কুয়েতে ঘুষ গ্রহণে মধ্যস্থতার দায়ে এক বাংলাদেশির ৩ বছরের কারাদণ্ড

কুয়েতের আদালত। ছবি: সংগৃহীত

কুয়েতের গাড়ির নিবন্ধন নবায়নে ঘুষ নিয়ে বিশেষ সুবিধা আদায়ে মধ্যস্থতার অভিযোগ এক প্রবাসী বাংলাদেশিকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির উচ্চ আদালত। এই আদেশের মাধ্যমে নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখেছেন আপিল আদালত।

সোমবার (৩১ মে) আপিল আদালতের বিচারপতি সালাহ আল-হুতি নিম্ন আদালতের দেওয়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত একজন কুয়েতি কর্মচারীকে খালাস এবং প্রবাসী বাংলাদেশি সাদ্দাম হোসেনের তিন বছরের কারাদণ্ডের রায় বহালের আদেশ দেন।

তবে, দণ্ডপ্রাপ্ত সাদ্দাম হোসেনের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।

আরবি দৈনিক আল সিয়াসার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশন প্রথম আসামি আহমাদি ট্রাফিক বিভাগের নারী কর্মচারীর বিরুদ্ধে যানবাহন লাইসেন্স নবায়নে ৫ থেকে ১০ কুয়েতি দিনার ঘুষ বা ‘উপহার’ দাবি ও গ্রহণ এবং দ্বিতীয় আসামি প্রবাসী বাংলাদেশির বিরুদ্ধে এই প্রক্রিয়াটি সহজ করা এবং ঘুষ আদায়ের মধ্যস্থতার অভিযোগ তুলেছিলেন। তদন্তে বেরিয়ে এসেছিল গ্রেপ্তারের আগে তিন মাসে অভিযুক্ত বাংলাদেশি সাদ্দাম হোসেন ঘুষ নিয়ে ৩০ হাজার কুয়েতি দিনার যা বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় ৮৫ লাখ টাকা আয় করেছিলেন। এই আয় থেকে প্রায় ১৫ হাজার দিনার দেশে স্থানান্তর করেছিলেন।

প্রথম আসামি ট্রাফিক বিভাগের কুয়েতি নারী কর্মচারীর পক্ষের আইনজীবী ফাদেল আল-বাসমান আদালতকে জানান, তার ক্লায়েন্টের বিরুদ্ধে করা অভিযোগগুলো সঠিক নয় এবং তার যথাযথ প্রমাণের অভাব ছিল। তিনি জোর দিয়েছিলেন, প্রসিকিউশনের উপস্থাপিত ভিডিও ক্লিপগুলোতে অডিও বা এমনকি তার ক্লায়েন্টের ছবি পরিষ্কার নয়।

গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে গাড়ির নিবন্ধন নবায়নে ঘুষ নিয়ে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ বাংলাদেশি সাদ্দাম হোসেনকে গ্রেপ্তার এবং ট্রাফিক বিভাগের কুয়েতি নারী কর্মীকে প্রসিকিউশনে পাঠানো হয়।

কুয়েতি সংবাদ মাধ্যমগুলোর খবরের সূত্রে জানা যায়, গত বছর করোনা পরিস্থিতিতে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নাগরিক ও প্রবাসীদের গাড়ির নিবন্ধন নবায়নে নতুন নিয়ম চালু করে। ওয়েবসাইটে আগে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে বারকোড ইস্যুর মাধ্যমে যাচাই-বাছাইয়ের ঝামেলা ছাড়াই গাড়ির লাইসেন্স নবায়নের সুবিধা দেওয়া হয়।

কুয়েতের বিশাল সংখ্যক প্রবাসীর গাড়ি নিবন্ধন নবায়নের প্রয়োজনীয়তা দেখে বাংলাদেশি সাদ্দাম হোসেন ওই পরিস্থিতিতে সুবিধা নিতে আহমদী ট্রাফিক বিভাগের ওই নারী কর্মীর সঙ্গে যোগসাজেশ ও অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ঘুষের বিনিময়ে আগাম অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়াই গাড়ি নিবন্ধন নবায়নের সুযোগে অবৈধভাবে আয়ের পথে হাঁটেন। এই প্রক্রিয়ায় নতুন নিয়মের অপব্যবহার করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেককে নবায়ন করে দিয়েছিলেন। বিনিময়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছিলেন সাদ্দাম হোসেন  ও তার কুয়েতি সহযোগী।

ঘুষের বিনিময়ে গাড়ির নিবন্ধন নবায়নের বিষয়টি গোপনে জানতে পেরে আহমাদি প্রদেশের পুলিশ তদন্তে নামে। তদন্তে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় সাদ্দামকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সাদ্দাম স্বীকার করেন তিনি কেবল একজন মধ্যস্থতাকারী, প্রবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ, আর্থিক লেনদেন ও নবায়নের কপি হস্তান্তরের কাজটি তিনি করতেন। তবে, মূল প্রক্রিয় সম্পন্ন হতো ট্রাফিক বিভাগের ওই কুয়েতি নারী কর্মচারীর মাধ্যমে। তিনি এবং ওই কর্মচারী প্রত্যেকে দশ দিনার করে ঘুষ ভাগ করে নিতেন।

সাদ্দামের স্বীকারোক্তির আহমাদি ট্রাফিক বিভাগের ওই নারী কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারী দল। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে সব স্বীকার করেন তিনি। এই অপরাধে তাকে প্রসিকিউশনে পাঠানো হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Central bank at odds with BPO over Nagad’s future

The discord became apparent after Faiz Ahmed Taiyeb, special assistant to the chief adviser with authority over the Ministry of Posts, Telecommunications and IT, sent a letter to the BB governor on May 12 and posted the letter to his Facebook account recently

3h ago