শেষ ম্যাচে বেহাল দশা
বাংলাদেশের ফিল্ডারদের ব্যর্থতা কাজে লাগিয়ে কুসল পেরেরা পেয়েছিলেন সেঞ্চুরি। তাতে তাসকিন আহমেদের দারুণ বোলিং সত্ত্বেও প্রায় ৩০০ ছোঁয়া সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। সেই চ্যালেঞ্জ তাড়ায় স্বাগতিক ব্যাটসম্যানরা করতে পারলেন না কোনো লড়াই। তাদের অসহায় আত্মসমর্পণে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে বড় ব্যবধানে জিতল লঙ্কানরা। তাদের ডানহাতি পেসার দুশমন্থ চামিরা ওয়ানডেতে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট নিয়ে হলেন ম্যাচসেরা।
শুক্রবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ হেরেছে ৯৭ রানে। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা সফরকারীদের ৬ উইকেটে ২৮৬ রানের জবাবে তামিম ইকবালের দল ৪২.৩ ওভারে অলআউট হয়েছে ১৮৯ রানে। তবে প্রথম দুই ওয়ানডে জিতে তিন ম্যাচের সিরিজ আগেই নিজেদের করে নিয়েছে তারা।
প্রথমবারের মতো কোনো সংস্করণে লঙ্কানদের সিরিজ হারানোর পর তাদের হোয়াইটওয়াশ করার মঞ্চ প্রস্তুত ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু ফিল্ডিংয়ের পর ব্যাটিংয়েও হতাশ করে তারা। বড় কোনো জুটি হয়নি। ব্যাটসম্যানদের মধ্যেও দেখা যায়নি লক্ষ্য পেরিয়ে যাওয়ার যথেষ্ট তাড়না। মাঝে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত দায়িত্ব সারেন হাফসেঞ্চুরি করে। আর শেষদিকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ফিফটি কেবল হারের ব্যবধানই কমায়।
ফলে আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগের অংশ এই সিরিজে পূর্ণ ৩০ পয়েন্ট তুলে নেওয়া হয়নি বাংলাদেশের। তাদেরকে সন্তুষ্ট থাকতে হলো আগের দুই ম্যাচের ২০ পয়েন্ট নিয়ে। অন্যদিকে, জয়ের পাশাপাশি ১০ পয়েন্ট নিয়ে সুপার লিগে পয়েন্টের খাতা খুলল লঙ্কানরা। মন্থর ওভার রেটের কারণে ২ পয়েন্ট আগে থেকে কাটা থাকায় তাদের পয়েন্ট হলো ৮।
গত ম্যাচের শুরুতে বাংলাদেশকে ধাক্কা দিয়েছিলেন চামিরা। এদিনও তার তোপে পড়ে ১০ ওভারের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা। পাওয়ার প্লে শেষে তাদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৯ রান।
লিটন দাসের পরিবর্তে একাদশে ঢোকা নাঈম শেখ সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলে স্লিপে তিনি দেন ক্যাচ। তার রান ২ বলে ১।
তিনে ফেরা সাকিব আল হাসান আগের দুই ওয়ানডেতে রান পেতে ভুগেছিলেন। তার ঘুরে দাঁড়ানো হয়নি। অলস শটে স্কয়ায় লেগে রমেশ মেন্ডিসের হাতে ধরা পড়েন তিনি। ৭ বলে ৪ রান আসে তার ব্যাট থেকে।
মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে বিপর্যয় সামলানোর পরীক্ষা দিতে হতো তামিমকে। তিনি উতরে যেতে পারেনি। তবে তার আউট নিয়ে থাকল সংশয়। বল তামিমের ব্যাটে লেগেছে নাকি তার ব্যাট মাটিতে লাগার কারণে শব্দ হয়েছে নাকি দুটোই তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি টিভি রিপ্লেতেও। মাঠের আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা অবশ্য আউটের সিদ্ধান্ত দিয়ে দিয়েছিলেন আগে। রিভিউ নিয়ে তা পাল্টাতে না পারা তামিম মাঠ ছাড়েন ক্ষোভ আর হতাশা নিয়ে। অধিনায়ক তামিমের ব্যাট থেকে আসে ২৯ বলে ১৭ রান।
২৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশ তাকিয়ে ছিল মুশফিকুর রহিমের দিকে। তিনি অনেকটা সময় নিয়ে থিতু হলেও গত দুই ম্যাচের মতো নায়ক হতে পারেননি। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে বড় শট খেলতে গিয়ে তিনি ধরা পড়েন লং অনে। ৫৪ বলে ২৮ রান করা মুশফিককে বিদায় করে ওয়ানডেতে প্রথম উইকেটের দেখা পান অভিষিক্ত রমেশ।
মুশফিক ও মোসাদ্দেক চতুর্থ উইকেটে ৮৩ বলে ৫৬ রান যোগ করার পর আলাদা হন। এরপর মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে মোসাদ্দেক ও আফিফ হোসেনের দুটি জুটি থামে সম্ভাবনা জাগিয়ে। মোসাদ্দেক ৭২ বলে ৫১ রান করেন ৩ চার ও ১ ছয়ে। রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে রমেশের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন তিনি। আফিফের ব্যাট থেকে ১৭ বলে ১৬ রান আসে।
এরপর আবারও চামিরা নাড়িয়ে দেন বাংলাদেশকে। তিন বলের মধ্যে তিনি বিদায় করেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাসকিনকে। কেউই রানের খাতা খুলতে পারেননি।
একপ্রান্তে থাকা মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে লম্বা হয় বাংলাদেশের ইনিংসের স্থায়িত্ব। শরিফুল ইসলাম ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার শিকার হওয়ার পর মাহমুদউল্লাহ তুলে নেন ফিফটি। স্কুপ করতে গিয়ে তিনি আউট হলে থামে স্বাগতিকদের ইনিংস।
৬৩ বলে ২ চার ও ১ ছয়ে ৫৩ রান করা মাহমুদউল্লাহকে ঝুলিতে পুরে প্রথম ওয়ানডে উইকেটের দেখা পান আরেক অভিষিক্ত বিনুরা ফার্নান্দো। চামিরা ৯ ওভারে ১৬ রানে পান ৫ উইকেট। নিজেদের শেষ ৫ উইকেট বাংলাদেশ হারায় মাত্র ৩১ রানে।
এর আগে তিন দফা বেঁচে গিয়ে লঙ্কান অধিনায়ক পেরেরা ১২২ বলে করেন ১২০ রান। তার ইনিংসে ছিল ১১ চার ও ১ ছয়। তাসকিন ৯ ওভারে ৪৬ রানে ৪ উইকেট শিকার করেন তিনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ২৮৬/৬ (গুনাথিলাকা ৩৯, পেরেরা ১২০, নিশানকা ০, মেন্ডিস ২২, ধনঞ্জয়া ৫৫*, ডিকভেলা ৭, হাসারাঙ্গা ১৮, রমেশ ৮*; শরিফুল ১/৫৬, মিরাজ ০/৪৮, মোসাদ্দেক ০/৩২, তাসকিন ৪/৪৬, মোস্তাফিজ ০/৪৭, সাকিব ০/৪৮)
বাংলাদেশ: ৪২.৩ ওভারে ১৮৯ অলআউট (তামিম ১৭, নাঈম ১, সাকিব ৪, মুশফিক ২৮, মোসাদ্দেক ৫১, মাহমুদউল্লাহ ৫৩, আফিফ ১৬, মিরাজ ০, তাসকিন ০, শরিফুল ৮, মোস্তাফিজ ০*; ধনঞ্জয়া ০/১৪, চামিরা ৫/১৬, বিনুরা ৩৩/১, হাসারাঙ্গা ২/৪৭, রমেশ ২/৪০)
ফল: শ্রীলঙ্কা ৯৭ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: দুশমন্থ চামিরা।
সিরিজসেরা: মুশফিকুর রহিম।
Comments