ভারতের টিকা রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তে সংকটে বহু দেশ

ছবি: সংগৃহীত

নেপালের ৬৭ বছর বয়সী উৎসব গৌতম ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ‘কোভিশিল্ড’ টিকা নিয়েছিলেন গত ফেব্রুয়ারি। নেপালে তখন করোনা সংক্রমণ কম ছিল।

কিন্তু, তিন মাস পর ‘হিমালয় কন্যা’-খ্যাত দেশটিতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় সেখানকার হাসপাতালগুলোতে বেড ও অক্সিজেনের সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে দেশটির অধিকাংশ এলাকায় লকডাউন দেওয়া হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে গৌতম জানেন না সেরামের কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজ তিনি কবে পাবেন।

এ অবস্থা শুধু গৌতম বা নেপালের একার নয়। ভারতে করোনার সংক্রমণ আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে যাওয়ায় সেরাম টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকা প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠানটির এমন সিদ্ধান্তে বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষ বিপদে  পড়েছেন বলে গতকাল বুধবার সংবাদমাধ্যম সিএনএন’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

গত সপ্তাহে সেরাম ঘোষণা দেয়, তারা চলতি বছর শেষের আগে বৈশ্বিক টিকা সরবরাহ কর্মসূচি কোভ্যাক্স-এ টিকা সরবরাহ করতে পারবে না।

ভারতে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি যে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, তাতে সেরামের এ ঘোষণা দেশটির জন্য স্বস্তি বয়ে আনছে।  দক্ষিণ এশিয়ার এই জনবহুল দেশটিতে এখনো প্রতিদিন অন্তত দুই লাখ মানুষের করোনা শনাক্ত হচ্ছে।

কিন্তু, কোভ্যাক্সের টিকার ওপর নির্ভরশীল উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এ ঘোষণা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইউনিসেফের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, বিশ্বে ইতোমধ্যেই করোনা টিকার ১৪০ মিলিয়ন ডোজের ঘাটতি আছে। জুনের মধ্যে এ ঘাটতি ১৯০ মিলিয়ন ডোজে দাঁড়াবে।

করোনা সংক্রমণ বেশি থাকা দেশগুলোর জন্যে তো বটেই, সংক্রমণ কম থাকা দেশগুলোর জন্যও টিকা ঘাটতি এখন দুশ্চিন্তার কারণ।

গত বছর অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা উৎপাদনকারী ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট বৈশ্বিক কোভ্যাক্স কর্মসূচিতে ২০০ মিলিয়ন টিকা সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

কোভ্যাক্সের সহ-নেতৃত্বে থাকা টিকাবিষয়ক আন্তর্জাতিক জোট গ্যাভি’র তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে সেরামের এসব টিকার ১১১ মিলিয়ন ডোজ মূলত আফ্রিকা ও এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে সরবরাহের কথা ছিল।

কিন্তু, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত কোভ্যাক্স কর্মসূচিতে সেরাম মাত্র ৩০ মিলিয়ন টিকা সরবরাহ করতে পেরেছে।

ইউনিসেফ বলছে, মূলত টিকা সরবরাহে সেরামের দেরির কারণেই কোভ্যাক্স কর্মসূচি সঠিকভাবে চলতে পারছে না।

গত সপ্তাহে এক বিবৃতিতে সেরামের সিইও আদর পুনাওয়ালা টিকা সরবরাহে দেরি ও টিকা রপ্তানি বন্ধের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে— সেরাম যখন টিকা রপ্তানি শুরু করে, তখন ভারতে করোনার বিস্তার নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং অন্য দেশগুলোতে ছিল ‘চরম সংকটে’। এখন ভারতে সংক্রমণ অনেক বেশি বেড়ে যাওয়ায় এবং সেখানকার অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর বিষয়টিই তাদের কাছে প্রাধান্য পাচ্ছে।

চলতি বছরের শেষের দিকে আবারও কোভ্যাক্স কর্মসূচিসহ অন্যান্য দেশে টিকা রপ্তানি শুরু হবে বলে বিবৃতিতে আশা প্রকাশ করেন পুনাওয়ালা।

ভারত সরকার সেরামকে টিকা রপ্তানি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে— এমন তথ্য জানিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও দেশটির সরকার তা অস্বীকার করেছে।

সংবাদ প্রতিবেদন মতে, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ভারতের বিপুল জনসংখ্যার মাত্র তিন শতাংশকে পুরোপুরি টিকার আওতায় আনা হয়েছে।

সেরাম টিকা রপ্তানি বন্ধ করায় শুধু কোভ্যাক্সের আওতায় থাকা দেশগুলোই নয়, সংস্থাটির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ অন্যান্য দেশও বিপাকে পড়েছে।

আন্তর্জাতিক ফেডারেশন অব রেডক্রস অ্যান্ড রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিজের বরাত দিয়ে সিএনএন প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী টিকা না পাওয়ায় টিকা সংকটে পড়েছে।

গ্যাভির এক মুখপাত্র এক বার্তায় বলেছেন, তারা সেরাম ও ভারত সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে এবং আশা করছে অল্প সংখ্যক হলেও চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে টিকা সরবরাহ শুরু করা যাবে।

Comments

The Daily Star  | English

NCP stages protest at EC office, demands reconstitution of commission

The protest, organised by the party's Dhaka Metropolitan Committee, commenced at 12:00pm

Now