জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করতে হবে

এই বিশ্ব পরিবেশ দিবসে আমি আমার বাংলাদেশ সফরের চিত্র তুলে ধরতে চাই। বাংলাদেশ পরিবেশগত দিক থেকে বিশ্বের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। দুঃখের বিষয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাবের ঝুঁকিতে থাকা বিশ্বের অন্যতম দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি। এখানে বসবাসরত ১৬৩ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ এই ঝুঁকি সম্পর্কে ভালোভাবেই অবগত।

আমি মনে করি, আমি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বাংলাদেশ সফরে এসেছি। আর পাঁচ মাস পরই যুক্তরাজ্য গ্লাসগো শহরে ২৬তম জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন শীর্ষ সম্মেলন কপ২৬ আয়োজন করবে এবং বিশ্বের প্রায় সব দেশকে স্বাগত জানাবে। এই সম্মেলন আমাদের জন্য বিশ্বকে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় সাহায্য করার ও আমাদের সকলের জন্য একটি পরিবেশ বান্ধব, পরিচ্ছন্ন, উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার বিশাল সুযোগ। এবং এই সুযোগটি ভালো কাজে লাগানোর জন্য আমরা সেভাবেই সবাইকে নিয়ে আমাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি।

বিশ্ব ২০১৫ সালে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক প্যারিস চুক্তিতে সই করে। এই চুক্তি অনুসারে আমাদের বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। কেননা, বিজ্ঞান আমাদের বলে যে এই উপায়ে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাব এড়াতে পারবো।

প্রতি ডিগ্রি ও তার ভগ্নাংশের তাপমাত্রার পরিবর্তন সারা বিশ্বের জলবায়ুর ওপর বিশাল প্রভাব ফেলে। বিশ্বব্যাপী গড়ে এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রির পরিবর্তে যদি দুই ডিগ্রি তাপমাত্রার বৃদ্ধি পায় তাহলে এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব কোটি কোটি মানুষ ও গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং পোকা-মাকড়ের অনেক প্রজাতি তাদের আবাসস্থলের বিশাল অংশ হারাবে।

তাপমাত্রা বৃদ্ধি এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্য স্থির করার পরও বিশ্বব্যাপী যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যার ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়েই চলছে। কপ২৬ এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি প্রত্যক্ষভাবে দেখেছি যে হিমবাহ গলে যাচ্ছে, ফসলের বিনষ্ট হচ্ছে, গ্রামবাসীরা তাদের বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

এবার বাংলাদেশের প্রসঙ্গে আসি। আমি জানতে পেরেছি যে গতবছর মে মাসের বিপর্যয় সৃষ্টিকারী ঘূর্ণিঝড় আম্পান কীভাবে একটি সুপার সাইক্লোনে পরিণত হয়। আম্পানের সুপার সাইক্লোনে পরিণত হওয়ার কারণ ছিল সেই সময়ের বঙ্গোপসাগরের সমুদ্রপৃষ্ঠে অন্যান্য বছরের তুলনায় স্বাভাবিক তাপমাত্রার থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি বেড়ে যাওয়া। এছাড়াও, নিচু ব-দ্বীপ এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া, উত্তরাঞ্চলে খরা, সারা দেশের বৃষ্টিপাতের প্যাটার্নে পরিবর্তনের প্রভাব মানুষের নিজ আবাস্থল ছেড়ে জনাকীর্ণ শহরাঞ্চলে চলে আসতে বাধ্য করছে। বাংলাদেশের ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন বায়ুর গতি প্রশমন করে ঝড়ের তীব্রতা থেকে আশেপাশের লোকালয়কে প্রাকৃতিক উপায়ে সুরক্ষা দেয়। দুর্ভাগ্যক্রমে, সুন্দরবনের এই প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষাও শিল্পায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ফলে দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।

আমরা যদি এভাবে চলতে থাকি তাহলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব তীব্রতর হতে থাকবে এবং আগের চেয়ে এই প্রভাব আমাদের ওপর আরও দ্রুত পড়বে।

জলবায়ু অ্যাকশন ট্র্যাকার আমাদের ধারণা দেয়, বিশ্বের দেশগুলো যদি তাদের নিজ নিজ নির্গমন হ্রাস লক্ষ্যমাত্রায় অবিচল থাকে তবুও বিশ্বের গড় তাপমাত্রা দুই দশমিক চার ডিগ্রি বৃদ্ধি পাওয়ার পথে। গত বছরের লক্ষ্যমাত্রার ওপর ভিত্তি করে জলবায়ু অ্যাকশন ট্র্যাকার আমাদের এমনই ধারণা দেয়। এমন অবস্থায় স্পষ্টতই আমাদের আরও বেশি চেষ্টা করতে হবে। আমাদের বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি এক দশমকি পাঁচ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ করতে হবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক নির্গমন অবশ্যই অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হবে।

আগামী ১০ বছরের নির্গমন হ্রাস করতে আমাদের একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও জোরালো ব্যবস্থা নেওয়া বাঞ্ছনীয়। কোভিড-১৯ রিকোভারিকে অর্থনীতিকে ঢেলে সাজানো, একটি উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা, পরিবেশ বান্ধব কর্মসংস্থান সৃষ্টি, পরিচ্ছন্ন বায়ু নিশ্চিত করা, পৃথিবীর ক্ষতি না করে সমৃদ্ধি বাড়ানো সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে হবে।

উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলোই এই বছর গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ২৬-কে এতো গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। এই শীর্ষ সম্মেলনটি এমন জায়গায় হওয়া উচিৎ যেখানে বিশ্বের সব দেশ, সমাজের সব অংশ এই পৃথিবীকে বাঁচাতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার গুরুদায়িত্ব স্বীকার করে নেবে এবং এই লক্ষ্য মাথায় রেখেই আমরা প্রস্তুত হচ্ছি।

কপ২৬ প্রেসিডেন্ট হিসেবে, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী, নীতিনির্ধারক ও ইউকের কূটনৈতিক নেটওয়ার্ককে সঙ্গে নিয়ে আমি বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় ৪টি অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে উদ্যোগ নিতে গুরুত্বারোপ করছি। আমি আনন্দিত যে, এই অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে আমরা কী করতে পারি সেই বিষয়ে আমার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের অন্যান্য মন্ত্রী ও নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে।

প্রথমেই, এই শতকের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে নেট-জিরো লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের অবশ্যই কার্বন নির্গমন হ্রাস করার যথাযথ ব্যবস্থা করতে হবে। সবচেয়ে বেশি দূষণকারী খাতগুলোর জন্য কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। আমরা যদি বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা কমানোকে আসলেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করি তাহলে এই কপ২৬ সম্মেলনের উচিৎ আমাদের কয়লা শক্তি, বন উজাড়, পরিবহণ হতে সৃষ্ট দূষণের থেকে সরে আসতে সাহায্য করবে এমন একটি ভূমিকা পালন করা। এ কারণেই আমরা বিশ্বের বিভিন্ন সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে একত্রে কাজ করছি, যেন কয়লা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক অর্থায়ন বন্ধ করতে পারি। কয়লা সংক্রান্ত অর্থায়ন বন্ধ করাকে আমি ব্যক্তিগতভাবেও অগ্রাধিকার দিচ্ছি। আমরা বাংলাদেশসহ সব দেশকে কয়লা শক্তি পরিহার করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে পরিবেশ বান্ধব জ্বালানি শক্তির প্রতি আগ্রহ ও ব্যবহার বাড়াতে (transition to clean energy) কাজ করছি।

এই ক্ষেত্রে আমরা ইতোমধ্যেই সত্যিকারের অগ্রগতি দেখতে পেয়েছি। আমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জি৭ ক্লাইমেট অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট মিনিস্টারস মিটিং-এ আমরা অঙ্গীকার করেছি যে ২০২১ সালের মধ্যে জি৭ ভুক্ত দেশগুলো কয়লা শক্তি সম্পর্কিত সব নতুন সরকারি সহায়তা বন্ধ করে দিবে। এছাড়াও, ২০৩০ সালের মধ্যে পাওয়ার সিস্টেমের সিংহভাগ কার্বনমুক্ত করতে স্থানীয়ভাবে কয়লার দূষিত ব্যবহার থেকে সরে আসা ব্যবস্থা নিতে এই মিটিং-এ মন্ত্রীরা সম্মত হয়েছেন। আমি আনন্দিত যে বাংলাদেশও তার নিজস্ব পাইপলাইনে থাকা কয়লাভিত্তিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র কমিয়ে আনা এবং শক্তি উৎপাদনের বিকল্প পথের কথা ভাবছে। আমি এই সফরে বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়াতে যুক্তরাজ্যের সহায়তা নিশ্চিত করেছি।

দ্বিতীয়ত, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাব থেকে মানুষ ও প্রকৃতিকে রক্ষা করা। বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা ইতোমধ্যেই জলবায়ু সংকটের সম্মুখীন। এই বাস্তব সংকটকে মাথায় রেখে আমাদের বন্যা প্রতিরক্ষা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মতো প্রকৃত প্রয়োজনীয়তা পূরণে ব্যবস্থা গ্রহণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ফলে হওয়া ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ও এর ঝুঁকি কমাতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের চেয়ার হিসেবে বাংলাদেশের এই ধরণের কাজে বিশেষ করে আশু পূর্বাভাস প্রদান ও দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের উদ্ধার ব্যবস্থার মাধ্যমে জীবন বাঁচানো, খাদ্যের উৎসকে সুরক্ষিত রাখার জন্য জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল ফসল ফলনে অগ্রগতি দেখিয়েছে।

তৃতীয়ত, আমি মনে করি, পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থায়ন ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা প্রায় অসম্ভব। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সাহায্য করার জন্য উন্নত দেশগুলোকে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রদান করার প্রতিশ্রুতি পালন করতে হবে। যুক্তরাজ্য ইতোমধ্যেই প্রতিশ্রুতি রাখার মাধ্যমে নজির সৃষ্টি করছে। ২০২১ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্য ১১ দশমিক ছয় বিলিয়ন পাউন্ড প্রদানে অঙ্গীকারবদ্ধ। বাকি উন্নত দেশগুলোকে এভাবে প্রতিশ্রুতির প্রতি বিশ্বাস বজায় রেখে এগিয়ে আসতে হবে।

এই অর্থায়ন প্রাপ্তি যেন সহজ হয় এবং মানুষ ও প্রকৃতির সুরক্ষায় অবশ্যই ব্যবহৃত হয়। এই অভীষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই বছরের মার্চ মাসের একটি আন্তর্জাতিক বৈঠকে আমি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনসহ বিশ্বের ৫০টি দেশের প্রতিনিধি ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে নিয়ে এসেছিলাম। আমি আনন্দিত যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে একযোগে কাজ করার জন্য সম্মত হয়েছেন।

চতুর্থত, উপরে উল্লেখিত লক্ষ্যগুলো অর্জনে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। গ্লাসগোর কপ২৬ এ আপস-আলোচনা যেন সফল হয় তাই সকল দেশের সরকারের মধ্যে ঐক্যমত্য সৃষ্টি করতে হয়। কপ২৬ এর অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যা গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়াবে। ইতোমধ্যেই আমার সঙ্গে বাংলাদেশের কয়েকজন জলবায়ু বিশেষজ্ঞ, তরুণ জলবায়ু কর্মী এবং প্রাইভেট সেক্টর কোম্পানির আলোচনা হয়েছে। তাদের সবার বক্তব্য হচ্ছে, তারা একটি পরিচ্ছন্ন, শ্যামল ও সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ চান।

আমি সব দেশকে এই চারটি বৈশ্বিক অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি পর্যন্ত সীমিত রাখার শেষ সুযোগ কপ২৬। পরিবেশ বান্ধব কর্মসংস্থান ও পরিচ্ছন্ন বাতাসসহ একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার সর্বোত্তম সুযোগ এই কপ২৬।

এখন আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। কারণ, এরপর আর দ্বিতীয় কোনো সুযোগ পাওয়া যাবে না। চলুন, সবাই মিলে এটি কাজে লাগাই।

 

অলোক শর্মা একজন ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ। বর্তমানে তিনি বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলন কপ২৬ এর প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন। গত ২ ও ৩ জুন তিনি বাংলাদেশ সফর করেন।

(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নেবে না।)

Comments

The Daily Star  | English

Garment exporters prefer cheaper Maldives, bypassing Dhaka, Indian airports

Exporters say the traditional air shipment routes through Dhaka, Kolkata, Colombo or Singapore had either become too expensive or too slow

1h ago