ভাসানচর থেকে ১৫ দিনে পালিয়েছে ১৬ রোহিঙ্গা, আটক ১৪
নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচর থেকে রোহিঙ্গাদের টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন স্থানে পাচার করতে দালাল চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। দালালের মাধ্যমে গত মে মাসে ১৫ দিনে ১৬ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ভাসানচর থেকে পালিয়েছে। তার মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে ১৪ জন। দালাল চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে নোয়াখালীতে একজন এবং চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে দালাল চক্রের তিন জনকে আটক করা হয়েছে।
গত ৮ মে থেকে ২৩ মে এর মধ্যে ওই ১৬ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরের ক্যাম্প থেকে পালিয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ভাসান চরে দায়িত্বরত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের তত্ত্বাবধানে ২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর প্রথম দফায় ১৬৪২ জন রোহিঙ্গাকে কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়। এরপর একই বছরের ২৯ ডিসেম্বর ১৮০৪ জন, চলতি বছর ২৯-৩০ জানুয়ারি ২৪২১ জন এবং ১৩ ফেব্রুয়ারি ৩৬০০ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়। আরও দুই ধাপে স্থানান্তরের পর ভাসানচরে বর্তমানে রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৮,৩৪৭ জন।
ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভাসান চরে একটি স্বতন্ত্র থানার উদ্বোধন করে। ওই থানায় একজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নেতৃত্বে ৪১ জন পুলিশ সদস্য ও ২৪৭ জন এপিবিএন সদস্য কর্মরত আছেন। পাশাপাশি নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছে।
আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এতো সব সদস্যের চোখ ফাঁকি দিয়ে গত মাসে ১৬ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ভাসানচর থেকে পালিয়ে যায়। গত ১৯ মে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পালানো দুই কিশোরীকে স্থানীয় লোকজন আটক করে স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে চর জব্বার থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। পালিয়ে যাওয়া বাকি দুই নারীকে অবশ্য আটক করা যায়নি।
মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ জানান, দালাল চক্রের তিন সদস্য ৪ লাখ টাকার বিনিময়ে ভাসান চরের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ওই চার নারীকে সুবর্ণচর নিয়ে আসে। তাদের অন্যত্র পাচার করার জন্য এখানে নিয়ে আসা হয়েছিল এমন দাবি এই জনপ্রতিনিধির।
এ ঘটনার বিষয়ে চর জব্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউল হক বলেন, এই পাচারের ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে গত ৩১ মে সূবর্ণচরের মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের মো. সোহাগ (৩০) নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে তাকে গত ১ জুন কারাগারে পাঠানো হয়।
অপর দিকে গত ৮ মে নোয়াখালীর এক দালালের মাধ্যমে ১৫ হাজার টাকা চুক্তিতে ভাসানচর থেকে ট্রলারে করে পালিয়ে যান এনায়েত উল্লা ও কেফায়েত উল্লা নামে দুই রোহিঙ্গা। গত ২৯ মে তারা কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার মধুরছড়া এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাদের পরিবার থেকে পালানো আরও ৮ জনকে আটক করা হয়।
এর আগে গত ২৩ মে ভাসান চর থেকে দুই বোন দালালের মাধ্যমে পালিয়ে গেলেও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের আটক করে ভাসানচরে ফিরিয়ে আনেন।
এ ব্যাপারে নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ভাসানচরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির আধুনিক বাসস্থান ও সুযোগ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও তারা দালালের মাধ্যমে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। যেসব দালাল এ কাজে নিয়োজিত তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে।
রোহিঙ্গারা বাজার করতে যাওয়াসহ বিভিন্নভাবে পালিয়ে যাচ্ছে। পালিয়ে যাওয়া রোধে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রোহিঙ্গাদের প্রতি নজরদারী বাড়িয়েছে - এমনটি জানালেন পুলিশ কর্মকর্তা মো. আলমগীর।
কক্সবাজারস্থ অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিশনার (এডিশনাল আরআরআরসি) সামসুদ্দৌজা নয়ন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ভাসানচর থেকে পালিয়ে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলে আসা প্রত্যেক রোহিঙ্গাকে চিহ্নিত করে কুতুপালং অস্হায়ী ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। তাদের ভাসানচরে ফেরত পাঠানো হবে।
আরও পড়ুন-
দালালরা মালয়েশিয়ার কথা বলে সাগর ঘুরিয়ে মিরসরাই নামিয়ে দিল রোহিঙ্গাদের
Comments