ঋতুপর্ণ ঘোষ: সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা চলচ্চিত্রকার
১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল চলে গেলেন সত্যজিৎ রায়। আর একই বছর সদ্য বিজ্ঞাপনী জগত ছেড়ে বেরিয়ে আসা ২৯ বছর বয়সী মেধাবী এক তরুণের হাতে মুক্তি পেলো শিশুতোষ চলচ্চিত্র "হীরের আংটি"। কে জানতো সত্যজিৎ রায়ের প্রস্থানের পর কেবল বছর নয়, কয়েকটা মাসেরও অপেক্ষা সইবেন না চলচ্চিত্রের দেবতা। কেউ কি জানতো সেই তরুণের হাত ধরে ধীরে ধীরে বাংলা চলচ্চিত্র পৌঁছে যাবে নতুন এক দিগন্তে?
সত্যজিৎ রায় আকণ্ঠ স্রেফ বুঁদ করে রেখেছিল সেই তরুণকে। সেই তরুণই যে সত্যজিৎ রায়ের যোগ্য উত্তরসূরি হয়ে উঠবে তা বোঝা গিয়েছিল মাত্র দু'বছরের ব্যবধানে। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে বাগিয়ে নিলো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও। তাও আবার দুটো শাখায়। সেদিনের সেই তরুণ চলচ্চিত্রকার হয়ে উঠলো বাংলা চলচ্চিত্রের এক অবিস্মরণীয় স্রষ্টা। কেবল তাই নয়, তার হাতে বাঙালির চিরায়ত ট্যাবু, সামাজিক কথিত বিধিনিষেধ, নিষিদ্ধতা দারুণভাবে আলোচিত হলো। যা আগে কোন চলচ্চিত্রকার চিন্তাতেও আনতে পারেননি। সমাজের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন যিনি চিরকালের খুঁতগুলো। তাই তিনি তো কেবল একজন চলচ্চিত্রকারই নন, বরং সমাজ পাল্টে দেয়ার এক নিরন্তর অভিযাত্রী। তিনি কিংবদন্তী চলচ্চিত্রকার ঋতুপর্ণ ঘোষ।
ঋতুপর্ণ ঘোষের জন্ম কলকাতায় ১৯৬৩ সালের ৩১শে আগস্ট। বাবা সুনীল ঘোষ ছিলেন চিত্রশিল্পী ও তথ্যচিত্র নির্মাতা। তার মা-ও ছিলেন চিত্রশিল্পী। কলকাতার সাউথ পয়েন্ট স্কুলেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার হাতেখড়ি হয়েছিল ঋতুপর্ণ ঘোষের। ১৪ বছর বয়স থেকেই বাবার সঙ্গে শুটিংয়ে যেতেন। সুনীল ঘোষ তার ছবির সম্পাদনা করতেন তার বাসায়। ঋতুপর্ণ ঘোষও বাবার সঙ্গে শট বাছাই করতেন। ১৯৮২ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ।
অর্থনীতিতে অনার্স শেষে ১৯৮৭ সালে ঋতুপর্ণ ঘোষ যোগ দিয়েছিলে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় ক্রিয়েটিভ আর্টিস্ট হিসেবে। তখনই চলচ্চিত্রের সঙ্গে যাত্রা শুরু হয়েছিল তার। আশির দশকে বাংলা বিজ্ঞাপনের দুনিয়ায় বেশ কিছু জনপ্রিয় এক লাইনের স্লোগান বেরিয়েছিল তার হাত ধরে। সেই সময় কলকাতায় ইংরেজি ও হিন্দি বিজ্ঞাপনগুলি বাংলায় অনুবাদ করে চালানো হতো মূলত। ঋতুপর্ণই বাংলায় স্বতন্ত্র বিজ্ঞাপনী শ্লোগানের ধারা সৃষ্টি করলেন। তার সৃষ্ট বিজ্ঞাপনগুলির মধ্যে শারদ সম্মান ও বোরোলিনের বিজ্ঞাপন দুটি তো অসম্ভব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। কারো কারো মতে বিজ্ঞাপনী চিত্র নির্মাণের মাধ্যমে দর্শকদের কাছে আবেদন পৌঁছে দেওয়ার এক বিশেষ দক্ষতা তিনি তখনই অর্জন করেছিলেন।
ঋতুপর্ণ ঘোষের প্রথম চলচ্চিত্র হীরের আংটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৯২ সালে। শিশুতোষ এই চলচ্চিত্রটির কাহিনী শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অদ্ভুতুড়ে সিরিজের একই নামে উপন্যাস হীরের আংটি অবলম্বনে তৈরি। তবে এই চলচ্চিত্র জনপ্রিয়তা পায়নি। হীরের আংটির প্রযোজনা করেছিল চিলড্রেন ফিল্ম সোসাইটি অব ইন্ডিয়া। এই চলচ্চিত্র যদিও তার বাকি চলচ্চিত্রগুলোর তুলনায় খানিকটা দুর্বল তবুও তার প্রথম চলচ্চিত্রে স্পষ্টতই ইঙ্গিত পাওয়া যায় ঋতুপর্ণ ঘোষের গল্প বলার একটা নিজস্ব রীতি আছে। এই চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে বোঝা যায় বাংলা চলচ্চিত্রে শিল্পসম্মত ও রুচিশীল চলচ্চিত্র-ভাষার সূচনা হতে চলেছে। এক নতুন ধারার সূচনা যে আসছে সেই আগাম আভাস পাওয়া গেছে হীরের আংটিতে। যে চলচ্চিত্রের শুরুতে ঋতুপর্ণ বেশ সময় নিয়ে গল্পের আবহ ঠিক করেছিলেন। চলচ্চিত্রে দেখা যায় পিতৃপক্ষের শেষ, দেবীপক্ষের শুরু। গ্রামের এক অভিজাত বনেদি বাড়ি। সকালে রেডিওতে চণ্ডীপাঠ হচ্ছে। ঠাকুরদালানে দেবীপ্রতিমায় শেষ তুলির টান চলছে। ঢাকিরা এসে গেছে। শহরে লরিতে করে দেবী আসে ঘরে। কিন্তু গ্রামের বনেদি বাড়িতে প্রতিমা নির্মাণ হয়। তবে ভিন্নতা এই যে এই বাড়ির দেবীর বাহন সিংহ নয়, ঘোড়া। এখানে ঋতুপর্ণ বার্তা দেন দেবী দুর্গার রূপ বহু বছর ধরে পাল্টেছে। শুরুতে তার বাহন যেমন সিংহ ছিল না, তেমন সময়ের সঙ্গে বেড়েছে হাতের সংখ্যাও। এখানেই দেখা যায় ঋতুপর্ণের তখনই সাংস্কৃতিক জ্ঞান কতোখানি সমৃদ্ধ। চলচ্চিত্রের এক জায়গায় সেই বনেদী বাড়ির কর্তা রতনলাল বন্দ্যোপাধ্যায় তার বহু পুরনো চাকর এবং সঙ্গী পাঁচুকে বলছেন, ‘ভাবছি ছুটি ফুরোলে ওর (মেজ ছেলে) সঙ্গে আমেরিকা ফিরে যাবো। তোকেও নিয়ে যাব।’
‘আমি যাব না।’
‘ওদেশেও পুজো হয়, খুব ঘটা করে।’
- ‘ঢাক বাজে? কাশফুল ফোটে?’
এই শেকড় না ছেড়ে যাওয়ার গল্প হীরের আংটি। যেখানে আমরা দেখি হাবুল আর তিন্নির মতো আরও অনেকের শৈশবের গল্প। হাবুল আর তিন্নির সঙ্গে তাদের ছোটকার সম্পর্ক, গেনুদার সঙ্গে কাটানো মজাদার অলস দুপুর আমার মতো বহু দর্শকের হারিয়ে যাওয়া শৈশবকে চোখের সামনে ভাসায়।
প্রথম চলচ্চিত্রেই ঋতুপর্ণ ঘোষের গভীরতা দারুণ অবাকও করে। সেই বনেদি বাড়ি, চণ্ডীমণ্ডপ, বড় উঠোন, দামি কাঠের পালঙ্ক, এক পুরনো বাঙালিয়ানা যা আভিজাত্যের রূপ ফুটিয়ে তুলে। প্রতিটি দৃশ্যে যেখানে যেটা যেমনটি থাকা দরকার সেটা তেমনই আছে, অনেকখানি নিখুঁত। এই চলচ্চিত্রে দারুণ অভিনয় করেছিলেন বসন্ত চৌধুরী, জ্ঞানেশ মুখার্জী, বরুণ চন্দ, শকুন্তলা বড়ুয়া। কেবল দুলাল লাহিড়ীর অভিনয়টা বাদ দিলেই হয়, সঙ্গে শেষের দিকে মারামারির দৃশ্যটা নিখুঁত নয়।
দুই বছর বাদে ১৯৯৪ সালে মুক্তি পেয়েছিল ঋতুপর্ণ ঘোষের দ্বিতীয় চলচ্চিত্র "উনিশে এপ্রিল"। যে চলচ্চিত্রে আমরা দেখি সম্পর্কের টানাপড়েন, মা মেয়ের সম্পর্ক ও সম্পর্কের পিছুটান। যেখানে খ্যাতিমান নৃত্যশিল্পী সরোজিনী গুপ্ত সদ্য নৃত্য সম্মাননা পেয়েছেন আর তার সদ্য ডাক্তারি পাশ করা মেয়ে অদিতি ফিরে এলো মায়ের কাছে। মা মেয়ের মিলনে যেখানে স্বভাবতই উচ্ছ্বাস আনন্দ থাকার কথা সেখানে যেন বারুদ ফুটছে। সম্পর্কের মধ্যে দ্বন্দ্ব, অভিমান সমস্ত কিছু মিলে এক হতাশা। ফ্ল্যাশব্যাকে আমরা দেখতে পাই হার্ট অ্যাটাকের ফলে মৃত্যু সরোজিনীর স্বামী ডাক্তার মনীষের মৃত্যু, আট বছরের অদিতি। যে ১৯ এপ্রিল নামকরণ চলচ্চিত্রের সেই উনিশে এপ্রিল মনীষের মৃত্যুবার্ষিকী। কিন্তু মনে নেই কেবল সরোজিনীর। আর সেদিনই পুরস্কারের খবরে হাজির হওয়া বাড়িভর্তি সাংবাদিক। মায়ের চেয়ে বরাবরই গৃহকর্মী বেলা'ই প্রিয় ছিল অদিতির কাছে। কারণ মায়ের ব্যস্ততায় অদিতির নিজেকে মায়ের কাছে ভীষণ উপেক্ষিত মনে হয়। আবার অন্যদিকে অদিতি ভীষণ ভালোবাসে তার প্রেমিক সুদীপকে। সে প্রয়োজনে সুদীপের জন্য ডাক্তারিও ছাড়তে পারে অথচ সুদীপের পরিবার এই বিয়েতে রাজি নয় কারণ অদিতির মা নৃত্যশিল্পী তাই। কিংবা চলচ্চিত্রের শেষদিকে আমরা দেখি সুইসাইড করতে ধাবমান অদিতিকে। উনিশে এপ্রিল চলচ্চিত্রের কাজ অসম্ভব নিখুঁত। অদিতি চরিত্রে দেবশ্রী রায়, সরোজিনী চরিত্রে অপর্ণা সেন, সুদীপ চরিত্রে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, বেলা চরিত্রে চিত্রা সেনের অভিনয় অবর্ণনীয় মুগ্ধতার। উনিশে এপ্রিল চলচ্চিত্র যেমন বক্স অফিস হিট করেছিল, কুড়িয়েছিল সমালোচকদের প্রশংসা। পেয়েছিলো শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও। এই চলচ্চিত্রই মূলত ঋতুপর্ণ ঘোষকে সর্বমহলে পরিচিত করে তুলল।
ঋতুপর্ণ ঘোষের তৃতীয় চলচ্চিত্র ‘দহন’ মুক্তি পেয়েছিলো ১৯৯৭ সালে। কাহিনী সাহিত্যিক সুচিত্রা ভট্টাচার্যের উপন্যাস দহন। এক স্কুল শিক্ষিকার ঝিনুকের কাহিনী। মেট্রো স্টেশনে চার যুবকের হাত থেকে যে কিনা রমিতা নামক এক যুবতীকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে। যার কিনা থানা পুলিশ আদালত পর্যন্ত যেতেও দ্বিধা ছিল না। কিন্তু একটা সময় সে অভিনন্দনের রেশ ফুরোতে না ফুরোতেই আবিস্কার করলো কতো ধরনের চাপ নিষ্ক্রিয় আর তুচ্ছ করে দিতে পারে উদ্যত নারীর এই প্রতিবাদ। যেখানে আমরা দেখি নারী স্বাধীনতারও আরেক চেহারার উন্মোচন। যারা কিনা নারী স্বাধীনতার কথা বলে তারাই কিনা বিক্রি হয়ে যায়। যেখানে আমাদের পুলিশি ঝামেলা এড়াতে রমিতা ও তার স্বামী পলাশের চুপসে যাওয়া আমাদের হতাশ করে। এই চলচ্চিত্রে ঝিনুক চরিত্রে ইন্দ্রাণী হালদার ও রমিতা চরিত্রে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের অভিনয় অসামান্য। দহন চলচ্চিত্রের জন্য এই দুই অভিনেত্রীই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন। ঋতুপর্ণ ঘোষ পেয়েছিলেন শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রকারের পুরস্কার।
দহন মুক্তি পাওয়ার দুবছর পর ১৯৯৯ সালে মুক্তি পেয়েছিল ঋতুপর্ণ ঘোষের চলচ্চিত্র বাড়িওয়ালী। চলচ্চিত্রের এক শুটিং ইউনিট ও এক জমিদার বাড়ির শেষ উত্তরসূরি বনলতা নামের অবিবাহিত এক মধ্য বয়স্ক নারীর গল্প। যে বনলতা নিজের পুরো বাড়ি উন্মুক্ত করে দেয় চলচ্চিত্রের পরিচালককে। একসময় অর্থাভাবে চলচ্চিত্রের শুটিং বন্ধ হয়ে যায় আর বনলতার অর্থায়নে শুটিং ফের শুরু হয়। চলচ্চিত্রে এক অভিনেত্রীর অনুপস্থিতির কারণে তাকে শুটিংয়ে ডাকা হয়, কিন্তু শেষমেশ শেষদিকে দেখা যায় সেই চলচ্চিত্রে বনলতার অংশটাই কেটে ফেলে দেয়া হয়েছে, কিংবা শেষদিকে বনলতার কাছে ডাকযোগে প্রেরিত অর্থ যা কিনা চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের সময় বনলতা দিয়েছিল। এই চলচ্চিত্র আসলে মধ্য বয়স্ক নিঃসঙ্গ এক নারীর জীবনে স্বপ্নভঙ্গের গল্প। বাড়িওয়ালী চলচ্চিত্রে কিরণ খেরের অভিনয় ছিলো অনবদ্য। এক মধ্য বয়স্ক নারীর মনস্তত্ত্ব, একাকীত্ব, স্বপ্নভঙ্গ যেভাবে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন ঋতুপর্ণ ঘোষ তা অনন্য। বাড়িওয়ালী চলচ্চিত্র তিনটি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিল। ঋতুপর্ণ ঘোষ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রকার হিসেবে পেয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, কিরণ খের পেয়েছিলেন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী শাখায়।
একই বছর মুক্তি পেয়েছিল ঋতুপর্ণ ঘোষের পরবর্তী চলচ্চিত্র ‘অসুখ’। যে চলচ্চিত্রে এক অভিনেত্রী ও তার আয়ের উপর অনিচ্ছুকভাবে নির্ভরশীল বাবার সম্পর্ক দেখানো হয়। যেখানে এই অসুস্থতা বাবার সঙ্গে সেই অভিনেত্রীর দূরত্ব সৃষ্টি করায়। কিন্তু কি অসুখ সেটা জানে না কেউই। রোহিণী নামের সেই অভিনেত্রী চরিত্রে দেবশ্রী রায় ও তার বাবা সুধাময় চরিত্রে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় ছিল নিখুঁত। এই চলচ্চিত্র শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিল।
এরপর একে একে মুক্তি পেয়েছিল ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘উৎসব’, ‘তিতলি’ ও ‘শুভ মহরত’ চলচ্চিত্র।
উৎসব চলচ্চিত্র দুর্গাপূজা উৎসব অবলম্বনে। চলচ্চিত্র গল্পটা কলকাতার এক বনেদী পরিবারের। যেখানে দেখা যায় পরিবারের সদস্যরা দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাড়িতে জড়ো হয়েছেন। প্রত্যেকেরই এখন আলাদা পরিবার। মধ্যবিত্ত পরিবারের বিভিন্ন সাধারণ ও জটিল সমস্যা নিয়ে কি নিখুঁতভাবে তৈরি করেছেন ঋতুপর্ণ ঘোষ তা বলা বাহুল্য। এই চলচ্চিত্র ও শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিল। আর শুভ মহরত চলচ্চিত্র জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিল দুটো শাখায়। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার যেমন পেয়েছিল এই চলচ্চিত্র তেমনি শ্রেষ্ঠ সহ-অভিনেত্রী শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন এই চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী রাখি গুলজার।
ঋতুপর্ণ ঘোষের পরবর্তী চলচ্চিত্র ছিল ‘চোখের বালি’। রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস অবলম্বনে সৃষ্ট। ঋতুপর্ণ ঘোষের এই চলচ্চিত্রের বাজেটই ছিল তার সবগুলো চলচ্চিত্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। অসাধারণ ডিটেইল কাজ। ঐশ্বরিয়া রাইয়ের বাংলা চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়েছিল এই চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়েই। এই চলচ্চিত্র শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিল। একই বছর মুক্তি পেয়েছিল ওড়িয়া চলচ্চিত্র ‘কথা দেইথিল্লি মা কু’। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে অভিনেতা হিসেবে অভিষেক হয়েছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ।
পরের বছর হিন্দি চলচ্চিত্রে পরিচালক হিসেবে ঋতুপর্ণ ঘোষের যাত্রা শুরু হয়েছিল রেইনকোট চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে। এই চলচ্চিত্রের গল্প বিখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সিডনি পোর্টারের (ও হেনরি) বিখ্যাত ছোটগল্প ‘দ্য গিফট অফ দ্য ম্যাজাই’ অবলম্বনে। এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন অজয় দেবগন, ঐশ্বরিয়া রাই এবং আন্নু কাপুর।
যেখানে আমরা দেখি বেকার মনোজ ব্যবসা করার জন্য তার পুরনো বন্ধুদের কাছে সাহায্য চাইতে কলকাতায় আসে। এক বৃষ্টিভেজা দিনে সে দেখা করতে যায় পুরনো প্রেমিকা নীরজার সাথে। প্রেমের বেদনাদায়ক গল্পগুলো ঠিক যেমন হয়, এটিও তার ব্যতিক্রম নয়। মনোজের চেয়ে বিত্তবান পরিবার পাওয়ায় দূর শহর কলকাতায় বিয়ে হয়ে গিয়েছিল নীরজার। বেচারা মনোজ কোনোভাবে ঠেকাতে পারেনি সেই বিয়ে। কিন্তু প্রেম কি এত সহজে মরে যায়? বহু বছর পরেও তার শুধু একবার দেখা করবার সাধ জাগে। অবশেষে দেখা হলেই তাদের স্মৃতিময়তার দেয়ালে আঘাত লাগে। মুহূর্তেই দুজন দুজনের কাছে সেই পুরনো মান্নু এবং নীরু হয়ে ওঠে। রেইনকোট শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে সে বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিল।
ঋতুপর্ণ ঘোষের পরবর্তী চলচ্চিত্রগুলো, যেমন: অন্তরমহল, দোসর, দ্য লাস্ট লিয়ার বা ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’ চলচ্চিত্রগুলোতেও তার পরিচালনার নিখুঁত ছাপ পাওয়া যায়। দোসর যেমন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে বিশেষ জুরি পুরস্কার পেয়েছিল ঠিক তেমনি দ্য লাস্ট লিয়ারও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিল। দ্য লাস্ট লিয়ার ছিল ঋতুপর্ণ ঘোষ নির্মিত প্রথম ইংরেজি চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্রের গল্প এক প্রাক্তন শেক্সপিয়ারিয়ান থিয়েটার অভিনেতার জীবনের গল্প। অমিতাভ বচ্চন যে চলচ্চিত্রে কেন্দ্রীয় চরিত্রে দুর্ধর্ষ অভিনয় করেছিলেন। অন্তরমহল ছিল ব্রিটিশ আমলের এক জমিদার পরিবারের গল্প। দোসর চলচ্চিত্রের কাহিনীর শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে। যে চলচ্চিত্রে দাম্পত্য সংকট, সম্পর্কের টানাপড়েন, পরকীয়া ছাপিয়েও এক নিখাঁদ সম্পর্কের স্নিগ্ধতা আমরা দেখতে পাই।
ঋতুপর্ণ ঘোষের পরবর্তী চলচ্চিত্র ‘খেলা’ ও ছিল মানব সম্পর্কের গল্প। এটি মণীষা কৈরালার প্রথম বাংলা চলচ্চিত্র। একই বছরই মুক্তি পেয়েছিল ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও বিপাশা বসু অভিনীত এই চলচ্চিত্রও জাতীয় পুরস্কার পায়।
২০০৯ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘আবহমান’ চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্র ছিল ঋতুপর্ণ ঘোষের সবচেয়ে বিখ্যাত চলচ্চিত্রের মধ্যে অন্যতম চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্রের গল্প ঋতুপর্ণ ঘোষ নিজেই লিখেছিলেন। এই চলচ্চিত্রে আমরা দেখতে পাই এক বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার ও তার চলচ্চিত্রের অভিনয় করা অভিনেত্রী, স্মৃতি, সম্পর্কের অন্তঃকলহসহ নানান জটিলতা। যেখানে অনিকেত নামের সেই ভদ্রলোক বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার আর এককালের এক অভিনেত্রী দীপ্তিকে নিজের চলচ্চিত্রে নিতে গিয়ে প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন-যার পরিণাম বিয়ে। সেসময় সে চলচ্চিত্র আর তিনি শেষ করতে পারেননি। কালের প্রবাহে তার সংসারে ‘অপ্রতিম’ নামে এক ছেলের জন্ম হয়। তাদের সংসার বেশ সুখেই কাটছিল। চলচ্চিত্রের প্লট মোড় নেয় যখন অনিকেতের এক চলচ্চিত্রের অডিশন করতে আসে ‘শিখা’ নামের এক অভিনেত্রী। যার মধ্যে তিনি যৌবনের দীপ্তিকে খুঁজে ফেরেন। দীপ্তির মনে সন্দেহ জাগে। এক সময় মনে হতে থাকে অনিকেত বুঝি শিখার সাথে অবৈধ প্রেমে পড়েছে। দীপ্তির এই সন্দেহ অনিকেতের বেঁচে থাকার শেষ দিন পর্যন্ত থেকে যায়। আবহমান চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। অনেকে বলে থাকেন ‘আবহমান’ চলচ্চিত্র সত্যজিৎ রায় ও বিখ্যাত অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধ্যায়ের সম্পর্কের সেই আদ্যোপান্ত নিয়ে কল্পিত চলচ্চিত্র। যদিও তা নিয়ে কখনো মন্তব্য করতে চাননি ঋতুপর্ণ ঘোষ। হয়তো তাই, কিংবা স্রেফ কল্পনা। তবে ঋতুপর্ণ ঘোষ তো সবসময়ই সত্যজিৎ রায়ে মুগ্ধ ছিলেন, বলা চলে অনুসারীও ছিলেন। চলচ্চিত্রকার হিসেবে ঋতুপর্ণ ঘোষকে সবচেয়ে প্রভাবিত করেছিল যে দুজন তার মধ্যে অন্যতম সত্যজিৎ রায়। অন্যজন ইঙ্গমার বার্গম্যান।
পরের বছর রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসে ফের ফিরে গেলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ এবারের চলচ্চিত্র রবীন্দ্রনাথের "নৌকাডুবি" উপন্যাস অবলম্বনে একই নামে চলচ্চিত্র। নৌকাডুবি চলচ্চিত্রও ভীষণ বিস্তৃত কাজ। যেখানে ঋতুপর্ণ ঘোষ শুটিংয়ের জন্য কলকাতার পাশাপাশি বেছে নিয়েছিলেন বারাণসীকেও। সেই চিরচেনা গ্রাম বাংলা, সম্পর্কের ভুল, প্রেম, বিরহ। রবীন্দ্রনাথের নৌকাডুবি উপন্যাসকে আমরা চোখের সামনে বাস্তবভাবে দেখতে পাই। নৌকাডুবিতে ভুল সম্পর্কের জন্ম, মোক্তার থেকে ডাক্তার হয়ে উঠার ভুল পরিচয়। আবার শেষমেশ মিলন। এখানে আমরা দেখতে পাই দুই সম্পর্কের মাঝেও কি অবাধ পরিচয়। সেটা রমেশের সঙ্গে কমলার মিথ্যা সম্পর্ক আর শেষদিকে ডাক্তার নলীনাক্ষের সঙ্গে হঠাৎ হেমনলিনীর কাশীতে পরিচয়। সবশেষে বিরহ ছাপিয়ে অনন্য মিলন। নৌকাডুবি উপন্যাসে বিস্তৃতভাবে কাজ করেছেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস বলে ফুটিয়ে তোলা ভীষণ চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু সাহিত্য নির্ভর চলচ্চিত্রে ঋতুপর্ণ ঘোষের তুলনা পাওয়া ভার। তাই এই চলচ্চিত্র হয়ে উঠেছিলো নিখুঁত। চলচ্চিত্রের প্রতিটি পর্যায়ে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন চরিত্রের অনন্য বাস্তবতা। নৌকাডুবি চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। আবার একই সঙ্গে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবেও এই চলচ্চিত্র পেয়েছিলো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
ঋতুপর্ণ ঘোষের আরেকটি চলচ্চিত্রের কথা বলতেই হয়। এই চলচ্চিত্র যেন তার নিজের জীবনের গল্পও। ‘চিত্রাঙ্গদা: দ্য ক্রাউনিং উইশ’ চলচ্চিত্রের গল্প একটি ইচ্ছের গল্প, ভালোবাসার গল্প, একজন মানুষের গল্প। যেখানে আমরা দেখি এক কোরিওগ্রাফারের গল্প। যে কিনা পড়াশোনা করেছিলো ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। আবার সে নাচতে ভীষণ ভালোবাসে। জীবন তাকে কখনো কখনো দুহাত ভরে দিয়েছে। কিন্তু কি যেন নেই। একাকীত্ব আর নিঃসঙ্গতা যেন তাকে আবেশ করে রেখেছিল। একসময় তার দেখা হলো এক উড়নচণ্ডী ছেলের সাথে। যার কিনা চালচুলো কিছুই নেই। সেই ছেলেটিকেই তার ভালো লাগে। ছেলেটির অসংখ্য ভুল, সে ছেলে মাদকাসক্ত। কিন্তু তার ভালো লাগে। সে প্রচণ্ড ভালোবাসে ছেলেটিকে। একসময় প্রেম জাগে। কিন্তু সমাজের চোখে তো সমপ্রেম কিংবা সমকামিতা নিষিদ্ধ। আব সেই ছেলে একজন সন্তান চায়। একসময় সেই কোরিওগ্রাফার রূপান্তরিত নারী হতে যায়। ভীষণ যন্ত্রণার। কিন্তু কোরিওগ্রাফার ছেলেটি করে। এদিকে সেই উড়নচণ্ডী হারিয়ে যায়। সে বলে আমি তো একজন নারীর গর্ভেই সন্তান উৎপাদন করতে পারি। তোমার গর্ভে কেন আমি নিবো? একসময় সেই উড়নচণ্ডী ছেলেটির কাছে ভালোবাসার চেয়ে রূপান্তরিত নারী সত্ত্বাই বড় হয়ে উঠে।
এই চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে ঋতুপর্ণ ঘোষ যেন দেখালেন সমাজের বুকে নানা চিত্র। যে গল্প এই সমাজে বলতে মানা। বা সমাজের চোখে হার মেনে যাওয়া। এই চলচ্চিত্রে আমরা দেখি একই সঙ্গে বাবা মার সম্পর্ক। সেই কোরিওগ্রাফার বাবা মায়ের ইচ্ছেতে ইঞ্জিনিয়ার হয়েছিল, একসময় সেই ইঞ্জিনিয়ারিং বাদ দিয়ে নৃত্যশিল্পী হলো, কোরিওগ্রাফার হলো। বাবা মায়ের ইচ্ছের মূল্যায়ন করেনি, আবার যে ছেলের সঙ্গে পরবর্তীতে সম্পর্ক হলো, সে ছেলেকে প্রচণ্ড ভালোবাসার পর, সমস্ত কিছু মেনে নেয়ার পরও যখন সেই ছেলেটি নানা দোহাই দিয়ে হারিয়েও গেলো। ঠিক তখন বাবা মা'ই এসে তার পাশে দাঁড়ালো।
চিত্রাঙ্গদা: দ্য ক্রাউনিং উইশ এক স্বপ্নের গল্প, স্বপ্নচ্যুতি ও আত্মউপলব্ধির গল্প। যেখানে সমাজের পরিচয় ব্যক্তি পরিচয়, সমাজের চলতি নিয়ম গ্রাস করে নিষিক্ত প্রেমকে। ঋতুপর্ণ ঘোষ তার চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে যেমনটা প্রভাব বিস্তার করেছেন ঠিক তেমনিভাবে জীবনের শেষ বছরগুলিতে তিনি সমকামী এবং রূপান্তরকামী জীবনযাত্রা, অধিকার নিয়ে লড়েছেন যা এ উপমহাদেশে দেখাই যায় না আর কেউ যদি কখনো সমকামিতা প্রকাশ করে তবে তো সে সমাজের চোখে চির নিষিদ্ধই হয়ে পড়ে।
বাংলা চলচ্চিত্রে ঋতুপর্ণ ঘোষের চলচ্চিত্র নতুন এক ধারার সৃষ্টি করেছিল। আমাদের প্রাত্যহিক জীবন, বাস্তবিক সম্পর্ক, সম্পর্কের পিছুটান- জটিলতা, চিরন্তন বাস্তবতা, নিষিদ্ধ প্রেম, উচ্ছ্বাস সমস্ত কিছুই ছিল ঋতুপর্ণ ঘোষের চলচ্চিত্র নির্মাণের উপজীব্য। সত্যজিৎ পরবর্তী প্রজন্মে তিনি যখন চলচ্চিত্রের নির্মাণ শুরু করেন তখন বাংলা চলচ্চিত্র প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েছে। যে সময় ঋতুপর্ণ ঘোষ চলচ্চিত্র যাত্রা শুরু করেছিলেন সেই পথটা ছিল ভীষণ রকম বন্ধুর। কারণ তখন ভালো চলচ্চিত্রের অভাবে পশ্চিমবঙ্গে চলচ্চিত্র জগত ভেঙে পড়েছে, ঢাকাই চলচ্চিত্রে অশ্লীল যুগের সূচনা হয়েছে। ঠিক সেই সময় ঋতুপর্ণ ঘোষ একাই পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্রে নতুন করে জাগরণ ঘটালেন। তিনি হয়ে উঠলেন আলোকবর্তিকা। মাত্র ৪৯ বছরের জীবন ঋতুপর্ণ ঘোষের। আরও সংক্ষেপে বললে ২০ বছরের চলচ্চিত্র জীবন। এই ক্ষুদ্র চলচ্চিত্র জীবনে ১৯টি চলচ্চিত্র। তার মধ্যে ১২টিই আবার ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত চলচ্চিত্র। তার নির্মিত একের পর এক গল্প-প্রধান নিখুঁত চলচ্চিত্র, অনন্য পরিচালনার মুন্সিয়ানা আবার ফেরাল পশ্চিমবঙ্গে বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালি অধ্যায়।
ঋতুপর্ণ ঘোষ তো কেবল একজন অসাধারণ চলচ্চিত্রকারই ছিলেন না, তিনি ছিলেন সমাজ সমালোচক, ছিলেন স্রোতের বিপরীতে এগিয়ে চলা এক অনন্য মানুষ, শুদ্ধতার এক অনন্য উপাখ্যান। এজন্য তাকে কম ঝক্কি সহ্য করতে হয়নি। একের পর এক অহেতুক সমালোচনায় বিদ্ধ হয়েছেন। প্রশ্নবাণ তো ছিলই, তার একান্ত ব্যক্তিগত জীবনকে নিয়েও নোংরামি ছড়াতে দ্বিধা করেনি তারা। এসবের মধ্যেও কিন্তু একবারের জন্য আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি ঋতুপর্ণ ঘোষ। তিনি চলছেন তার অভিযাত্রায়। তার চলচ্চিত্র কেবল নিছক বিনোদনের বিষয়বস্তু ছিল না। বরং ছিল কঠিনতম সত্য। তার চলচ্চিত্র ও জীবন ছিল সমাজের চোখে আঙ্গুল দিয়ে শুধরে দেয়া ভুল। তিনি দেখিয়েছেন কি করে সমস্ত ভুলে ভরা মিথ্যার বসতি গড়া সমাজেও গড়ে তোলা যায় আদর্শের গভীরতম ধারা।
ঋত্বিক ঘটকের সেই বিখ্যাত উক্তি যেন ঋতুপর্ণ ঘোষের চলচ্চিত্রের বেলায় খাটে। ঋত্বিক ঘটক যেমন তার চলচ্চিত্রের বিষয়ে বলেছিলেন, ‘আমি প্রতি মুহূর্তে আপনাকে ধাক্কা দিয়ে বোঝাব যে ইট ইজ নট এ ইমেজিনারি স্টোরি বা আমি আপনাকে সস্তা আনন্দ দিতে আসেনি’। ঠিক একই ব্যাখ্যা ঋতুপর্ণ ঘোষের চলচ্চিত্রেও প্রমাণ পাওয়া যায়।
আজকের দিনে চলে গিয়েছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী চলচ্চিত্রকার ঋতুপর্ণ ঘোষ। আজ ঋতুপর্ণ ঘোষের প্রয়াণ দিবস। বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই বাংলা চলচ্চিত্রের এই অসামান্য নির্মাতার প্রতি।
তথ্যসূত্র:
ফার্স্ট পার্সন/ ঋতুপর্ণ ঘোষ
Comments