হালদাপাড়ে হতাশা

হালদা থেকে সংগৃহীত ডিম। ছবি: স্টার

অনুকূল প্রাকৃতিক অনুষঙ্গের অনুপস্থিতি ছিল। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ অনেক বেড়ে যাওয়ায় হালদা নদী থেকে এবার ডিম সংগ্রহ হয়েছে প্রত্যাশার তুলনায় খুবই কম।

দেশের একমাত্র এবং দক্ষিণ এশিয়ায় কার্প-জাতীয় মাছের অন্যতম প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদী থেকে গত বছর ২২ মে রেকর্ড পরিমাণ ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়। ২০০৬ সালের পর যা ছিল সর্বোচ্চ। তবে এবার তা মাত্র ছয় হাজার ৫০০ কেজিতে এসে দাঁড়িয়েছে।

হালদা নদী এলাকাকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা, নদী রক্ষায় নৌ-পুলিশের ইউনিট স্থাপন, বছরজুড়ে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনের নজরদারি, নদী দূষণের জন্য দায়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র ও পেপার মিলের উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া- এমন নানা পদক্ষেপ নেওয়ায় এবারও হালদা থেকে ডিম সংগ্রহের ব্যাপারে উচ্চ প্রত্যাশা ছিল। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময়োপযোগী বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে হালদায় মনুষ্যসৃষ্ট দূষণ ও ক্ষতি কমিয়ে আনা গেলেও চলতি মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাব, পাহাড়ি ঢলের অনুপস্থিতি ও ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে নদীর পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ ৭২ শতাংশ বেড়ে যায়। তাই মা মাছ প্রত্যাশা অনুসারে ডিম ছাড়েনি।

এ বিষয়ে নদী বিশেষজ্ঞ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মঞ্জুরুল কিবরিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘২৫ মে যখন মা মাছ হালদা নদীতে নমুনা ডিম ছেড়েছিল, সেদিন আমরা কয়েকটি পয়েন্ট থেকে নদীর পানির নমুনা সংগ্রহ করি। নমুনা পরীক্ষায় হালদায় লবণাক্ততার পরিমাণ পাওয়া গেছে ৩৬ দশমিক ৯ পিপিটি। যার আদর্শ মানমাত্রা শূন্য দশমিক পাঁচ পিপিটি।’

হালদাপাড় সংলগ্ন উত্তর মাদার্শা গ্রামের বাসিন্দা মনিন্দ্র জলদাশ বলেন, ‘হালদায় মাছ ধরা নিষেধ। তাই সারাবছর আমরা অপেক্ষা করি ডিম সংগ্রহের সময়ের জন্য। এ বছর বৃষ্টি হয়নি, পাহাড়ি ঢল আসেনি। তার ওপর হালদার পানি সমুদ্রের পানির মত লবণাক্ত হয়ে পড়েছে। সব মিলিয়ে আমাদের কপাল পুড়েছে।’

একই গ্রামের আরেক বাসিন্দা অভিজ্ঞ ডিম সংগ্রহকারী ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘এবার হালদার পানিতে যে পরিমাণ লবণাক্ততা পাওয়া গেছে, সেটা পাওয়া গিয়েছিল ১৯৯১ ঘূর্ণিঝড়ের সময়ে। মাঝে আমরা এমন এরকম লবণাক্ততা দেখিনি।’

এর পরেও আশাবাদী ইলিয়াস বলেন, ‘জুন মাস এখনো বাকি আছে। এর মধ্যে যদি পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়, তাহলে আবার হয়তো মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে।’

সাধারণত এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুন পর্যন্ত বজ্রসহ বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল নামলে অমাবস্যা বা পূর্ণিমা তিথিতে নদীতে জোয়ার ও ভাটার সময়ে নিষিক্ত ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মা মাছ।

হালদা নদীর হাটহাজারী ও রাউজান অংশের আজিমের ঘাট, অংকুরি ঘোনা, কাগতিয়ার মুখ, গড়দুয়ারা নয়াহাট, রাম দাশ মুন্সির ঘাট, মাছুয়া ঘোনা ও সত্তার ঘাটসহ বিভিন্ন অংশে ডিম আহরণ করেন সংগ্রহকারীরা। পরে ব্যক্তিগত কুয়া ও হ্যাচারির কুয়াতে রেখে ডিম ফুটিয়ে রেণু উৎপাদন করা হয়।

হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির হিসাব মতে, ২০১৯ সালের ২৬ মে হালদা থেকে প্রায় ১০ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। এর আগের বছর ২০১৮ সালের ২০ এপ্রিল ২২ হাজার ৬৮০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়। যা থেকে রেণু মিলেছিল ৩৭৮ কেজি।

২০১৭ সালের ২২ এপ্রিল ১৬৮০ কেজি ডিম পাওয়া যায় হালদায়। আর ২০১৬ সালের ২ মে নমুনা ডিম মেলে ৭৩৫ কেজি। ওই বছর তিনবার নমুনা ডিম দিলেও আর ডিম ছাড়েনি মা মাছ।

Comments

The Daily Star  | English
NCP will not accept delay in Teesta master plan

Won’t accept any implementation delay: Nahid

National Citizen Party Convener Nahid Islam yesterday said his party would not accept any delay or political maneuver over implementing the Teesta master plan.

1h ago