্রাম, উপজেলা সদর, ধলবাড়িয়া ইউনিয়নের বাঁশঝাড়িয়া, মুথরেশপুর ইউনিয়নের হাড়তদাহ কাঁকশিয়ালী নদীর পানি লোকালয়ে ঢুকেছে। পূর্ব নারায়ণপুর গ্রামের দুই শতাধিক বাড়িতে পানি ঢুকে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
![](https://bangla.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/news/images/satkhira3_1.jpg?itok=gYgFJ-LX×tamp=1622040981)
সংশ্লিষ্ট উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘শ্যামনগর উপজেলায় আমাদের আওতায় ১২৫ কিলোমিটার বাঁধ আছে। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে সাত থেকে আট ফুট বেড়েছে। এর মধ্যে দুর্গাবাটি, গাগড়ামারি এই দুই স্থানে ও শুভ্রকাটির চার স্থানে ভেঙে ও সাত স্থানের বাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে এবং চিংড়ি ঘেরে ঢুকছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের আওতায় আশাশুনি এলাকায় ৮০ কিলোমিটার বাঁধ আছে। এর মধ্যে একটি স্থান ভেঙে ও সাতটি স্থানে পানি উপচে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে।’
শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউল হক জানান, শ্যামনগরের ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে নয়টি ইউনিয়নের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ৪৯টি স্থান ভেঙে অথবা পানি উপচে লোকালয় পানি ঢুকছে। ইতোমধ্যে অনেক পরিবারের বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। চিংড়ি ও কাঁকড়া ঘের ভেসে গেছে।’
তবে, কতটি পরিবার পানিবন্দি কিংবা গৃহহীন হয়েছে তা এখনই বলতে পারেননি তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে নয়, তার প্রভাবে সাতক্ষীরার নদনদীতে জোয়ারের পানি বেড়ে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ইতোমধ্যে গৃহহীন মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে উঠতে মাইকিং ও স্বেচ্ছাসেবক দলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
Comments