ডাকযোগে এলএসডি আসে বাংলাদেশে, পুলিশের নজরে ৩ সিন্ডিকেট

গত বুধবার এলএসডি জব্দের পর পুলিশ জানায় সেটাই ছিল দেশে এই মাদক জব্দের প্রথম ঘটনা। ছবি: সংগৃহীত

হ্যালুসিনেশন সৃষ্টিকারী মাদক লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথ্যালামাইড বা এলএসডি। গত প্রায় চার বছর ধরে মাদকটি ডাকযোগে নেদারল্যান্ডস থেকে বাংলাদেশে এনে বিক্রি হচ্ছে।

নকশা করা কাগজে বা ব্লটিং পেপারে মিশিয়ে সেগুলো বই বা ম্যাগাজিনের ভিতরে রেখে সেগুলো বহন করত মাদক পাচারকারী সিন্ডিকেট। সেগুলো দেখলে ডাক বিভাগের স্টাম্প অথবা নকশা করা কাগজ বলে মনে হয়।

বাংলাদেশে এলএসডি বিক্রির সঙ্গে জড়িত এমন অন্তত তিনটি সিন্ডিকেট রয়েছে। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা গতকাল দ্য ডেইল স্টারকে এসব তথ্য জানান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমানের মৃত্যুর তদন্ত করতে গিয়ে তারা এসব তথ্য পেয়েছেন।

হাফিজুরের এক বন্ধু জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে বলেন, গত ১৫ মে হাফিজুর এলএসডি নেওয়ার পর দা দিয়ে নিজেই নিজের গলা কেটে ফেলে।

গত বুধবার রাতে রাঝধানীর ধানমন্ডি ও লালমাটিয়া এলাকা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এলএসডির ২০০ ব্লটিং পেপার এবং বিক্রয় চক্রের তিন সদস্যকে আটক করেছে। আটক তিন শিক্ষার্থী হলেন, সাদমান সাকিব রুপল, অসহাব ওয়াদুদ তূর্য ও আদিব আশরাফ। তারা তিন জনই এখন কারাগারে আছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, চক্রটি উইরোপের দেশ থেকে এলএসডি আনত। তারা এই সিন্ডিকেটের চতুর্থ সদস্য, যে ‘টিম’ নামে পরিচিত তাকে খুঁজছে। সে-ই সর্বপ্রথম নেদারল্যান্ডসে যোগাযোগ করে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানানা, এই চক্রটি প্রতিটি ব্লটিং পেপার ৮০০ থেকে এক হাজার টাকায় কিনে সেগুলো বাংলাদেশে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করত।

ডিবি রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মিশু বিশ্বাস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এই সিন্ডিকেটটির বিষয়ে আমাদের কাছে কিছু তথ্য আছে, এখন সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে।’

এছাড়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিবির আরেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশে এলএসডি বিক্রির সঙ্গে জড়িত আরও দুটি সিন্ডিকেটের ব্যাপারেও তাদের কাছে তথ্য আছে। ওই সিন্ডিকেটের সদস্যদের নজদারিতে রাখা হয়েছে। সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

সিন্ডিকেট তিনিটির মধ্যে কোনো যোগাযোগ আছে কি না জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা জানান, ‘আমরা জানতে পেরেছি, ‘টিম’ নামের একজন দুটি সিন্ডিকেটের কাছে এলএসডি ব্লটিং পেপার বিক্রি করত।’

সিন্ডিকেটগুলো অনলাইনে আর্থিক লেনদেনের আন্তর্জাতিক মাধ্যম পেপ্যালের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করত।

‘তবে, এখন পর্যন্ত তিনটি সিন্ডিকেটের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে পাইনি’—জানান ওই কর্মকর্তা।

হোম ডেলিভারি সেবা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অথবা মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে এলএসডির অর্ডার পাওয়ার পর বিক্রেতারা সেগুলো ক্রেতার ঠিকানায় পাঠিয়ে দিত। এরপর ক্রেতা সেগুলো হাতে পাওয়ার পর টাকা পরিশোধ করত।

ডিবির ওই কর্মকর্তা জানান, এখন পর্যন্ত ডিবি প্রায় ৬৫০ জন এলএসডি গ্রাহকের একটি তালিকা পেয়েছে।

তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে তারা এলএসডি ব্লটিং পেপারগুলো বই অথবা ম্যাগাজিনের ভেতরে লুকিয়ে বহন করত।

চার সদস্যের এই মাদক বিক্রেতা চক্রটি ফেসবুক ও মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে এলএসডির অর্ডার নিত।

তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে, জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা মিশু বিশ্বাস জানান, এখন পর্যন্ত কোনো নিয়মিত এলএসডি গ্রহণকারীকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।

অনেকে একসময় এলএসডি নিত, তবে এখন আর তারা নিচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করছি। পর্যবেক্ষণ শেষ হলে এসব ব্যবহারকারী সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে বলতে পারব।’

গত বুধবার ২০০টি এলএসডি ব্লটিং পেপার আটকের ঘটনা বাংলাদেশে প্রথম না। এর আগেও ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই রাজধানীর কাফরুল এলাকা থেকে ৪৬টি ব্লটিং পেপার আটক করে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

এ বিষয়ে কাফরুল থানায় একটি মামলাও দায়ের করা হয়। ২০২০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সেই মামলায় চার্জশিট দেয়।

মামলাটি এখনো বিচারাধীন রয়েছে বলে জানান মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন:

খিলগাঁওয়ে এলএসডিসহ গ্রেপ্তার ৫

ঢাবি ছাত্রের মৃত্যু তদন্তে ভয়ঙ্কর মাদক এলএসডি পাওয়ার দাবি পুলিশের, গ্রেপ্তার ৩

ঢামেক মর্গে মিলল নিখোঁজ ঢাবি শিক্ষার্থীর মরদেহঢাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু: ২ বন্ধুকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ





 

Comments

The Daily Star  | English

Govt plans 31% hike in food subsidy in FY26 budget

The government plans to raise the food subsidy allocation by 31 percent to Tk 9,500 crore in the upcoming fiscal year, aiming to ensure access to affordable food for poor and low-income households.

14h ago