৯০ দিনের মধ্যে করোনাভাইরাসের উৎস খোঁজার নির্দেশ বাইডেনের
মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন কোভিড-১৯ মহামারির উৎস খুঁজে বের করা সংক্রান্ত তদন্তের গতি বাড়াতে এবং ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গতকাল বুধবার তিনি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে এ নির্দেশ দিয়েছেন।
সম্প্রতি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার এক প্রতিবেদনে জানা যায়, চীনের উহান ইন্সটিটিউট অব ভাইরোলজির কয়েকজন গবেষক ২০১৯ সালের নভেম্বরে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল। এই নতুন তথ্যটি সবার সামনে আসার পর ভাইরাসের মূল উৎস খুঁজে বের করার জন্য জো বাইডেনের ওপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
জো বাইডেন এক বক্তব্যে বলেছিলেন, গত মার্চে তিনি মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সুলিভানকে নির্দেশ দিয়েছিলেন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে কোভিড-১৯ মহামারির মূল উৎস খুঁজে বের করে একটি বিশ্লেষণী প্রতিবেদন তৈরি করতে।
কোনো প্রাণী থেকে নাকি গবেষণাগারে দুর্ঘটনা- কোনটি এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার মূল কারণ তা নিশ্চিত হওয়াই ছিল এ প্রতিবেদনের মূল উদ্দেশ্য।
বাইডেন জানান, তিনি প্রতিবেদনটি এ মাসের শুরুর দিকে হাতে পেয়েছেন। কিন্তু তিনি আরও গভীরভাবে বিষয়টিকে তদন্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন।
জো বাইডেন আরও বলেন, ‘মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ প্রসঙ্গে মূলত দুটি সম্ভাব্য ঘটনাপ্রবাহের ব্যাপারে (প্রাণীর সংস্পর্শ অথবা গবেষণাগারের দুর্ঘটনা) একমত হয়েছে। কিন্তু কোনটি মূল কারণ, সে প্রশ্নের উত্তর এখনও নিশ্চিতভাবে দেওয়া যাচ্ছে না।’
বাইডেন বলেন, যেকোনো একটি ঘটনাপ্রবাহের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার মতো যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ এখনও তাদের হাতে নেই।
গত বছর ধরেই করোনাভাইরাসের উৎস হিসেবে মূলত এ দুটি মতবাদই আলোচিত হয়েছে। তবে চীন সরকার বরাবরই দাবি করে আসছে যে, ভাইরাসটি প্রাকৃতিক ভাবেই সংক্রামিত হয়েছে।
বাইডেন তার গোয়েন্দা সংস্থাকে আরও গভীরভাবে তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, মার্চের প্রতিবেদনটি তৈরি করার ক্ষেত্রে গভীর বিশ্লেষণে না যাওয়া।
ভাইরাসের উৎস চিহ্নিত করার জন্য বাইডেন প্রশাসনের ওপর বিভিন্ন মহলের চাপ রয়েছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও সিএনএনের প্রতিবেদন এবং বাইডেনের প্রধান চিকিৎসা উপদেষ্টা ড. অ্যান্থনি ফাউচির নতুন বক্তব্য এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
ফাউচি স্বীকার করেছেন, তিনি এবং অন্যান্য বিজ্ঞানীরা সম্ভবত গবেষণাগার থেকে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার মতবাদটিকে খুব সহজেই বাতিল করে দিয়েছিলেন। কংগ্রেসও বাইডেনকে এ ব্যাপারে চাপ দিচ্ছে।
বাইডেন জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকবে। যাতে তারা ভাইরাসের উৎস সন্ধানে ‘একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ, স্বচ্ছ এবং তথ্য প্রমাণভিত্তিক আন্তর্জাতিক তদন্তে অংশগ্রহণ করে এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত সকল ডেটা ও প্রমাণ দেয়’।
মার্কিন ডেপুটি প্রেস সচিব ক্যারিন জিন পিয়েরে বলেন, ‘আমরা অনেকদিন ধরেই বলছি যে চীনের উচিৎ আমাদেরকে তাদের গবেষণাগারে আরও বেশি পরিমাণে প্রবেশাধিকার দেওয়া এবং বৈজ্ঞানিক তদন্তকারীদের সঙ্গে সব ধরণের সহায়তা করা। কিন্তু আমরা মনে করি না তারা এ ব্যাপারটি মেনে চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মহামারির উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারলে আমরা পরবর্তী মহামারি এবং তারপরের মহামারিগুলোর মোকাবিলায় আরও ভালো প্রস্তুতি নিতে পারবো।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভাইরাসের উৎস সম্পর্কে একটি অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়েছিল এবং তারা জানিয়েছিল যে বাদুড়ের ওপর করোনাভাইরাস গবেষণা চালানোর সময় উহান ইন্সটিটিউট থেকে দুর্ঘটনার মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা ‘একেবারেই কম’। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছিল, ডিসেম্বর ২০১৯ এ কোভিড-১৯ এর উপসর্গের সঙ্গে মিলে এরকম কোনো শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত অসুস্থতার খবর পাওয়া যায়নি।
তবে তাদের এই প্রতিবেদনটির তীব্র সমালোচনা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য দেশের সরকার। কারণ যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য, উপাত্ত ও নমুনা ব্যবহার না করেই এটি তৈরি করা হয়েছিল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুসন্ধানে অংশ নেওয়া বিজ্ঞানীদের মধ্যে ১৭ জনই ছিলেন চীনের নাগরিক এবং তাদের অনেকেই বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।
প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদরোস আধানম গেব্রিয়েসুস বলেছিলেন, ‘আমরা এখনও ভাইরাসের উৎস খুঁজে পাইনি এবং আমাদেরকে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।’
গত মঙ্গলবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি বৈঠকে দেওয়া বক্তব্যে চীন সরকার নিশ্চিত করেছে যে, তারা দ্বিতীয় পর্যায়ের অনুসন্ধানের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক নয়।
Comments