‘শ্বাস নিতে পারছে না বুড়িতিস্তা’

Buritista_Grabbing_5June21.jpg
বেড়া দেওয়ার কারণে বুড়িতিস্তার চেহারা আবার খননের আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। ছবি: স্টার

বছরখানেক আগে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে খনন করা হয়েছিল কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বুড়িতিস্তা নদী। অনেকটা ফিরে এসেছিল এর স্বাভাবিক প্রবাহ। কিন্তু নদীর বুকে প্রভাবশালীদের বসানো শতাধিক বাঁশের বেড়া (স্থানীয়ভাবে বানা নামে পরিচিত) আবার এর প্রবাহকে রুদ্ধ করে দিচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বেড়া বসানো প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নদীতে এলাকার মৎসজীবীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষদেরও মাছ ধরতে বাধা দিচ্ছেন। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের অবহিত করা হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।

বুড়িতিস্তার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে নারিকেলবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ইসলাম হোসেনের পর্যবেক্ষণ হলো, বেড়া দেওয়ার কারণে বুড়িতিস্তার চেহারা আবার খননের আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। এভাবে বেড়া দিয়ে আসলে নদীটার ‘গলা চেপে’ ধরা হয়েছে। তাই বুড়িতিস্তা এখন ‘শ্বাস’ নিতে পারছে না।

তিস্তা নদীর একটি শাখা হচ্ছে বুড়িতিস্তা। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০ কিলোমিটার। নদীটি উলিপুর উপজেলার থেতরাই ও দলদলিয়া ইউনিয়নের অর্জুন এলাকা দিয়ে প্রবেশ করে চিলমারী উপজেলার কাচকোল এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিলিত হয়েছে।

স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, এক সময় বুড়িতিস্তা নদী ঘিরে এ অঞ্চলে ব্যবসা–বাণিজ্যে প্রসার ঘটে। এর দুই পাড়ের জমি ছিল উর্বর। প্রচুর ফসল আবাদ হতো। নদীর পারের মানুষ মাছ শিকার ও নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

তবে ১৯৮৮ সালে বন্যায় তিস্তা নদীতে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়। এতে থেতরাই ইউনিয়নের গোড়াই পিয়ার গ্রামে স্লুইসগেটটি ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। সে সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড অপরিকল্পিতভাবে বুড়িতিস্তার উৎসমুখে বাঁধ নির্মাণ করায় নদীর পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। কৃষিতে দেখা দেয় বিপর্যয়। ক্রমে বুড়িতিস্তা পরিণত হয় একটা মরা খালে। দখল হয়ে যায় অনেক জায়গা।

বছরখানেক আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড খনন কার্যক্রমের মাধ্যমে বুড়িতিস্তার প্রবাহ আবার অনেকটা ফিরিয়ে আনে। উলিপুর উপজেলার কাজীরচক গ্রামের কৃষক আব্দুল আলী অভিযোগ করে বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় বাঁশের বানা (বেড়া) দেওয়ার কারণে বুড়িতিস্তার প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যারা নদীতে বানা দিয়েছে তারা স্থানীয় লোকজন। জেলেদের নদীতে মাছ ধরতে দিচ্ছে না। প্রভাবশালী হওয়ার কারণে গ্রামের কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথার বলার সাহস পায় না।’

শরতপাড়া গ্রামের আব্দুল হাকীমের অভিযোগ, বুড়িতিস্তায় বেড়া দেওয়ার খবর স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা জানেন। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।

আব্দুল হাকিম আরও বলেন, এই নদীতে মাছ ধরেই অনেকে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু তা বন্ধ করে দেওয়ার কারণে অনেকের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে।

কথা হয় নদীতে বেড়া দেওয়া এক ব্যক্তি আলম হোসেনের সঙ্গে। যিনি এলাকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। বুড়িতিস্তায় বেড়া দেওয়ার বিষয়ে তার ব্যাখ্যা, ‘উজানে অনেকে বুড়িতিস্তার বুকে বাঁশের বানা দিয়েছেন। তাই আমিও দিয়েছি। উজান থেকে বানা সরানো হলে আমিও সরিয়ে নেব।’

তিনি জানান, খননের আগে বুড়িতিস্তা নদীতে আবাদ করে ফসল ফলাতেন তারা।

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘১২ কোটি টাকা ব্যয়ে বুড়িতিস্তা খনন করা হয়েছে এর স্বাভাবিক প্রবাহ ধরে রাখার জন্য। আর যেহেতু এটা একটা নদী, তাই সবার জন্য তা উন্মুক্ত। যদি কেউ নদীতে বাঁশের বেড়া দিয়ে এর পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে তাহলে তা অবৈধ ও আইন বিরুদ্ধ।’

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূর-এ-জান্নাত রুমী জানান, বিষয়টি তার জানা ছিল না।

উপজেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বুড়িতিস্তা থেকে সব বেড়া সরিয়ে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখা হবে। নদীটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। দখলকারীদের সরাতে প্রয়োজনে আইন প্রয়োগ করা হবে।’

Comments

The Daily Star  | English

500 killed as 6.0 magnitude earthquake hits Afghanistan

Taliban-led health authorities in Kabul, however, said they were still confirming the official toll figure as they worked to reach remote areas.

5h ago