দায়মুক্ত সেই ইউএনও দায় ইউপি সদস্যের

নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলায় ‘৩৩৩’ নম্বরে কল দিয়ে খাদ্য সহায়তা না পেয়ে উল্টো জরিমানা দেওয়ার ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনে কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান আইয়ুব আলীর দেওয়া ভুল তথ্যে এ ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে, ইউএনও'র বিষয়ে কোন কিছু উল্লেখ না করে কর্মকর্তাদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
ফরিদ আহম্মেদ খান (বামে) এবং তার সঙ্গে কথা বলছেন ইউএনও আরিফা জহুরা (ডানে)। ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলায় ‘৩৩৩’ নম্বরে কল দিয়ে খাদ্য সহায়তা না পেয়ে উল্টো জরিমানা দেওয়ার ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনে কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান আইয়ুব আলীর দেওয়া ভুল তথ্যে এ ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে, ইউএনও'র বিষয়ে কোন কিছু উল্লেখ না করে কর্মকর্তাদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

আজ শনিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোস্তাইন বিল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে এ সব কথা বলেন।

তিনি বলেন, 'কমিটি সময় বাড়িয়ে নেওয়ার পর আগামী রোববার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ ছিল। কিন্তু, তার আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামীম ব্যাপারী পাঁচ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দেন।'

তিনি জানান, প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে ‘সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারের (কাশিপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড মেম্বার আইয়ুব আলী) দেওয়া ভুল তথ্যের জন্য এ ঘটনা ঘটেছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেটা শাস্তিমূলক না অন্য কি হবে এটা কর্তৃপক্ষ মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করবে।’

প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে, ‘এরপর ৩৩৩ ফোন দিয়ে কোন ব্যক্তি সাহায্য চাইলে যদি সেই ব্যক্তির প্রতি সন্দেহ হয়, সেক্ষেত্রে একজন মাত্র জনপ্রতিনিধির তথ্যের ওপর নির্ভর না করে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, মসজিদের ইমাম ও প্রয়োজনে সাংবাদিকদের কাছ থেকে তথ্য নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া কর্মকর্তাদের (ইউএনও ও অন্যান্য কর্মকর্তা) আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য বলা হয়েছে।’

প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামীম ব্যাপারীকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

উল্লেখ্য, রেডিওতে শুনতে পেয়ে ১৮ মে ‘৩৩৩’ এ কল দিয়ে খাদ্য সহায়তা চান সদর উপজেলার পশ্চিম দেওভোগ এলাকার মৃত সুরুজ্জামান খানের ছেলে  ফরিদ আহম্মেদ খান। দুই দিন পর সরেজমিনে বাড়ির সামনে আসেন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফা জহুরা। এ সময়, ইউএনও জানতে পারেন ফরিদ আহম্মেদ খান চার তলা বাড়ির মালিক এবং হোসিয়ারী কারখানা আছে। এজন্য, তাকে সহায়তা না দিয়ে উল্টো অসহায় ১০০ জনকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্যথায় তিন মাসের কারাদণ্ড।

ভুক্তভোগী ফরিদ আহম্মেদ খান শহরের নয়ামাটি এলাকার ‘আবুল গার্মেন্টস’ নামে হোসিয়ারী কারখানার শ্রমিক। সেখানে মাসে ছয় হাজার ও অন্যান্য দোকানে কাজ করে আরও চার হাজার টাকা বেতন পান। চার তলা বাড়ির মালিক বলা হলেও আসলে ওই বাড়ির মাত্র দুটি রুমের মালিক তিনি। ওই বাড়ির মালিক তারা ছয় ভাই ও এক বোন।

ওই শাস্তির পরিপ্রেক্ষিতে ২২ মে বিকেলে ১০০ জনকে খাদ্য সামগ্রী দিতে বাধ্য হন ফরিদ আহম্মেদ খান। আর এ খাদ্য সহায়তার টাকা সংগ্রহ করতে বন্ধক রাখেন মেয়ের গলার স্বর্ণের চেইন। এছাড়া কিছু টাকা ধারও করেন। পরে এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

জেলা প্রশাসক ইউএনওকে ত্রাণ তহবিল থেকে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে এ বিষয়ে খতিয়ে দেখতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শামীম বেপারীকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিকে বুধবারের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

ফরিদ আহম্মেদ খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এলাকার একজন ব্যবসায়ী ৬০ হাজার টাকা দিয়েছেন। উনি কেন দিয়েছেন সেটা বলতে পারি না।’

শাহিনুর আলম নামের ওই ব্যবসায়ীর কাছে জানতে চাইলে তিনি  দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসায় দান করি। পত্রিকায় ফরিদের বিষয়ে জানতে পেরে খোঁজ-খবর নিই। তিনি আসলেই অসহায় তাই সহযোগিতা হিসেবে ৬০ হাজার টাকা দিয়েছি। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা করেছি। ইউএনও কিংবা প্রশাসনের কেউ আমাকে কিছু বলেনি।’

কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ড মেম্বার ও প্যানেল চেয়ারম্যান আইয়ুব আলীর মোবাইলে একাধিকবার কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন:

সহায়তা পেলেন না, অপমান অসম্মানে ঘরবন্দী ফরিদ আহম্মেদ

সংবেদনশীলতার এতটা ঘাটতি কেন

মধ্যবিত্তের যে গল্প আপনি জানেন না

‘ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবারই তো সামাজিক সম্মান আছে’

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

2h ago