নীলফামারীর সুপার সুপারি
![](https://bangla.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/feature/images/betel-nut_0.jpg?itok=wEoJHLqf×tamp=1622442749)
বাজারে ভাল দাম ও খুব বেশি যত্ন না নিয়েও উচ্চ ফলন পাওয়া যায় সুপারিতে। যে কারণে অন্যান্য ফসলের তুলনায় সুপারি চাষ করেই নীলফামারীর কৃষকরা বেশি লাভ করতে পারছেন। এতে পরিবর্তন আসছে তাদের ভাগ্যেও।
এ জেলায় উৎপাদিত সুপারি বিশেষ সুস্বাদু হওয়ার কারণে সারাদেশের ব্যবসায়ীদের কাছে এর চাহিদা অনেক বেশি।
দ্য ডেইলি স্টারের সংবাদদাতা বিভিন্ন গ্রাম, যেমন: ডোমার উপজেলার চিলাহাটি, উত্তর কেতকীবাড়ি ও চাঁদখানা এবং ডিমলা উপজেলার দক্ষিণ খড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি ও নাউতারায় সরেজমিনে পরিদর্শন করে দুই থেকে ১০ একর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত সুপারি বাগান দেখতে পান।
সেখানে প্রায় প্রতিটি বাড়ির উঠান ও ফসলি জমির আইলের ওপরও সুপারি গাছ দেখতে পাওয়া যায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের (ডিএই) সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট কৃষি কর্মকর্তা ইমরান আহমেদ ডেইলি স্টারকে জানান, এ বছর প্রায় চার হাজার একর জমিতে পাঁচ হাজার টন সুপারি চাষ হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বেশি পরিমাণে পলিমাটিযুক্ত ভূমি সুপারি চাষের জন্য উৎকৃষ্ট এবং এ অঞ্চলে এ ধরনের মাটি সহজলভ্য। এ কারণেই আমরা সুপারি চাষে ব্যবহৃত ভূমির পরিমাণ বাড়তে দেখছি।’
ডিমলা উপজেলার দক্ষিণ খড়িবাড়ি গ্রামের সুপারি চাষি হাবিবুর রহমান (৫০) বলেন, ‘আমার দুই একর বাগানে দুই হাজার ২০০টি গাছ রয়েছে। যেখান থেকে আমি পাঁচ লাখ সুপারি পেতে পারি এবং উৎপাদন মৌসুম তুঙ্গে থাকা অবস্থায় সেগুলোকে ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারব বলে আশাবাদী।’
ডোমারের চিলাহাটি গ্রামের আবদুল কাদের জানিয়েছেন, তার একটি তিন একরের বাগান রয়েছে।
৬০ বছর বয়সী এ কৃষক বলেন, ‘একটি সুপারি গাছের যত্ন নেওয়ার জন্য সার ও শ্রমিকের মজুরি বাবদ মাত্র ৫০ টাকা খরচ হয়। কিন্তু, গড়ে প্রতিটি গাছ থেকে প্রায় ৩২০টি সুপারি আহরণ করা যায়, যার বাজারমূল্য প্রায় এক হাজার ২৮০ টাকা।’
আবদুল খালেক (৬৫) নামে ডিমলার সুটিবাড়ি হাটের এক ইজারাদার বলেন, ‘প্রতি মঙ্গল ও শুক্রবার হাটের দিন প্রায় ১২ থেকে ১৫ ট্রাকভর্তি সুপারি এই বাজার থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেয়।’
‘এ এলাকায় সুপারি চাষকে ঘিরে বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যও গড়ে উঠেছে’, বলেন তিনি।
ডোমারের চাঁদখানা গ্রামের চাষি ইন্তাজ আলী জানান, মধ্য এপ্রিল থেকে বাগানের সুপারি আহরণ করা শুরু হয় এবং তা জুনের শেষ পর্যন্ত চলতে থাকে।
নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ সরকার ডেইলি স্টারকে জানান, সুপারি এ অঞ্চলে একটি অর্থকরী ফসল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে এবং অনেক তরুণ উদ্যোক্তা এটিকে একটি লাভজনক ব্যবসা হিসেবে বিবেচনা করছেন।
তিনি বলেন, ‘উদ্যোক্তারা তাদের উৎপাদিত সুপারি ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া ও অন্যান্য শহরে পাঠান। যা এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।’
জেলা ডিএই অফিসের সহকারী পরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিকী ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা কৃষকদেরকে তাদের জমিতে বিভিন্ন ধরনের শস্যের আবাদ করার উৎসাহ দেই।’
‘আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের আশ্বাসে কৃষকরা এখন সুপারি চাষে এগিয়ে আসছেন এবং তারা প্রথাগত শস্য চাষের চেয়ে বেশি উপার্জন করছেন’, বলেন তিনি।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান
Comments