কোন পর্যায়ে বঙ্গভ্যাক্সের অনুমোদন

চার মাসের বেশি সময় আগে আবেদন করলেও এখনো সরকারের কাছ থেকে করোনার টিকা বঙ্গভ্যাক্সের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন পায়নি দেশীয় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড।

চার মাসের বেশি সময় আগে আবেদন করলেও এখনো সরকারের কাছ থেকে করোনার টিকা বঙ্গভ্যাক্সের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন পায়নি দেশীয় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড।

চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি ওষুধ কোম্পানিটি এক চিঠির মাধ্যমে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) কাছে দেশে উৎপাদিত টিকাটি মানবদেহে পরীক্ষার অনুমতি চেয়ে আবেদন জানায়।

তবে, কোম্পানির কর্মকর্তারা বলছেন, এখনো নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো সাড়া পাননি তারা। ট্রায়ালের অনুমোদন পেলে তারা এতদিনে টিকা উৎপাদন শুরুর কাছাকাছি পর্যায়ে চলে যেতে পারতেন।

করোনার টিকা সরবরাহের ক্ষেত্রে সংকট তৈরি হওয়ায় বাংলাদেশে গণটিকাদান কর্মসূচি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।

গ্লোব বায়োটেকের কোয়ালিটি অ্যান্ড রেগুলেটরি অপারেশনসের প্রধান ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কেন এমন দেরি হচ্ছে আমরা তা জানি না। গত ৯ ফেব্রুয়ারি বিএমআরসি আমাদের কাছে কিছু ডকুমেন্ট চায়। ১৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আমরা এগুলো জমা দিই। কিন্তু, এরপর থেকে আর কোনো অগ্রগতি নেই।’

তিনি জানান, সবুজ সংকেত পাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই তাদের মনোনীত ক্লিনিক্যাল রিসার্চ অর্গানাইজেশন (সিআরও) ট্রায়াল শুরু করতে প্রস্তত আছে। বঙ্গভ্যাক্স টিকাটির শুধু এক ডোজ নিলেই চলে এবং এটি বাজারের অন্যান্য টিকার চেয়ে সাশ্রয়ী।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিএমআরসির চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ মোদাসসের আলী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি নেই। আমি এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএমআরসির এথিক্যাল কমিটির এক সদস্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বঙ্গভ্যাক্স যথেষ্ট মানসম্মত নয় এবং তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের আগে ওষুধ কোম্পানিটিকে আরও কাজ করতে হবে।’

ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, ট্রায়ালের প্রথম ধাপে অল্পকিছু মানুষকে নিয়ে ছোট গ্রুপ করে তাদের টিকা দেওয়া হয়। দ্বিতীয় ধাপে টার্গেট গ্রুপের মতো বৈশিষ্টসম্পন্ন মানুষকে টিকা দিয়ে ট্রায়ালের আওতা বাড়ানো হয়। পরে তৃতীয় ধাপে, নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্যে কয়েক হাজার মানুষকে টিকা দেওয়া হয়।

বিএমআরসির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে যেসব ওষুধ পরীক্ষা করা হয়, সেগুলোকে প্রথম ধাপ থেকে তৃতীয় ধাপে নেওয়ার জন্য ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল দরকার হয়। সাধারণত, আগের ধাপ থেকে পাওয়া তথ্য বিবেচনা করে কয়েক ধাপে এসব ট্রায়ালের অনুমোদন দেওয়া হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল হাসান খান বলেন, ‘জরুরি অবস্থায় ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য অনতিবিলম্বে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া উচিত। এ প্রক্রিয়াটির পেছনে অন্য কোনো বিষয় আছে কি না, আমি জানি না। কিন্তু যাই হোক, চার মাস ধরেও কোনো সিদ্ধান্ত না দেওয়ার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়।’

তিনি বলেন, ‘মানুষ মারা যাচ্ছে এবং টিকার সংকট রয়েছে। তাই টিকাটি যদি মানের শর্ত পূরণ করতে পারে, তবে দ্রুত এটির নীতিগত অনুমোদন দেওয়া উচিত।’

বঙ্গভ্যাক্সের বিকাশ

গত বছরের ৫ অক্টোবর গ্লোব বায়োটেক জানায়, তাদের প্রথম টিকা ইঁদুরের ওপর প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সফল হয়েছে। গবেষকরা প্রথমে এ টিকার নাম দেন ব্যানকোভিড। পরে এর নাম পরিবর্তন করে বঙ্গভ্যাক্স রাখা হয়।

১৭ অক্টোবর গ্লোব বায়োটেকের আরও দুটি টিকার সঙ্গে বঙ্গভ্যাক্স বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার খসড়া ল্যান্ডস্কেপ অ্যান্ড ট্র্যাকার অব কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের অন্তর্ভুক্ত হয়। 

গত ৬ জানুয়ারি কোম্পানিটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছ থেকে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য প্রয়োজনীয় ডোজ উৎপাদনের অনুমোদন পায়। গ্লোব বায়োটেক প্রাথমিকভাবে আইসিডিডিআরবি’র সঙ্গে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের একটি চুক্তি করে। পরে এ চুক্তি বাতিল হয়ে যায় এবং কোম্পানিটি সিআরওর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়।

গত মাসে গ্লোব বায়োটেকের সিইও কাকন নাগ ও অন্যরা যুক্তরাষ্ট্রের একটি মেডিকেল জার্নালে বঙ্গভ্যাক্সের ওপর একটি গবেষণা প্রকাশ করেন।

ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

1h ago