রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিতে মিয়ানমারের ছায়া সরকারের প্রতিশ্রুতি

rohingya influx
মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে। রয়টার্স ফাইল ছবি

রোহিঙ্গাসহ মিয়ানমারের সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীগুলোকে নাগরিকত্ব প্রদান ও তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে নতুন সংবিধানের খসড়া প্রণয়নের ঘোষণা দিয়েছে দেশটির ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) বা জাতীয় ঐক্য সরকার।

একই সঙ্গে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে থাকা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে ১৯৮২ সালের বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন ও জাতীয় পরিচয়পত্রের (ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড) ধারা বাতিলের প্রতিশ্রুতি এসেছে সামরিক জান্তাকে হটাতে গঠন করা এই ছায়া সরকারের কাছ থেকে।

গত বৃহস্পতিবার এনইউজি’র এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই বসন্ত বিপ্লবে সামরিক একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যোগ দেওয়ার জন্য আমাদের পাশাপাশি অন্যদের সঙ্গে হাত মেলাতে আমরা রোহিঙ্গাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’

এপ্রিলের শুরুতে এক সামরিক অভ্যুত্থানে উৎখাত হওয়া ন্যাশনাল লিগ অব ডেমোক্রেসির (এনএলডি) পার্লামেন্ট সদস্যদের উদ্যোগে মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী এই ছায়া সরকার গঠন করা হয়। এর দুই মাস আগে নভেম্বরের নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটির ক্ষমতা দখল করে নেয়। অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন দল এনএলডি ওই নির্বাচনে জিতে সরকার গঠনের পথে ছিল।

সেনাবাহিনী ক্ষমতা নেওয়ার পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে দেশজুড়ে চলা জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে এ পর্যন্ত আট শর বেশি নাগরিক নিহত হয়েছেন।

জান্তাবিরোধী জাতীয় ঐক্য সরকার এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি চাচ্ছে। একই সঙ্গে তারা স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়তে থাকা বিভিন্ন সংখ্যালঘু বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকেও স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে।

এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এনইউজি রোহিঙ্গাদের সমানাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। শত বছর ধরে মিয়ানমারে বসবাস করে আসলেও ১৯৭০ সাল থেকে যে জাতিগোষ্ঠীকে নাগরিকত্ব ও স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। বঞ্চিত করা হয়েছে বিভিন্ন মৌলিক অধিকার থেকে।

এ অবস্থায় নিপীড়নের মুখে রোহিঙ্গারা বিভিন্ন সময়ে আশপাশের বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আসে। ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে তাদের ওপর নৃশংস অত্যাচার শুরু হলে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিজে)  মিয়ানমারের বিরুদ্ধে একটি গণহত্যার মামলা চলমান আছে। আর রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টিও সম্ভব হচ্ছে না।

এমন পরিস্থিতিতে টুইটারে দেওয়া এক বিবৃতিতে জাতীয় ঐক্য সরকারের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী সাসা বলেন, মানবাধিকার ও মানবিক মর্যাদাকে সম্মান জানানোর পাশাপাশি মিয়ানমারে বিরোধ কমিয়ে আনার জন্য ঐক্য সরকার একটি সমৃদ্ধ ফেডারেল ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন গঠনের ব্যাপারে মনস্থির করেছে। যেন মিয়ানমারে সবগেুলো সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী শান্তিতে বসবাস করতে পারে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘জাতি-বর্ণ  নির্বিশেষে মিয়ানমারের যেসব বাসিন্দা এই ইউনিয়নে আনুগত্যের শপথ নেবে তারা সব ধরনের নাগরিক অধিকার ভোগ করবেন। জাতীয় ঐক্য সরকার কোনো ধরনের বৈষম্য বরদাশত করবে না।’

ঐক্য সরকার একই সঙ্গে সংবিধানের খসড়া তৈরির প্রক্রিয়ায় অংশ হওয়ার জন্য মিয়ানমারের সব নাগরিককে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। বলা হচ্ছে, ১৯৮২ সালের যে  আইনের কারণে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব পাওয়ার বিষয়টি উপেক্ষিত হচ্ছে তা রদ করা হবে।  নতুন আইনে মিয়ানমারে জন্মসূত্রে কিংবা বিশ্বের যে কোনো জায়গায় জন্ম নেওয়া মিয়ানমারের নাগরিকদের শিশুর জন্য নাগরিকত্ব নিশ্চিত করা হবে।

পাশাপাশি রোহিঙ্গাসহ দেশটির সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর জন্য সেনাবাহিনী কর্তৃক জোর করে চাপিয়ে দেওয়া জাতীয় পরিচয়পত্র বা ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড ইস্যু করার প্রক্রিয়া বাতিলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জাতীয় ঐক্য সরকার।

সেই সঙ্গে এই ছায়া সরকার বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে মিয়ানমারে ফিরিয়ে আনার কথা বলছে। এ বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব একটি বিশেষ কর্মসূচি নেওয়ার কথাও জানিয়েছে তারা।

এ ছাড়া এনইউজি রোহিঙ্গাদের জন্য সুবিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি সেনাবাহিনীকে বিচারের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।  

এনইউজির বিবৃতি প্রসঙ্গে ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নে সান লি জানান, তারা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদান, ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন রদ, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড প্রদান প্রক্রিয়া বাতিল ও রোহিঙ্গাদের প্রতি সুবিচার প্রসঙ্গে।

লি জার্মানি থেকে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘যদিও রোহিঙ্গাদের সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি এখানে স্পষ্ট না।’ নতুন সংবিধানের খসড়ায় বিষয়টি পরিষ্কার করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

লি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে মিয়ানমারের বেশিরভাগ লোকের মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে। এটা একটা উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। আমাদের সবার একই উদ্দেশ্য। সেটা হচ্ছে সামরিক জান্তাকে উৎখাত করা।’

যুক্তরাজ্যে বার্মা রোহিঙ্গা সংগঠনের সভাপতি তু কি’র অভিমত, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এটা একটা দারুন উদ্যোগ। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি মিয়ানমার ঐক্য সরকারের একটা অন্তর্ভূক্তিমূলক প্রক্রিয়ায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু এখানে সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীগুলোর অধিকারের ব্যাপারে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করা প্রয়োজন।’

তু কি’র ভাষ্য, মিয়ানমারের আদিবাসী হিসেবে এখানকার অন্য জাতিগোষ্ঠীগুলোর মতো রোহিঙ্গাদেরও সমানাধিকার নিশ্চিত করা দরকার। সম্ভাব্য প্রত্যাবাসনের জন্য যা খুবই জরুরি।

প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ

Comments

The Daily Star  | English

Early US intel assessment suggests strikes on Iran did not destroy nuclear sites: CNN

Israeli Prime Minister Benjamin Netanyahu said Israel had agreed to Trump's ceasefire proposal

2d ago