‘কোলা’য় থেকেও রক্ষা পাচ্ছে না মা মাছ

শুষ্ক মৌসুমে ব্রহ্মপুত্রের বুকে জেগে ওঠা চরগুলোর কিছু কিছু জায়গায় পানির অস্তিত্ব থাকে। স্থানীয়ভাবে যে জলাধারগুলো পরিচিত কোল বা কোলা নামে। পানির অভাবে রুক্ষ নদের বুকে এসব কোলায় বিভিন্ন প্রজাতির মা মাছেরাও আশ্রয় নেয়। পরে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বর্ষার পানি নামলে কোলা থেকে বেরিয়ে ডিম ছাড়ে।
Lalmonirhat_Fish_6June21.jpg
শুষ্ক মৌসুমে ব্রহ্মপুত্রের বুকে জেগে ওঠা চরগুলোর কিছু কিছু জায়গায় পানির অস্তিত্ব থাকে। যেগুলো কোল বা কোলা নামে পরিচিত। এসব কোলায় বিভিন্ন প্রজাতির মা মাছ আশ্রয় নেয়। ছবি: স্টার

শুষ্ক মৌসুমে ব্রহ্মপুত্রের বুকে জেগে ওঠা চরগুলোর কিছু কিছু জায়গায় পানির অস্তিত্ব থাকে। স্থানীয়ভাবে যে জলাধারগুলো পরিচিত কোল বা কোলা নামে। পানির অভাবে রুক্ষ নদের বুকে এসব কোলায় বিভিন্ন প্রজাতির মা মাছেরাও আশ্রয় নেয়। পরে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বর্ষার পানি নামলে কোলা থেকে বেরিয়ে ডিম ছাড়ে।

কুড়িগ্রামের নয়টি উপজেলার মধ্যে ভুরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী, কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর, চিলমারী, রাজীবপুর ও রৌমারীর মধ্য দিয়ে বয়ে চলা ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে এমন কয়েক শ কোলা আছে।

তবে লোভের বশবর্তী হয়ে এসব কোলা থেকে স্থানীয় লোকজন ও জেলেরা অবাধে মা ও ডিমওয়ালা মাছ শিকার করছেন। ফলে ব্রহ্মপুত্র নদে মাছের বংশবৃদ্ধি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

কুড়িগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা, অভিজ্ঞ মৎসজীবী ও জেলার মৎস কর্মকর্তারা বলছেন, কোলায় আশ্রয় নেওয়া মা ও ডিমওয়ালা মাছ রক্ষা করে প্রতি বছর মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিত করতে পারলে ব্রহ্মপুত্রে কখনো মাছের অভাব হবে না।

চিলমারী উপজেলার চর শাখাহাতির কৃষক বদিয়ার রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘নদের বুকে একেকটি কোলা থেকে বিপুল পরিমাণে মাছ পাওয়া যায়। কিন্তু অনেকের লোভের কারণে মা মাছগুলো রক্ষা পায় না।’

রাজীবপুর উপজেলার চর কোদালকাটির কৃষক মনসুর উদ্দিনের ভাষ্য, কোলায় থাকা মা ও ডিমওয়ালা মাছগুলো বাঁচিয়ে রাখতে পারলে ব্রহ্মপুত্রে মাছের আশানুরুপ প্রজনন নিশ্চিত করা সম্ভব।

চিলমারীর মৎসজীবী সুবল চন্দ্র দাস জানালেন, তিনি কখনো কোলায় থাকা মা মাছ শিকার করেন না। কারণ তিনি এটা জানেন যে, কোলায় থেকে মা মাছগুলো ডিম ছাড়ার জন্য তৈরি হয়।

সুবল চন্দ্রের অভিযোগ, এ ব্যাপারে মৎস বিভাগের কোনো নজরদারি কিংবা সচেতনতামূলক কার্যক্রম নেই। তাই অনেকে ভুলবশত মা মাছ শিকার করে থাকেন।

চিলমারীর স্কুলশিক্ষক নাহিদ হাসানের অভিমত, কোলা থেকে মা মাছ শিকার বন্ধ করতে পারলে ব্রহ্মপুত্র নদে মাছের কোন সংকট থাকবে না। তাই মা মাছ শিকার বন্ধ করতে মৎস বিভাগকে প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি প্রয়োজনে আইন প্রয়োগ করার পরামর্শ দেন তিনি।

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালীপদ রায় জানান, জনবল সংকটের কারণে কোলাগুলো নিয়মিত নজরদারির আওতায় রাখা সম্ভব হয় না। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তারা অভিযান চালান।

মৎস বিভাগের এই কর্মকর্তাও বলছেন, কোলাগুলোতে থাকা মা মাছ রক্ষা করা গেলে ব্রহ্মপুত্র থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ মাছ আহরণ করা সম্ভব।

এ ব্যাপারে বিভাগের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে কালীপদ রায় ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রয়োজনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য নেওয়া হবে।’

Comments

The Daily Star  | English
Indian Padma Vibhushan industrialist Ratan Tata dies at 86

Ratan Tata passes away

India’s top industrialist and Tata Sons Chairman Emeritus Ratan Tata died in a hospital in Mumbai last night, the company said.

7h ago