সাতক্ষীরায় বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম-পরীক্ষার ব্যবস্থা
সাতক্ষীরা জেলায় করোনা সংক্রমণের হার দিন দিন বাড়ছে। এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন স্থানীয় স্বাস্থ্য সেবা সংশ্লিষ্টরা। জেলায় পর্যাপ্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম না থাকায় সংক্রমণ আরও বেড়ে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে বলেও মনে করছেন তারা।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে আরটি-পিসিআর ল্যাবে প্রতিদিন ৯৪টি নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব। গত ১ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত এক হাজার ২৬২টি নমুনা পরীক্ষা করে ২৭০ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। সংক্রমণের হার ২১ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
আজ শুক্রবার ৯৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ৫০ জন আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়। সংক্রমণের এই পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া, নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ফায়সাল আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘করোনা রোগীদের চিকিৎসায় আলাদা ইউনিট খোলা হয়েছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম থাকলেও সেটি চালু নেই। চালু হতে এখনো দুই সপ্তাহ লাগবে। বর্তমানে হাসপাতালে ২৮টি বড় ও ৭৪টি ছোট অক্সিজেন সিলেন্ডার রয়েছে। হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা ছিল ১৪টি, সবগুলো মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডাক্তার ও নার্স সংকট না থাকলেও করোনা রোগীদের সেবা দেওয়ার মতো প্রশিক্ষিত ডাক্তার ও নার্সের সংখ্যা খুবই কম। আমাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম, হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা, মনিটর জরুরি ভিত্তিতে দরকার।’
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. আরিফ আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ডাক্তার ও নার্সরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু করোনা রোগী দিন দিন বাড়ছে। শুধু শয্যা বাড়লে চলবে না। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম বাড়াতে হবে। একটি ল্যাবে আমাদের প্রতিদিন ৯৪টি নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা রয়েছে। এই পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। আরটি-পিসিআর মেশিন হয়তো বাড়ানো সম্ভব হবে না। দুই শিফটে কাজ করে কীভাবে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো যায় আমরা সেই আলোচনা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানকার মানুষ সচেতন না। তারা পরীক্ষা করাতে চান না। তবে করোনার ব্যাপক পরীক্ষা দরকার। সাতক্ষীরায় সম্ভব না হলে খুলনা ও যশোরে নমুনা পাঠানোর সুযোগ রয়েছে। মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। যে কারণে সংক্রমণ বাড়ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে আর বেড়ে যাবে। তাদের সচেতন করতে হবে।’
দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শুরুর পরে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সিদ্ধান্তে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল ঘোষণা করা হয়। প্রথম দফায় সংক্রমণ কমে এলে গত বছরের অক্টোবর থেকে আবারও ১৮টি বিভাগের সাধারণ রোগীদের সেবা দেওয়া শুরু হয়। দ্বিতীয় ঢেউয়ে চলতি বছরের মার্চ মাসের শেষের দিকে দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় ৮৭ শয্যার করোনা ইউনিট চালু করা হয়। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেওয়ায় শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে ১২০ করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে ২০০ করার কাজ চলছে।
এ ছাড়া, গত মাসের শেষ সপ্তাহে জেলা সদর হাসপাতালে করোনা চিকিৎসায় আলাদা ইউনিউ চালু করা হয়েছে। ১০০ শয্যার হাসপাতালের ৪০ শয্যা করোনা রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে। চালু করা হয়েছে আট শয্যার নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)।
আজ শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সেখানে ৩৮ জন রোগী চিকিৎসাধীন। তাদের একজন শাহীদুল ইসলাম (৬০)। তার বাড়ি সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার মুরারিকাটি এলাকায়। শাহীদুলের ছেলে হাফিজুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গত বুধবার বাবার শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় হাসপাতালে আসি। ডাক্তার-নার্স এসে খোঁজ নেয়। হাসপাতাল থেকে কিছু ওষুধ দেয়, বাইরে থেকেও কিনতে হয়।’
একই ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন শাহীনা (৩৭)। তার বাড়ি কালীগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে। শাহীনার বাবা দাউদ আলী বলেন, ‘গত মঙ্গলবার থেকে শাহীনা হাসপাতালে। চিকিৎকরা চেষ্টা করছে কিন্তু অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। অন্য কোথাও চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই।’
তবে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসা নিচ্ছেন কালীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা হাফিজুর রহমান। তিনি অভিযোগের সুরে ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ডাক্তার-নার্স আসছেন। কিছু ওষুধ হাসপাতাল দেয়, কিছু বাইরে থেকে কিনতে হয়। কিন্তু পরিবেশ পরিচ্ছন্ন না। দুর্গন্ধ আসে, নোংরা।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. কদুরত-ই-খোদা ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের লোকবল কম। যে কারণে ইচ্ছা থাকার পরও অনেক কিছু করা সম্ভব হয় না। করোনার বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। দুই মাস আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ৫০টি ছোট অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ আরও কিছু সরঞ্জামের চাহিদা জানানো হয়েছে। সেসব এখনো পাওয়া যায়নি। চিকিৎসা সরঞ্জামের পাশাপাশি এখনই কমপক্ষে ১০ জন চিকিৎসক ও ৩০ জন নার্স প্রয়োজন আমাদের।’
Comments