বাজেটে কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ না দেওয়ায় টিআইবির সাধুবাদ
২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থের মোড়কে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দানের বিষয়ে নতুন করে ঘোষণা না দেওয়াকে সতর্ক সাধুবাদ জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
পাশাপাশি সৎ করদাতাদের প্রতি বৈষম্যমূলক ও অসাংবিধানিক এই সুবিধা যেন অন্য কোনো উপায়ে আয়কর অধ্যাদেশে রাখা না হয়, সে বিষয়েও দৃষ্টি আকর্ষণ করছে সংস্থাটি। একইভাবে কোভিড নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যখাতের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ খাতসমূহে বরাদ্দ বৃদ্ধিই নয়, সার্বিকভাবে বাজেট বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট পথরেখা না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে টিআইবি।
আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সব মহলের তীব্র আপত্তি ও প্রতিবাদ সত্ত্বেও চলতি বাজেটে অর্থমন্ত্রী কালো টাকা বৈধ করার যে ঢালাও সুবিধা দিয়েছিলেন, সেটি আসন্ন বাজেটে নতুন করে না রাখার সিদ্ধান্ত সরকারের বোধোদয় হিসেবে ধরে নেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে আমরা বিশ্বাস করতে যাই যে, সরকারপ্রধানের “দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা”র বক্তব্যকে সম্মান করে শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ এই অনৈতিক সুবিধাটি আয়কর অধ্যাদেশের আইনি মারপ্যাঁচে ফেলে বা স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর চাপে পড়ে অব্যাহত রাখবে না।’
করোনাকালীন এই সময়ে সার্বিকভাবে জনকল্যাণমুখী, অংশীদারিত্বমূলক এবং মানুষের জীবন রক্ষায় প্রয়োজনীয় বাজেট প্রদানের আহ্বান জানিয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ‘২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করে ৩৩ হাজার কোটি টাকা (যা মোট বাজেটের প্রায় ৭ শতাংশ) রাখা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় এখনো তা অনেক কম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশে চিকিৎসা সেবায় সরকারের ২৬ শতাংশ খরচের বিপরীতে রোগীর খরচ হয় ৭৪ শতাংশ, যা জাতিসংঘের সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রস্তাবে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য লজ্জাজনক। আবার ক্রমাগত দুর্নীতি ও ন্যায়সঙ্গত ব্যয় সক্ষমতার অভাবে এই বরাদ্দও সঠিকভাবে ব্যয়িত না হওয়ার প্রবল ঝুঁকি আছে, যা থেকে উত্তরণে বাজেটে সুনির্দিষ্ট কোনো পথরেখা দেওয়া হয়নি, যা হতাশাব্যঞ্জক। যখন কিনা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্বাস্থ্যখাতে প্রকাশিত অকল্পনীয় ও আকাশচুম্বী দুর্নীতির লাগাম টানতে এ খাতটি ঢেলে সাজানোর কোনো বিকল্প নেই।’
করোনা মোকাবিলায় ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ এবং দেশে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে টিকা কার্যক্রমে সরকারের বিনিয়োগ ভাবনাকে সাধুবাদ জানালেও টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় বরাদ্দ দেওয়াটাই যথেষ্ট নয়। এক্ষেত্রে অর্থব্যয় প্রক্রিয়া যেন স্বচ্ছতার সঙ্গে করা হয় এবং স্বাস্থ্যখাতে জেঁকে বসা দুর্নীতি যেন কোনোভাবেই এতে সুযোগ নিতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। একইভাবে করোনার টিকা সংগ্রহের ক্ষেত্রেও সরকার স্বচ্ছ ক্রয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করবে এবং জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবে এমনটাই প্রত্যাশিত।’
শহরের বাইরে হাসপাতাল সেবার পরিধি বাড়াতে ১০ বছরের জন্য কর রেয়াত একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বলেও মন্তব্য করেন ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে গ্রামীণ জনপদে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার সুযোগ তৈরি হবে।’
প্রস্তাবিত বাজেটে অনুন্নয়ন খাতে মোট বাজেটের প্রায় ৬০ শতাংশ বরাদ্দের খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘করোনাকালীন বাস্তবতা বিবেচনায় সরকার অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে জরুরি সেবামূলক খাতসমূহে বাস্তবসম্মত বরাদ্দ রাখবে এমনটাই প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু মোট বরাদ্দের দিক থেকে চতুর্থ সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে জনপ্রশাসন (৭.৬%) আর এর সঙ্গে প্রতিরক্ষা ব্যয় যোগ করলে পরিমাণটি প্রায় ১৪ ভাগ ছাড়িয়ে যায়। বছর বছর বরাদ্দ বাড়ানো হলেও জনপ্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে কার্যকর কৌশলের অনুপস্থিতি হতাশাজনক। একইসঙ্গে প্রতিরক্ষা খাতে ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনয়নেও কোনো ঘোষণা না থাকা সুশাসনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন মাত্র। সর্বোপরি, বাজেট বাস্তবায়ন, বিশেষ করে সরকারি ক্রয় খাতসহ সব প্রকার ব্যয়ের ক্ষেত্রে নিরঙ্কুশ স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও কঠোর শুদ্ধাচার নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি জোরালো আহ্বান জানাচ্ছি।’
Comments