এভিয়েশন ও পর্যটন খাত পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা নেই বাজেটে

করোনা মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম উড়োজাহাজ চলাচল (এভিয়েশন) ও পর্যটন খাত। করোনা পরিস্থিতিতে অনেক এয়ারলাইনস দেউলিয়া হয়ে গেছে। তাদের শত শত উড়োজাহাজ আগাম অবসরে পাঠানো হয়েছে। আবার অনেকগুলো দীর্ঘ সময় ধরে হ্যাঙ্গারে পরে আছে।

করোনা মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম উড়োজাহাজ চলাচল (এভিয়েশন) ও পর্যটন খাত। করোনা পরিস্থিতিতে অনেক এয়ারলাইনস দেউলিয়া হয়ে গেছে। তাদের শত শত উড়োজাহাজ আগাম অবসরে পাঠানো হয়েছে। আবার অনেকগুলো দীর্ঘ সময় ধরে হ্যাঙ্গারে পরে আছে।

ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে একের পর এক ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। এতকিছুর মধ্যেও কিছু ফ্লাইট কোনোমতে চলেছে। পূর্ণ সক্ষমতা নিয়ে এর মধ্যে বাংলাদেশের কোনো এয়ারলাইনস তাদের ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারেনি।

যাদেরকে ব্যবসার কাজে ভ্রমণ করতে হতো, তারা জুমকে বিকল্প হিসেবে বেছে নিয়েছেন। সবকিছু আবার আগের মতো স্বাভাবিক হবে এক সময়— সেই প্রত্যাশা নিয়ে ছুটিতে ভ্রমণের পরিকল্পনাও স্থগিত রেখেছে মানুষ। ফলে সমুদ্র সৈকতগুলোতে আর পর্যটকদের আনাগোনা নেই।

পর্যটনের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল ব্যবসার ওপর আঘাত পড়েছে যথেষ্ট। সারাবিশ্বে এ খাতের হাজারো মানুষকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে।

কিন্তু, দেশের ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে আকাশ পরিবহন ও পর্যটন খাতকে সংকট থেকে বের করে আনার জন্য কিছু পাওয়া যায়নি। এমনকি, এ খাতের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সরকারের কোনো পরিকল্পনার ইঙ্গিতও নেই বাজেটে।

আকাশ পরিবহন ও পর্যটন খাতের নেতারা বলছেন, অর্থমন্ত্রীকে এ খাতটিকে উপক্ষো করতে দেখে তারা খুবই হতাশ হয়েছেন।

প্রস্তাবিত বাজটে এ খাতে এবার তিন হাজার ৪২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা আগের বাজেটের চেয়ে ৩৬৪ কোটি টাকা বেশি। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প বিকাশের কথা বলেছেন। একটি বিশ্বমানের আকাশ পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলেছেন। দেশের বিমানবন্দরগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর কথাও উল্লেখ করেছেন।

কিন্তু, খাতটিকে আর্থিক সংকট থেকে বের করে আনার বিষয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি তিনি।

এভিয়েশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মহামারি আঘাত হানার পর থেকে বিমান বাংলাদেশের এক হাজার ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ইউএস বাংলা ও নভোএয়ার এয়ারলাইনসের ক্ষতি হয়েছে কয়েক শ কোটি টাকার।

বিশেষ করে, বিমানের জন্য এ মহামারি মহাবিপর্যয় ডেকে এনেছে।

বিমানের বহরে থাকা ২১টি এয়ারক্রাফটের মধ্যে বোয়িং ৭৮৭ ও ড্যাশ-৮ সহ অনেকগুলোই বেশ নতুন। কিন্তু, কেনার পর থেকে ওড়ার চেয়ে এগুলোকে বসে থাকতে হচ্ছে বেশি। মহামারির আগে দেশের ১৯টি স্থানে ফ্লাইট পরিচালনা করত বিমান। এখন মাত্র আটটি গন্তব্যে যায় বিমান।

মহামারির কারণে পর্যটন খাতকে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার লোকসান গুনতে হয়েছে। এ শিল্পে জড়িত আছেন প্রায় ৪০ লাখ মানুষ।

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সদস্যদের তথ্যমতে, গত বছর এককভাবে শুধু তাদেরই পাঁচ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। পরিস্থিতি না পাল্টালে চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষে তাদের ছয় হাজার ৮০০ কোটি টাকা ক্ষতি হতে পারে।

এভিয়েশন অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এওএবি) সরকারকে অভ্যন্তরীণ রুটে জেট জ্বালানির ওপর ভ্যাট ও কর মওকুফ করার আহ্বান জানিয়েছিল। এ ছাড়া, অ্যারোনটিক্যাল ও নন-অ্যারোনটিক্যাল চার্জে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার এবং করপোরেট কর হার ৩২ দশমিক পাঁচ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২২ দশমিক পাঁচ শতাংশ করারও দাবি ছিল তাদের।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের মুখপাত্র কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এ বাজেট দেখে বিস্মিত হয়েছি। আকাশ পরিবহন ও পর্যটন খাতের জন্য এ বাজেটে আসলে কিছুই নেই। মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এ দুটি শিল্পকে কীভাবে বাঁচানো যায়— সে বিষয়ে কিছুই নেই।’

টোয়াব প্রণোদনা প্যাকেজের দাবি জানালেও সরকার তাতে কান দেয়নি।

অর্থমন্ত্রী বলেছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যটনকে অব্যাহত রাখতে একটি আদর্শ পরিচালনা পদ্ধতি তৈরি করেছে সরকার। তবে টোয়াব নেতারা বলছেন, এটি কীভাবে ও কখন কার্যকর হবে, সে বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেননি মন্ত্রী।

মহামারির মধ্যে বার্ষিক ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন ফি মওকুফেরও আবেদন জানিয়েছিল টোয়াব। এ অনুরোধটিও বাজেটে উপেক্ষা করা হয়েছে।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে টোয়াবের সভাপতি রাফিউজ্জামান বলেন, ‘সরকার পর্যটন শিল্পে যথেষ্ট মনোযোগ দেয়নি। পর্যটন খাত ধ্বংসের মুখোমুখি। সরকারের সহায়তা ছাড়া এটি টিকবে না। কিন্তু, বাজেটে আমরা এ বিষয়ে কিছুই দেখতে পাইনি।’

টোয়াব নেতারা জানান, পর্যটন এখন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম শিল্প। ২০১৯ সালের জিডিপিতে পর্যটন চার দশমিক সাত শতাংশ যোগ করেছিল, টাকার অঙ্কে ছিল ছয় হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

6h ago