চিলমারী নদীবন্দর: নেই গণশৌচাগার, যাত্রী দুর্ভোগ চরমে

কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে অবস্থিত চিলমারী নদীবন্দর তার জৌলুস হারালেও প্রাচীন এই বন্দরটি ব্যবহার করে এখনো এই জনপদের হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। তবে যাত্রীদের পদভারে মুখর এই বন্দরে কোনো গণশৌচাগার না থাকায় ভোগান্তির শেষ নেই তাদের। বিশেষ করে নারী যাত্রীদের দুর্ভোগ আরও বেশি।
Chilmari_river_port1_2June2.jpg
কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে অবস্থিত চিলমারী নদীবন্দর গণশৌচাগার না থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের। ছবি: স্টার

কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে অবস্থিত চিলমারী নদীবন্দর তার জৌলুস হারালেও প্রাচীন এই বন্দরটি ব্যবহার করে এখনো এই জনপদের হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। তবে যাত্রীদের পদভারে মুখর এই বন্দরে কোনো গণশৌচাগার না থাকায় ভোগান্তির শেষ নেই তাদের। বিশেষ করে নারী যাত্রীদের দুর্ভোগ আরও বেশি।

স্থানীয় বাসিন্দা ও যাত্রীদের ভাষ্য, প্রতিদিন তারা এই বন্দর ব্যবহার করে রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করেন। এসব এলাকা থেকে নৌকায় করে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা ভ্রমণ করে এসে অনেকের শৌচাগার ব্যবহারের দরকার হয়। কিন্তু বন্দরে শৌচাগার ব্যবহারের সুযোগ না থাকায় তাদের নদীর পাড়ে অবস্থিত বাড়িগুলোতে গিয়ে শৌচাগার ব্যবহার করতে হয়।

Chilmari_river_port3_2June2.jpg
চিলমারী নদীবন্দর দিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন রুটে অন্তত ৫০টি নৌকা চলাচল করে। প্রতি নৌকায় যাত্রী থাকে ৮০ থেকে ১০০ জনের মতো। ছবি: স্টার

আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব আর্কিওলজির গবেষণা অনুসারে, এই অঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র-তিস্তা অববাহিকা পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন আন্তর্জাতিক নৌ বাণিজ্যের রুট। এই অববাহিকার চিলমারী নদীবন্দর ব্যবহার করে আরব ও রোমানরা এক সময় চীন, ভুটান ও আসাম থেকে পণ্য আনা-নেওয়া করতো। যা পরিচিত ছিল আসাম ও পূর্ববাংলার দরজা হিসেবে।

এমনকি খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ অব্দ থেকে ৭০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত আরব বণিকদের সঙ্গে পূর্ব বাংলার বাণিজ্যিক সম্পর্কের মূলেও ছিল আড়াই হাজার বছরের পুরোনো এই চিলমারী নদীবন্দর। সম্রাট আকবরের আমলে এ বন্দরে ছিল জাহাজ তৈরির কারখানা। যা চালু ছিল ইংরেজ আমল পর্যন্ত।

সম্প্রতি নাসির উদ্দিন নামে এক যাত্রী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি চিলমারী বন্দর থেকে নিয়মিত রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলায় যাতায়াত করেন। এসব জায়গায় পৌঁছাতে কিংবা আবার বন্দর পর্যন্ত আসতে নৌকায় অনেকটা সময় লাগে। শৌচাগার ব্যবহারের প্রয়োজন হলে আশপাশের কোনো বাড়িতে যেতে হয়।

Chilmari_river_port2_2June2.jpg
দীর্ঘ ভ্রমণের পরে শৌচাগার ব্যবহারের প্রয়োজন হলে আশপাশের কোনো বাড়িতে যেতে হয়। ছবি: স্টার

একই রকম ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন শফিয়ার রহমান নামে আরেকজন। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় লাজ-লজ্জার মাথা খেয়ে নদীর পাড়েই কাজ সারি। বন্দরের ইজারাদারকে অনেক বার এ ব্যাপারে বলা হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।’

আরও কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বন্দরে শৌচাগারের অভাবে নারী যাত্রীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। মোসলেমা বেগম নামে এক যাত্রী বলেন, ‘পুরুষ মানুষ কোনো না কোনোভাবে বাইরে শৌচকার্য করতে পারেন। মেয়েদের ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হয় না। তাই হয় তারা বেগ চাপিয়ে রাখেন, নয়তো আশপাশের কোনো বাড়িতে যান।’

এ বিষয়ে কথা হয় চিলমারী নদীবন্দরের ইজারাদারের প্রতিনিধি মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে। তার হিসাবে, প্রতিদিন এই বন্দর দিয়ে বিভিন্ন রুটে অন্তত ৫০টি নৌকা চলাচল করে। প্রতি নৌকায় যাত্রী থাকে ৮০ থেকে ১০০ জনের মতো।

মোহাম্মদ আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘নদীবন্দরে গণশৌচাগার স্থাপনের জন্য কয়েক বার জেলা পরিষদকে বলা হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।’

অবশ্য কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী ফরিদুল ইসলাম জানান, চিলমারী নদীবন্দরসহ আরও কয়েকটি নৌ-ঘাটে গণশৌচাগার স্থাপনের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আগামী এক মাসের মধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ করে নির্মাণকাজ শুরু করা হবে।’

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

6h ago